ম্যাচ সবে শুরু হয়েছে। সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ। এই সময় পেনাল্টি থেকে এগিয়ে যাওয়া মানে আল-নাসের টিম ম্যানেজমেন্টের রক্তচাপ অনেকটাই প্রশমিত হওয়া।
কিন্তু মাঠে দেখা গেল এমন এক দৃশ্য, যা সাম্প্রতিক সময়ে চট করে চোখে পড়ে না। দেখা গেল, হলুদ জার্সিধারী ক্রিশ্চিয়ানো নিজে এগিয়ে চলেছেন রেফারির দিকে। ইতিমধ্যেই রেফারিকে ঘিরে ধরেছেন পার্সিপোলিসের লাল-সাদা জার্সিধারীরা। বাতিল করতে হবে পেনাল্টি, কারণ ট্যাকেল হলেও কোনও অবৈধ ট্যাকেল হয়নি।
রোনাল্ডো নিজে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে গেলেন রেফারির দিকে। এক প্রকার জোর করে ঢুকে পড়লেন পার্সিপোলিসের জটলা ভেদ করে। সমানে হাত নেড়ে চলেছেন সিআর-৭। তিনি সটান রেফারিকে বললেন ইশারায়, ‘‘এটা পেনাল্টি নয়। হতে পারে না।’’
ক্রমাগত হাত নেড়ে চলেছেন রোনাল্ডো। রেফারি মাইক্রোফোনে চতুর্থ রেফারির সঙ্গে কথা বললেন কিছুক্ষণ। বাতিল হল পেনাল্টির নির্দেশ।
তারপর?
ম্যাচ গড়াল নিজের নিয়মে। টানটান প্রতিদ্বন্দিতায় লড়াই চালাল ইরানের পার্সিপোলিস আর সৌদি আরবের আল-নাসের। ৯০ মিনিট শেষে খেলার ফলাফল গোলশূন্য ড্র।
ম্যাচে কেউ না জিতলেও, অপামর ফুটবলপ্রেমী জনতার কাছে জিতে গেলেন রোনাল্ডো। উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করলেন, কেন তিনি একটা গোটা প্রজন্মের কাছে আদর্শ। শিখিয়ে দিয়ে গেলেন, খেলার মাঠে জেতা হারার থেকেও বড় বিষয় হল ‘খেলোয়াড়ি মানসিকতা’। তিন পয়েন্টের জন্য কখনোই যেটাকে বিসর্জন দেওয়া যায় না।
ফুটবলের মাঠ জীবন বোধের শিক্ষা দেয়। গত সপ্তাহে ফুটবল বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, লাঠিচার্জে উদ্যত ব্রাজিলীয় পুলিশের ব্যাটনের সামনে নিজের হাত ছুঁড়ে দিয়ে নিজের দেশের দর্শকদের রক্ষা করেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ ‘ডিবু’। বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক। দারুণ ছন্দে চলছে তাঁর ক্লাব ফুটবলের মরশুম। সোনায় বাঁধানো হাত তাঁর। কিন্তু দেশের সমর্থককে পুলিশের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে একবারের জন্যও না ভেবে নিজের হাত ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ডিবু মার্টিনেজ।
যদি পুলিশের ব্যাটনে ভেঙে যেত তাঁর হাত? চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখে এতশত ভাবার সময় ছিল নাকি ডিবুর কাছে?
বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক মুহূর্তে পরিণত হলেন আদর্শ ‘পাবলিক ফিগারে’।
Comments :0