রামশঙ্কর চক্রবর্তী: তমলুক
গ্রাম উঠুক জেগে চাইছেন ধর্মতলায় অনশনকারীর জুনিয়র ডাক্তারের বাবা। সোমবারই তাঁর মেয়ে, অনশনকারীদের অন্যতম তনয়া পাঁজা অজ্ঞান হয়ে পড়েন অনশন মঞ্চে। তাই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ধর্মতলায় যে জুনিয়র ডাক্তররা অনশন করছেন তাঁদের অন্যতম তনয়া পাঁজা। চিকিৎসকদের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম থ্রেট কালচার মুক্ত পরিবেশ। গ্রামের সাধারণ মানুষ যে প্রতি মুহূর্তেই থ্রেট কালচারে শিকার হচ্ছেন, ভয়ভীতি, হুমকির পরিবেশে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হচ্ছে তা আরও পরিষ্কার করলেন অনশনকারী চিকিৎসক তনয়া পাঁজার বাবা চিকিৎসক আর পাঁজা— ‘‘গ্রামের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। জুনিয়র চিকিৎসকরা পথ দেখিয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দাদের এবার সময় নিজেদের দাবি, অধিকার ছিনিয়ে আনার। সবটা জানেন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। শুধু প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না। ভয় আছে। বামপন্থীরা প্রগতিশীল ভাবনাচিন্তা করে। তাদেরই দায়িত্ব এমন অস্থির পরিবেশের সমাজের চিন্তাধারার পরিবর্তন করার।’’
কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা করছেন তমলুকের বাসিন্দা রমাপ্রসাদ পাঁজা। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে প্রগতিশীল চিন্তাধারা বাড়িতে। তাঁর মেয়েও বাবার পথেই। অনশনকারীদের মধ্যে নিজের মেয়ে রয়েছে। এতে কিছুটা দুশ্চিন্তার পাশাপাশি গর্বিত চিকিৎসক আর পাঁজা। কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে, তাঁর বাড়িতে বসে। মেয়ে অনশন করছে, সরকারের ভুল নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল। কী মনে হচ্ছে? ভয় হচ্ছে? প্রশ্ন শুনেই দৃঢ় উত্তর। ‘‘গর্ব হচ্ছে। আমিও তো প্রতিদিন অনশন মঞ্চে যাই। উৎসাহ দিতে। অতগুলো ছেলেমেয়ে বসে আছে দিনের পর দিন। সবাই আমার সন্তানসম। আমিও পেশাগতভাবে একজন চিকিৎসক আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে ওদের প্রতি। মেয়ে আমাকে দেখে আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করে। দিনের পর দিন ধরে চলা থ্রেট কালচারের শিকার হওয়া একটা মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই। জানি কঠিন। তবে জুনিয়রদের যে ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় মনোভাব তাতে বদল হবেই এমন পচে যাওয়া সিস্টেমের।’’
কথা বলতে বলতে গ্রামের প্রসঙ্গ উঠল। চিকিৎসক পাঁজা মনে করালেন পশ্চিমবঙ্গের তিন ভাগই গ্রামাঞ্চল। ‘‘কোথায় থ্রেট কালচার নেই? শিক্ষাক্ষেত্র থেকে কর্মস্থল। বিভিন্ন পরিষেবায়, সরকারি প্রকল্পে সব ক্ষেত্রেই তো গ্রামের মানুষ ভুক্তভোগী। ভয়ের পরিবেশে বাস করে গ্রামের মানুষ। আমি তমলুকের মতো ছোট শহরে বাস করি। আমার বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার এর মধ্যেই গ্রাম। সবই দেখছি, শুনছি কীভাবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বা পঞ্চায়েতের কাজে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা থাকে। হুমকি, ভয়ে থাকতে হয়। যদি মুখ খোলে, প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করে তাহলে ন্যায্য অধিকার, সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তবে আর কতদিন এভাবে মুখ বুঝে চলবে? জাগতেই হবে আগামী প্রজন্মের জন্য।"
চিকিৎসক পাঁজার বললেন, ‘‘চিকিৎসকদের যা দাবি সেগুলি তো ন্যায্য। আসলে সব দাবি মানলে সরকারের সমস্যা।" উদাহরণ দিলেন তিনি, "যেমন চিকিৎসা করাতে এসে সরকারি হাসপাতালে বেড না পাওয়া হোক কিংবা পরিষেবা— দোষ হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু রেফারেন্স সিস্টেম থাকলে মানুষ আসল সত্য জানতে পারবে। সাধারণ কলেজ থেকে মেডিক্যাল কলেজ কোথাও ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় না এখন। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মত প্রয়োগ করতে পারে না। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যে পরিমাণে থ্রেট কালচার চলে তা দীর্ঘদিন সহ্য করেই আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকরা। জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলির কী অবস্থা? শিক্ষক আছে? কেউ খোঁজ রেখেছে, কেমন পড়াশোনা হয় সেখানে? পুরো সিস্টেমটা পচে গিয়েছে।"
অনশনকারীদের কয়েকজনের বাড়িতে পুলিশ পৌঁছেছে, ফোন করে অভিভাবকদের বলা হচ্ছে ছেলে মেয়েরা যেন অনশন প্রত্যাহার করে নেয়। না ভীত নন চিকিৎসক পাঁজা। জানালেন “ভয় পেলে প্রথম থেকেই গুটিয়ে থাকতেন তিনি বা তাঁর মেয়ে। প্রতিবাদের রাস্তায় প্রতিবাদই থাকবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরণ লড়াই জারি থাকবে।”
Junior Doctors
এসেছে থ্রেট ফোন, পুলিশও, বাবা তবু চান, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাক মেয়েটা
×
Comments :0