অমিত কুমার দেব - কোচবিহার
বুনো দাঁতালের হামলায় শুক্রবার কার্যত মৃত্যু মিছিল কোচবিহারে। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৪জনের। গুরুতর জখম একাধিক। বনদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ক্ষোভে ফুঁসছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষেরা। মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের পাড়াডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাউরিকাটা এবং ভানুরকুঠি এলাকায় পরপর ২জনের পর এই ব্লকেরই উনিশবিশা গ্রাম পঞ্চায়েতের বনিকপাড়া এবং ঘোকসাডাঙা হাইরোড এলাকায় বুনো হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় আরও দুই গৃহবধূর। মৃতদের নাম বুদ্ধেশ্বর অধিকারী(৬৫), আনন্দ প্রামাণিক(৬১), রেখারানী রায়(৬৮), জয়ন্তী সরকার(৪৬)।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার দিনহাটার বিস্তীর্ণ এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় ৬টি হাতির একটি দল। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টার পর বনদপ্তরের পক্ষ থেকে হাতিগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও শুক্রবার সকালে এই ৬টি হাতির দেখা মেলে শীতলকুচিতে। এখানে হাতির হানায় গুরুতর জখম হন এক ব্যক্তি। তার একটি পা ভেঙে যায় এবং তার বুকে আঘাত লাগে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে কোচবিহারে রেফার করে দেওয়া হয়। এরপর হাতিগুলি মাথাভাঙ্গা ১নং ব্লকের জোরপাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবপুর এলাকায় চলে আসে। প্রতিদিনের মতো শিবপুর বাজারে ভিক্ষাবৃত্তি করতে এসে বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় হাতির হানায় জখম হন এক ভিক্ষাজীবী। তাঁকে উদ্ধার করে মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এরপর শিবপুর এলাকায় হাতির দল দাপিয়ে বেড়ানোর পর চলে আসে চকিয়ারছড়া এলাকায়। এখানে একটি দাঁতাল দলছুট হয়ে মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লক দপ্তর হয়ে দোলংমোড় থেকে চলে যায় স্থানীয় আঙ্গারকাটা পাড়াডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাউরিকাটা এলাকায়। এখানে মাঠে ঘাস কাটছিলেন বুদ্ধেশ্বর অধিকারী নামে এক ব্যক্তি। এই দলছুট হাতির হানায় গুরুতর জখম হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে নিশিগঞ্জ রুরাল হসপিটালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ৬৫বর্ষীয় এই ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপর টাউরিকাটা এলাকা থেকে আবার এই দলছুট হাতিটি চলে যায় ভানুরকুঠি এলাকায়। এখানেও মাঠে ঘাস কাটছিলেন আনন্দ প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি। হাতির উপস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই তাকে শূর দিয়ে তুলে আছাড় মেরে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি বুকে দাঁত ঢুকিয়ে দেয় এই দলছুট দাঁতাল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
এর কিছুক্ষণ পরেই মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের ঘোকসাডাঙা এলাকায় দেখা মেলে আরও এক দলছুট দাঁতালের।এখানে ঘোকসাডাঙা স্টেশন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় দাপাদাপি করে উনিশবিশা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোকসাডাঙা হাইরোড এলাকার রেখা রানী রায় এবং বনিকপাড়ার জয়ন্তী সরকারের ওপর হামলা চালায় হাতিটি। তাদের উদ্ধার করে ঘোকসাডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে এখানে এই দুই গৃহবধূকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। হাতির হানায় এই ৪জনের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বনদপ্তরের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষেরা।
বুধবার থেকে কোচবিহার জেলা দিনহাটা এরপর শীতলকুচি সহ মাথা এখন এক ও দুই নং ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই ৬টি বুনো হাতির দল দাপিয়ে বেড়ালেও তাদেরকে এখনও পর্যন্ত কেন আয়ত্ত্বে আনতে পারছে না বনদপ্তর? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে।
তবে শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত দুটি দলছুট হাতি সন্ধ্যে পর্যন্ত রয়ে গেছে লোকালয়েই। বাকি ৪টি হাতির দল মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের ঘোকসাডাঙার পার্শ্ববর্তী তোর্ষা নদী পার হয়ে রসমতী জঙ্গলে চলে গিয়েছে বলে মনে করছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।
Comments :0