Coochbehar Rasmela

রাসমেলার সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ হকারদের

জেলা

সীমাহীন নির্মমতার চূড়ান্ত নিদর্শনের সাক্ষী রইলো কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা। কোচবিহার পৌরসভা এবং পুলিশ প্রশাসনের অবিবেচনা প্রসূত কার্যকলাপে অসহায় ফুটপাতে হকারদের চোখের জলে ভিজলো ঐতিহ্যের রাসমেলার মাটি। চিরাচরিত ভাবেই শতাব্দী প্রাচীন এই রাসমেলার অভ্যন্তরে ফুটপাতের ওপর, রাস্তার মাঝে সারিবদ্ধ ভাবে খেলনা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসার নিয়ে বসেন স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা ক্ষুদ্র হকাররা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে শনিবারই পৌরসভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফরমান জারি করা হয়, রাসমেলার রাস্তার ওপর কোনো রকম ব্যবসা করতে পারবেন না তারা। এই ফরমানের পর বিমর্ষ হয়ে পড়েন এই হকাররা। রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ রীতিমতো মেলার অভ্যন্তরে জেনকিন্স স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় ওপর পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল হন তারা। 
আন্দোলনকারী বলেন, তাদের মতো অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রচুর টাকা ঋণ করে ব্যবসার সামগ্রী কিনে এই মেলায় এসেছেন লাভের মুখ দেখার আশায়। কিন্তু তাদেরকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেননি তারা। এই ব্যবসায়ীরা এদিন বলেন, রাসমেলায় তাদের ব্যবসা করতে দেওয়া না হলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের। সীমাহীন সংকটের মুখে পড়তে হবে। তাদের বক্তব্য মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৩০টাকা করে কর আদায় করছে কোচবিহার পৌরসভা। এরপরেও তাদেরকে ব্যবসা করতে না দেওয়ার ফরমান জারি করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। তাদেরকে পুনরায় ব্যবসা করার অনুমতি না দিলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না ফুটপাত ব্যবসায়ীদের বলে জানান তারা।
 বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ চলার পর প্রশাসনিক আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন এই ব্যবসায়ীরা। তবে আদৌ তারা রাসমেলায় ব্যবসা করতে পারবেন কিনা? তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
  তবে এই প্রসঙ্গে কোচবিহার পৌরসভার পৌরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের স্পষ্ট বক্তব্য, মেলার অভ্যন্তরে রাস্তার মাঝ বরাবর এই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালু রাখলে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও মেলার অভ্যন্তরে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে, দমকল কিংবা অ্যাম্বুলেন্স এই মেলার অভ্যন্তরে ঢুকতে গেলে সীমাহীন সমস্যায় পড়বে। একারণেই তাদেরকে রাস্তার ওপর বসতে নিষেধ করেছে প্রশাসন। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে কোন ফাঁকা জায়গা থাকলে, সেখানে বসুন তারা।
  কোচবিহার নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চের সম্পাদক মহানন্দ সাহা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এদিন বলেন, আসলে তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পৌরসভা এই মেলাকে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে, এখানে জেলার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে। আর বাইরের বড় ব্যবসায়ী সহ বাংলাদেশ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অথচ কোচবিহার জেলার গরিব প্রান্তিক এলাকার মানুষ যারা এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে যুক্ত, তাদের স্বার্থকে পুরোপুরি ভাবে জলাঞ্জলি দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত কোচবিহার পৌরসভা সহ প্রশাসন। রাসমেলার জন্মলগ্ন থেকেই এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এভাবেই ব্যবসা করে আসছেন রাসমেলাতে। আর কোচবিহার পৌরসভা এই ঐতিহ্যকে মুছে দিতে চাইছে। এটা কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এই গরিব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে প্রতিবছরের মতো এবারও রাসমেলায় ব্যবসা করতে পারেন, তা বিবেচনা করুক কোচবিহার পৌরসভা ও প্রশাসন বলে এদিন দাবি জানান তিনি।
 

Comments :0

Login to leave a comment