TAMIL NADU MINISTER SACKED

স্ট্যালিনকে না জানিয়েই মন্ত্রীকে অপসারণ

জাতীয়

tamil nadu governor bjp dmk mk stalin bjp bengali news

একতরফাভাবেই জেলে থাকা মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন তামিলনাডুর রাজ্যপাল আর এন রবি। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই মন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজিকে রাজ্যপাল নিজের সিদ্ধান্তে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্ভবত স্বাধীনোত্তরকালে এই প্রথম। এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই ডিএমকে সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের তিক্ততা আরও বাড়বে।

মন্ত্রীকে সরাতে রাজ্যপাল রবি যে দাবি করেছেন তা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে ভয়ঙ্কর নজির হয়ে থাকবে। 

বৃহস্পতিবার রাজভবনের তরফে সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘সেন্থিল বালাজির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’র (ইডি) তদন্ত চলছে। উনি এখন জেল হেপাজতে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি, বেআইনি লেনদেন সহ অন্যান্য ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেন্থিল বালাজি এরপরেও মন্ত্রীসভায় থেকে গেলে তদন্তে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যা প্রকান্তরে রাজ্যের সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সঙ্কটে ফেলে দেবে। তাই তাঁকে রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে এখনই বরখাস্ত করা হলো।’


এমনিতে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন কিংবা ডিএমকে দলের কোনও প্রতিক্রিয়া এদিন জানা যায়নি। তবে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যপালের এই স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তামিলনাডু সরকার। 

বিরোধী জোটের অন্যতম নেতা তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। পাটনায় ২৩ জুন বিরোধীদের বৈঠকে তিনি ছিলেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কথা সবাই জানে। ওই বৈঠকের পর থেকেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে একনাগাড়ে তোপ দেগে চলেছেন বিজেপি’র শীর্ষ নেতারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ওই বৈঠককে ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের জমায়েত’ বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। আশঙ্কা থেকেই তাঁদের ওই বিষোদ্গার বলে মনে করছেন অনেকে। 

আবার এদিনই প্রধানমন্ত্রীর অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে জোরালো সওয়ালের কড়া সমালোচনা করেছিলেন স্ট্যালিন। এর পরেই রাজ্যপালের তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যকে কোনও আলোচনা ছাড়াই সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।


বুধবার সেন্থিলের বিচারবিভাগীয় হেপাজতে থাকার মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেয় চেন্নাইয়ের এক আদালত। তাঁকে ১২ জুলাই পর্যন্ত হেপাজতে থাকতে হবে। 

বেআইনি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গত ১৪ জুন সেন্থিলকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তার আগে ১৩ জুন সেন্থিলের বিধানসভার দপ্তর, সরকারি বাসভবনে তল্লাশি চালান তদন্তকারী অফিসাররা। গ্রেপ্তারের দিনই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে বুকে হাত দিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতেও দেখা যায়। 

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমাফিক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২১ জুন বাইপাস সার্জারি হয় সেন্থিলের। এর আগে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল সরকারি হাসপাতালে। সেইসময় সেন্থিলের গ্রেপ্তারকে বিরোধীরা একযোগে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলেই আক্রমণ করেছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।


লক্ষণীয় বিষয় হলো, যেদিন সেন্থিল গ্রেপ্তার হন সেদিনই তাঁকে দপ্তরহীন মন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করেন স্ট্যালিন। তাঁর দুই দপ্তর অন্য দুই মন্ত্রীকে ভাগ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে ফাইল পাঠান তিনি। কিন্তু রাজ্যপাল রবি সেই ফাইল ফেরত পাঠান ‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বিভ্রান্তিকর ও ভুল’ এই অজুহাত দেখিয়ে। 

পরে স্ট্যালিন ফের মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে একই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই ফাইল পাঠান রাজ্যপালের কাছে। তখন রাজ্যপাল সেন্থিলকে দপ্তরহীন মন্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দেন। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের প্রস্তাব ছাড়া রাজ্যপাল নিজে থেকে কীভাবে মন্ত্রীকে বহিষ্কার করলেন, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেল।


এমনিতে রাজ্যপাল রবির সঙ্গে ডিএমকে সরকারের বিরোধ চলছে প্রথম থেকেই। বহু বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁর মতান্তর দেখা দেয়। অতি সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় বিল পাশ হলেও তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন রাজ্যপাল। এইরকম আরও বিল আটকে রেখেছেন তিনি। 

ডিএমকে সরকার শেষে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পিটিশন দিয়ে অভিযোগ জানায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে। ডিএমকে’র অভিযোগ, সংবিধানকে অস্বীকার করে বিজেপি’র হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন রাজ্যপাল রবি। এমনকি সেন্থিলের গ্রেপ্তারের সময় বিরোধীরা একযোগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। এদিনের ঘটনার পর রাজ্যপাল-ডিএমকে সরকারের সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটবে বলেই মনে করা হচ্ছে।


সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপালের কোনও প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। রাজ্য মন্ত্রীসভা তাঁকে যেমন পরামর্শ দেয়, রাজ্যপালকে সেটা মেনেই চলতে হয়। তবে এখন দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং কেরালায় রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চরম আকার নিয়েছে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।

 

Comments :0

Login to leave a comment