Criminal laws

ফৌজদারি আইন কাঠামো বদলাতে বিল শাহের, বহাল প্রতিবাদ দমনের কড়া দাওয়াই

জাতীয়

ঔপনিবেশিক যুগের ভারতীয় ফৌজদারি আইনের কাঠামোই পুরোপুরি বদলানোর লক্ষ্য জানিয়ে  শুক্রবার লোকসভায় বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কোনও আইনে ‘দেশদ্রোহ’ শব্দও নেই। কিন্তু তার বদলে পেশ বয়ানে প্রতিবাদ দমনের আরও কড়া ব্যবস্থা রাখার ইঙ্গিত রয়েছে।
লোকসভায় শাহ জানিয়েছেন, ১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ চালু হবে ফৌজদারি বিচারবিধির বদলে। ‘ভারতীয় সাক্ষ্য’ চালু হবে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে। এই বিল পর্যালোচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠনো হয়েছে। 


সংশোধিত আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ বা সার্বভৌমত্ব বা ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার অপরাধ দমনে বিশেষ আইন হয়েছ। বিলে বহু বিতর্কিত রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ঔপনিবেশিক আইন বাতিল করার যুক্তি দিয়েছেন শাহ। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিয়ে এই যুক্তি বহুদিন হাজির করছে বিরোধী এবং প্রতিবাদী শিবির। তবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন কাজে লাগিয়ে যেভাবে প্রতিবাদী এবং বিরোধিতার স্বর স্তব্ধ করা চলছে সেই ধারাই ভিন্ন নামে বজায় রাখার ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে বিলে। 


কারণ বিলে বলা হয়েছে, সংসদে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ‘‘যিনি, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে, শব্দ দ্বারা, হয় কথিত বা লিখিত, বা চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগের মাধ্যমে বা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে, বা অন্যথায়, উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে, বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, বা বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের অনুভূতিকে উৎসাহিত করে বা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে অথবা এই ধরনের কোন কাজ করলে বা সংঘটিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং জরিমানাও দিতে হবে।’’ 
কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এই অপরাধের ধারা? বিলে তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অভিমত প্রকাশ করে আইন ভাঙার উসকানি দিলে বা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তাকে গণনা করা হবে। 


ঘটনা হলো দেশদ্রোহের অভিযোগ কেন্দ্রের মোদী সরকার বারবার প্রয়োগ করেছে সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে। সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত বলতে হয়েছে যে সরকারের বিরোধিতা বা সরকারি কোনও পদক্ষেপের যে কোনও বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা চলে না। ২০২২’র ১১ মে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা প্রয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। ঔপনিবেশিক আইনের ধারা বদলানো হলেও তার উদ্দেশ্য অটুট রেখে বিল পেশ করেছেন শাহ।
অমিত শাহ বলেছেন, কেন্দ্র গণপিটুনির মতো ঘটনার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও চালু করবে। তবে গোরক্ষার নাম করে বা লাভ জিহাদের নাম করে যদি কাউকে পিটিয়ে মারা হয় তাহলে শাস্তি হবে কিনা এই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ চালু আইনেই শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যে। 


অন্যান্য প্রস্তাবিত শাস্তির মধ্যে রয়েছে দল বেঁধে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২০ বছরের জেল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং নাবালিকাকে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 
নতুন বিলে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ, হত্যা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিন শাহ বলেন, ‘‘যেই আইনগুলো বাতিল করা হবে সেই সব আইনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনকে রক্ষা করা এবং শক্তিশালী করা, ধারণা ছিল শাস্তি দেওয়া এবং ন্যায়বিচার দেওয়া নয়। তাদের প্রতিস্থাপন করে, নতুন তিনটি আইন সুরক্ষার চেতনা নিয়ে আসবে ভারতীয় নাগরিকের অধিকার।’’ 
তিনি আরও বলেন, ‘‘লক্ষ্য শাস্তি দেওয়া নয়, অপরাধের বিচার করা। অপরাধ মুক্ত মানসিকতা তৈরি করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment