Donald Trump

দোষী সাব্যস্ত হয়েও ‘শর্তহীন অব্যাহতি’ পেলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক

নিউইয়র্কের আদালতের বাইরে ট্রাম্পের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ।

হোয়াইট হাউসে ঢোকার দশদিন আগেই ধাক্কা খেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পর্ন তারকা মামলায় দোষী সাব্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হবু রাষ্ট্রপতিকে আদালত শাস্তিভোগ থেকে ‘শর্তহীন অব্যাহতি’ দিয়েছে। মানে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে দোষী হলেও ট্রাম্পকে জেলে যেতে হচ্ছে না। আমেরিকার আড়াইশো বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ঘোষিত দোষী রাষ্ট্রপতি হতে চলেছে। 

আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ঠিক দিন দশেক আগে শুক্রবার, অর্থ তছরুপ সহ মোট ৩৪টি অপরাধের অভিযোগে নিউ ইয়র্কের এক আদালত আমেরিকার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তবে কোনও শাস্তির নির্দেশ না দিয়ে তাঁকে ‘শর্তহীন অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁর কম্পানি ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ অসংখ্য কালোবাজারি ও অর্থ তছরুপের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি ২০১৬-য় রাষ্ট্রপতি ভোটের দিনকয়েক আগে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্ন অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসের যৌন হেনস্তা ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ ধামাচাপা দিতে অভিযোগকারিণী সহ আরও বেশ কয়েক জনকে প্রায় দেড় লক্ষ ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এই সমস্ত অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ইতিমধ্যে আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের নানা মহল। এদিন আদালতের বাইরে ট্রাম্পের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক বিক্ষোভকারী। ট্রাম্প সমার্থকরাও পালটা জমায়েতের ডাক দেয়।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে শুক্রবারের ঘুরপথে শুনানি পিছানোর চেষ্টা করেন ট্রাম্প। তবে শুনানি পিছাবে না বলে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার অনলাইন মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের এই আদালতের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প। ২০১৬-র রাষ্ট্রপতি ভোটের সময়, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ বিভিন্ন আইন বহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করে  ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প এবং তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি। অভিযোগকারী থেকে তদন্তকারী আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়া, হুমকি দেওয়া, তদন্ত প্রক্রিয়া এবং বিচার পদ্ধতি প্রভাবিত করার মতো বেশ কিছু অভিযোগের অকাট্য প্রমাণ এদিন ম্যানহ্যাটেন জেলা আদালতে পেশ করেন অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ।

এই সমস্ত প্রমাণের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে শুনানিতে তাঁকে সমস্ত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটেন জেলা আদালতের বিচারপতি জুয়ান এম মার্চেন। মার্কিন দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাঁকে চার বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া উচিত। তবে উপস্থিত জুরির মত অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা’ রাখতে তাঁকে জেলবন্দি করার নির্দেশ না দিয়ে ‘শর্তহীন অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। অপরাধী যদি নাবালক হয়, তার করা অপরাধ যদি ততটা ‘গুরুতর’ না হয়, কিংবা আদালত যদি তাকে সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকারক হিসাবে চিহ্নিত না করে, তবে কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা ছাড়া ‘শর্তহীন অব্যাহতি’ দেওয়া যায়। কিন্তু ট্রাম্প যেই অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন, তার থেকে অনেক কম গুরুতর অপরাধের জন্যেও আমেরিকার হাজার হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে জেল খাটেন। 

এদিকে ‘রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা’ রাখতে ট্রাম্পকে জুরির রেহাই দেওয়াকে রীতিমত হাস্যকর বলে কটাক্ষ করেছে নানা মহল। দুর্নীতি আর যৌন হেনস্তায় এক দোষীসাব্যস্তকে শাস্তি না দিয়ে, কিভাবে তাঁর ‘মর্যাদা’ রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার এই ঘটনায় মার্কিন বিচার ব্যবস্থার অকর্মণ্যতাকে দোষারোপ করেছেন। ‘‘শাস্তি না দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদের আরও বড় অমর্যাদা করা হলো।’’ ‘‘এই একই অপরাধের জন্য অন্য কোনও ব্যক্তিকে আজ জেলে বাস করতে হতো।’’ ‘‘লজ্জার বিষয়। দেশের দায়িত্ব এক দুর্নীতিবাজ ধর্ষকের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।’’ ‘‘এই যদি হয়, তবে দেশে আর গণতন্ত্র রইল কোথায়। আফগানিস্তান বা সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের আর পার্থক্য রইল কোথায়?’’ 

 

Comments :0

Login to leave a comment