উৎসবে অনুভবে
গল্প
সায়ন্তনী আর বেড়াল
কালিদাস ভদ্র
নতুনপাতা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
হুগলি থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে সায়ন্তনী কলেজ স্ট্রিট ঢুকতে গিয়ে থমকে গেল। হাঁটু জলে বই আর বই ভাসছে। এক রাতে বৃষ্টিতে কলকাতা এভাবে ভাসবে, শোনেনি কখনও।
গাড়িটা কোনোমতে একটা জায়গায় রেখে জল ভেঙে কফিহাউসে উঠেল। বর্ধমান থেকে পত্রিকার শারদ সংখ্যা নিয়ে অরিন্দম অনেক কষ্টে এসে বসে আছে।
সায়ন্তনীকে দেখে বলল, আয় আয়। নেহাত কথা দিয়েছি বলে আজ এসেছি। বাবাঃ কি জল বইপাড়ায়!
- হ্যাঁ। যেন দুয়ারে দিঘা। বইভাসি কল্লোলীনি...
- যাক, বোস, তোর পত্রিকাটা দিয়ে পালাব। যে-কোনো সময় ট্রেন বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- কফি আর চিকেন পকোড়া বলছি। খেয়ে যাবি, বোস।
ওয়েটর কফি আর চিকেন পকোড়া দিতেই অরিন্দম গোগ্রাসে খেতে গিয়ে একটা টুকরো টেবিলের নীচে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাঁও ম্যাঁও করে একটা বাচ্চা বেড়ালের ডাক শোনা গেল।
সায়ন্তনী নীচু হয়ে বেড়ালটাকে দেখতে পেল। ছোট্ট বাচ্চা। কালো কুচকুচে।
অরিন্দম বলল, জল থইথই কলেজ স্ট্রিট থেকে বেড়ালটা কফি হাউসে আশ্রয় নিয়েছে।
-হুম। কোথায় ওর মা, কে জানে! হয়তো অন্য কোনো জায়গায় ভেসে গেছে।
অরিন্দম বলল, বই আর বেড়াল দুর্গার বোধনের আগে বিপন্ন, ঘরছাড়া!
সায়ন্তনী বেড়ালটি কোলে নিয়ে বলল, আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি বাড়ি। ড্রাইভারকে ডাকছি এখানে।
ড্রাইভার জীবন, পড়াশোনা বেশ ভালো। একটা চাকরি করত হুগলি মিলে। কারখানা দশ বছর বন্ধ। বাধ্য হয়ে ড্রাইভারি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
জীবন জল ছপছপ পায়ে কফি হাউসে ওদের সামনে দাঁড়াল। হাতে জলে ডোবা ভিজে একটা বই। কভারে ছাপা, দূরত্ব। নীচে ছাপা সায়ন্তনী ঘোষ।
নামটা দেখে জীবন বইভাসি জল থেকে তুলে আনবে, সায়ন্তনী ভাবতে পারিনি! তার বই আর বেড়াল পুজোর মুহূর্তে শরণার্থী...
Comments :0