প্যালেস্তাইন সংঘাতের ধাক্কা এসে পড়ল ব্রিটেনের মন্ত্রীসভায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে সরিয়েই দিতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যে ব্রেভারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। গাজায় ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লন্ডনে মিছিলকে ‘ঘৃণা ছড়ানোর মিছিল’ বলে অভিহিত করেছিলেন ব্রেভারম্যান। ইজরায়েলের হয়ে গলা ফটানো মন্ত্রী লন্ডনের পুলিশকেও সমালোচনা করেছিলেন। গত শনিবার যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মিছিলের আগেই অনুষ্ঠিত হয় অতি দক্ষিণপন্থীদের বিক্ষোভ। সেটি ছিল হিংসাত্মক। অভিযোগ উঠেছিল, ব্রেভারম্যানের মন্তব্যেই এই অতি দক্ষিণপন্থীরা সক্রিয় ও উগ্র হয়ে ওঠে। পুলিশ শেষ পর্যন্ত এদের নিরস্ত করতে পারলেও টাইমস পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে ব্রেভারম্যান বলেন, মেট্রোপলিটান পুলিশ দু’রকম ব্যবহার করেছে। অতি দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট খারাপ ব্যবহার করেছে। অথচ ‘ঘৃণার মিছিলকে’ বাধা দেওয়া হয়নি। ব্রেভারম্যান ওই মিছিলকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে বলেও চিহ্নিত করেছিলেন। প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে লন্ডনে শনিবারের মিছিলে অন্তত চার লক্ষ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। ব্রেভারম্যানের এই মন্তব্য ঘিরে জনমনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হওয়ায় তাঁকে ছেঁটেই ফেললেন সুনক।
নতুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছেন এতদিন বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেমস ক্লেভারলি। বিদেশ মন্ত্রী হিসাবে সুনক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে এনে চমকে দিয়েছেন। ক্যামেরন ২০১০ থেকে ২০১৬ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রক্ষণশীল দলের নেতাও ছিলেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটে তিনি পরাস্ত হয়ে পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে তিনি সংসদ সদস্যও নন। উচ্চ কক্ষ, হাউস অব লর্ডসে তাঁকে জিতিয়ে আনতে হবে। সরকার সংক্রান্ত রাজনীতির বাইরে সাত বছর থাকার পরেও তাঁকে বিদেশমন্ত্রী করে দলের মধ্যে বিভাজন মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন সুনক।
প্যালেস্তাইন প্রশ্নে ব্রিটিশ সরকার পুরোপুরি ইজরায়েলের পাশে। প্রধানমন্ত্রী সুনক নিজেই তেল আভিভে গিয়ে ইজরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসেছেন। লাগাতার ইজরায়েলী গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে বিরোধিতা করেছে ব্রিটেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু মন্ত্রীসভার মনোভাব এবং ব্রিটিশ জনগণের মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য ক্রমেই চওড়া হচ্ছে। সাংসদদের মধ্যেও বিরুদ্ধ স্বর প্রবল হচ্ছে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রেভারম্যান সম্প্রতি আরেকটি ভাষণে দুনিয়ার নজর টেনেছিলেন। ব্রিটেনের অভিবাসীদের একপ্রস্ত গালিগালাজ করে তিনি অভিযোগ করেছিলেন , ব্রিটেনে অভিবাসীদের ঝড় উঠেছে। তিনি যদিও ‘বেআইনি’ শব্দটি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু সকলকে রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়া উচিত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। অতি দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকে থাকা ব্রেভারম্যান রক্ষণশীল দলের মধ্যেই ওই অংশের নেত্রী হতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সামনের বছর ব্রিটেনে নির্বাচন। রক্ষণশীল দলের মধ্যেও নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ঋষি সুনককেও চ্যালেঞ্জ করতে পারেন ব্রেভারম্যান। এদিনই তিনি বলে রেখেছেন, ঠিক সময়ে আরও কিছু বলব।
এদিকে, সঙ্কটে পড়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি এখন লন্ডনেই। বিদায়ী বিদেশমন্ত্রী ক্লেভারলির সঙ্গে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত ছিল। এখন ক্যামেরনের সঙ্গে তাঁর কথা হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। হলেও বিদেশ দপ্তরের অন্য অফিসাররা এখন নীতিগত অবস্থান নেবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
Comments :0