INDIA UNEMPLOYMENT

৫০-৭০ শতাংশ প্লেসমেন্ট কমল বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে

জাতীয়

india economy unemployment bengali news sitaram yechury

অর্থনৈতিক সঙ্কটের জের। তারফলে দেশের বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি থেকে ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে নিয়োগের হার ৫০-৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। নিজেদের প্রতিবেদনে এমনটাই তুলে ধরেছে ইকোনমিক টাইমস। 

এই প্রতিবেদনটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি লিখেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার বাস্তবতা। চাহিদা কমছে। তারফলে নিয়োগও কমছে। অর্থনৈতিক শ্লথতা দেশের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’কে ধ্বংস করছে। মোদী সরকারের উচিত পেটোয়া পুঁজিপতিদের মুনাফার জোগান না বাড়িয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, এবং দেশের সার্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া।’’

নিজেদের প্রতিবেদনে ইকোনমিক টাইমস একাধিক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাস থেকে নিয়োগের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। 

বিএমএল মুঞ্জল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর সান্ত্বনীল দাসগুপ্ত জানাচ্ছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ফ্রেশার, বা সদ্য কলেজ পাশ করে বেরোনো পড়ুয়াদের নিয়োগের বিষয়ে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি’র ক্যাম্পাসিং-এর সিংহভাগ যেত তথ্যপ্রযুক্তির ঘরে। সেটা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলিতেও নিয়োগ কমেছে। 

দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, গত শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ শতাংশের কাছে পড়ুয়া ক্যাম্পাসিং থেকে চাকরি পেয়েছিলেন। এই বছর সেই হার নেমে এসেছে ২০-২৫ শতাংশে। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল বর্ষের মোট পড়ুয়া সংখ্যা ১৭৫জন। 

অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর অঞ্জনী কুমার ভাটনগর জানিয়েছেন, গত শিক্ষাবর্ষে, নভেম্বর মাস নাগাদ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল বর্ষের ৬০ শতাংশের বেশি পড়ুয়ার হাতে নিয়োগপত্র চলে এসেছিল। এই বছর সেই হার ৩০ শতাংশও নয়। 

কোনেরু লক্ষ্মাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর শ্রবণবাবু জে জানিয়েছেন, এই বছরে ক্যাম্পাস থেকে চাকরি পাওয়ার চিত্র গত বছরগুলির মত আশাপ্রদ নয়। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি এই বছর নিয়োগ করতে চাইছে না। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই সিংহভাগ নিয়োগ হত। সেটা না হওয়ার ফলেই নিয়োগের পরিসংখ্যানের এই হাল। 

তিনি জানাচ্ছেন, গত বছর তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের বেশি ফাইনাল বর্ষের পড়ুয়া ক্যাম্পাসিং থেকে চাকরি পেয়েছিলেন। এই বছর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ পড়ুয়া নিয়োগপত্র পেয়েছেন। 

একই ছবি ধরা পড়েছে গালগোটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত বছরের নভেম্বরে ফাইনাল বর্ষের ২ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে ৪৫ শতাংশ পড়ুয়া চাকরির অফার পেয়ে গিয়েছিলেন। চলতি বছর বেশ কিছুটা আগে ক্যাম্পাসিং শুরু করলেও নিয়োগের হার ৩৮ শতাংশ।

গালগোটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট বিভাগের ডিরেক্টর মনীষা চৌধুরী জানাচ্ছেন, সংস্থাগুলি আর আগের মত ঢালাও নিয়োগ করতে চাইছে না। গত বছর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের একটি বহুজাতিক সংস্থা আমাদের ক্যাম্পাস থেকে ১২০-১৩০জন পড়ুয়াকে নিয়োগ করেছিল। এই বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩০’র ঘরে। 

সারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য পরমা নন্দ জানিয়েছেন, ফ্রেশার নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্বিক অনীহা দেখা যাচ্ছে। নিয়োগের হার  গত বছরের তুলনায় গড়ে ৫-৭ শতাংশ কমেছে। 

থাপার ইন্সটিটিইউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির মুখ্য ইন্ডাস্ট্রি এনগেজমেন্ট অফিসার অজয়িন্দর সিং জাওয়ান্ডা জানাচ্ছেন, গত বছরগুলির তুলনায় এই বছর অনেক কম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ক্যাম্পাসিংয়ে এসেছে। গত বছর যাঁরা সর্বাধিক নিয়োগ করেছিলেন, তাঁরা হয় আসতে দেরি করছেন, নয়ত জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরা আসবেন না। 

কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি নয়। অটোমোবাইল, এরোনটিক্স, বায়োটেকনোলজি, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স, ইলেক্ট্রনিক্স, কমিউনিকেশনের মত বিভাগগুলিতেও এই বছর নিয়োগের পরিমাণ লক্ষনীয় হারে কমেছে। 

রিয়া মরিয়ম বাবু নামে অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক পড়ুয়া জানাচ্ছেন, তাঁদের ৩৫ জনের ব্যাচে প্রতি চারজনে একজন ক্যাম্পাসিং থেকে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু আগের বছরগুলিতে দেখা গিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকেই ক্যাম্পাসিংয়ের হিড়িক পড়ে যায়। অষ্টম তথা ফাইনাল সেমিস্টারে পড়াকালীনই নিয়োগপত্র হাতে চলে আসত। 

 

Comments :0

Login to leave a comment