উত্তরাখণ্ডের সিলকিয়ারায় ভয়াবহ সুড়ঙ্গ দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েনি। তার আগেই বারকোটের দিক থেকে সেই সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য পাহাড়ে খোঁড়াখুড়ি শুরু করে দিল জাতীয় সড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম (এনএইচআইডিসিএল)। একরকম গোপনেই ওই অংশে কাজ শুরু করা হয়েছে। কারণ, সরকারিভাবে এই বিষয়ে শনিবার পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি। অথচ সিলকিয়ারার দিকে নির্মীয়মান সুড়ঙ্গটি পাহাড়ের ধসে ভেঙে পড়ার পরে কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলেছিলেন, এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ কতটা নিরাপদ, সরকার তা খতিয়ে দেখবে। তাঁর কথায় ইঙ্গিত ছিল, চারধাম পর্যটন সার্কিট প্রকল্পে সিলকিয়ারা ও বারকোটের মধ্যে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ ফের শুরু করা হবে তার পরেই। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়ার পরে সংবাদ মাধ্যমের তরফে এনএইচআইডিসিএল’র অধিকর্তা অংশু মনীশ খালখোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেননি। বরং সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গটি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মাণ সংস্থা বারকোটের দিক থেকে কাজ শুরু করেছে। সিলকিয়ারার দিকে সুড়ঙ্গে ধস নিয়ে তদন্ত চলছে। তার কোনও রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি।
সূত্রের খবর, গত ২১ ডিসেম্বর সকালে বারকোটের দিক থেকে ওই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ জন শ্রমিককে এই কাজে নামানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে অগর মেশিন, সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরির যন্ত্র যুক্ত ট্রাক, পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য বুলডোজার সহ নানা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ। ভূবিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করছেন, সিলকিয়ারার ধসের বিষয়ে তদন্ত রিপোর্টের আগেই এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বারকোটের দিক থেকে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শুরু করা হলো। কারণ, হিমালয় পর্বতমালা ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের দিক থেকে ভঙ্গুর চরিত্রের। সেই কারণেই ভারী যন্ত্রপাতির ধাক্কা সহ্য করতে না পারায় সিলকিয়ারার দিকে পাহাড়ের উপর থেকে ধস নেমে এসেছিল নির্মীয়মান সুড়ঙ্গের একটি অংশের উপর। আবারও যে ধস নামবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
উল্লেখ্য, ওই ধসেই সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। নানা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। শেষে ১৭ দিনের মাথায় ছোট ড্রিল মেশিন দিয়ে ইঁদুরের মতো গর্ত খোঁড়ায় পারদর্শী শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে তাঁদের বের করতে হয়, যাঁরা র্যাকট-হোল মাইনার নামে পরিচিত। এর মধ্যে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরুর আগেই এনএইচআইডিসিএল’র কাছে পেশ করা ভূবিজ্ঞানীদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভূবিজ্ঞানীরা ওই পাহাড়ে দুর্বল পাথরের অবস্থান সম্পর্কে এনএইচআইডিসিএল-কে সতর্ক করেছিলেন। তাঁরা এও বলেছিলেন যে, সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময়ে ধস নামতে পারে। তাই শ্রমিকরা যাতে সেই পরিস্থিতিতে বেরিয়ে আসতে পারেন, তার জন্য সুড়ঙ্গ বা টানেল তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি সাড়ে ৩ মিটার ব্যাসের ‘এসকেপ টানেল’ও বানাতে হবে। কিন্তু এই পরামর্শে কান দেয়নি এনএইচআইডিসিএল।
এদিকে, সিলকিয়ারায় আটকে পড়া শ্রমিকদের যাঁরা উদ্ধার করে এনেছেন, সেই ১২ জন শ্রমিক তাঁদের দেওয়া পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ নিয়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সুড়ঙ্গের ভিতরে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, সেই ৪১ জনের প্রত্যেককে উত্তরখণ্ড সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁরা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে ওই শ্রমিকদের বের করে এনেছেন। এই ডিসেম্বরের ২১ তারিখে এসে তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁদের সঙ্গে উত্তরাখণ্ড সরকারের ‘সৎ মায়ের মতো আচরণ’। এই ১২ জন র্যানট মাইনার দিল্লির যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, সেই রকওয়েল এন্টারপ্রাইজেসের প্রধান ওয়াকিল হাসান আরও বলেছেন, ‘‘আমরা এই কাজের জন্য কোনও পুরস্কার চাইনি। আমরা বলেছিলাম, হয় আমাদের কোনও স্থায়ী কাজ দিন অথবা আমাদের এমন পরিমাণ অর্থ দিন, যাতে সারা জীবন গর্ত খুঁড়ে কাটাতে না হয়। আমরা দেশের সরকার ও দেশকে গর্বিত করেছি। সরকারের আমাদের জন্য এমন কিছুই করা উচিত, যা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’’
uttarkashi tunnel
সিলকিয়ারা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট নেই, শুরু হয়ে গেল বারকোটের দিকে সুড়ঙ্গের কাজ
×
Comments :0