Raigunj University

অডিট না হওয়ায় রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি টাকার দুর্নীতি

রাজ্য

বিশ্বনাথ সিংহ : রায়গঞ্জ, 

দীর্ঘ দিন অডিট না করে ফেলে রাখা হয়েছিল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব। দেরিতে হওয়া অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে মারাত্মক অর্থনৈতিক কারচুপির অভিযোগ। সরকারি গাইড লাইন ভেঙে টেন্ডার ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজের বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 
২০১৫ সালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত অডিট করানো হয়নি। ৯ বছর পরে এখন অডিট শুরু হতেই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সংস্থার প্যাড ছাপিয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার বরাত হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত হলে আরও অনেক অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি প্রমাণিত হবে বলে জানা যাচ্ছে।  
২০১৭ সালের মার্চ মাসে ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকার বরাত সরকারি নিয়ম না মেনে, টেন্ডার ছাড়াই স্থানীয় পছন্দসই ৩টি সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বরাত পাওয়া ইসলামপুরের একটি সংস্থাকে ৬টি কাজ এবং রায়গঞ্জের কলেজপাড়ার একটি সংস্থাকে ৪টি কাজ ও আরেকটি সংস্থাকে ১টি কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজের বরাতের আর্থিক পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৯৭ লক্ষ ৪৭৯৮ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরানো বিল্ডিং সংস্কার, রং, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর বাঁধানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হস্টেল সংস্কার, শ্রেণিকক্ষ, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। অডিটে টেন্ডার ছাড়া বরাতের ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি এখানে শাসক দলের পছন্দসই সংস্থাকে বরাত দেওয়ার দুর্নীতি হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল গঠিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংস্থাকে কাজের বরাত দেয়। কিন্তু বরাত দেওয়ার সরকারি নিয়মকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। ই-টেন্ডার না হলে সরকারি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টেন্ডার হওয়ার কথা, সেটাও সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ দেওয়া হয়েছিল, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সেই সময় আদৌ গঠিত হয়নি।
এবার লোকসভা নির্বাচন চলাকালীনই কলকাতা থেকে ‘সিএজি’র চার সদস্য রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ থেকে শুরু করে আয়–ব্যয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক ও পঠনপাঠন বিষয়ে খতিয়ে দেখা হয়। তখনই টেন্ডার ছাড়া বরাতের বিষয়টি সামনে এসেছে।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তথা তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সিদ্দিক আলম বেগ জানান, সরকারিভাবে আমি এখনও জানি না অডিটের কি রিপোর্ট এসেছে। যতদূর জানি, অডিট রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজকর্ম, অধ্যাপক ও অফিসার নিয়োগে কিছু অসঙ্গতি মিলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদি তেমন অসঙ্গতি ধরা পড়ে তবে নিশ্চয়ই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী তপন নাগের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বড় আকারে দুর্নীতি হয়েছে। রায়গঞ্জ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর একে সাজিয়ে তোলার নামে গুটিকয়েক অধ্যাপক ও অফিসার লুট করেছে।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়েও ২০১৬ সালে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে উপাচার্য বর্তমানে জেলবন্দি তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচডি গাইড হওয়ার সুযোগে যথেচ্ছাচার করেছেন বলে অভিযোগ। এই প্রথম অডিট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অডিটের রিপোর্ট ও তদন্ত হলেই বহু দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment