গত ত্রিশ বছরে স্রেফ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৩.৮ লক্ষ কোটি ডলার। ভারতের মতো বড় দেশে শেষ অর্থবর্ষে মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় সমান ক্ষতির এই অঙ্ক।
বিশ্ব উষ্ণায়নকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। খরা, বন্যা, অসময়ে বৃষ্টি, ধসের প্রবণতা বাড়ছে বিশ্বে। বাড়ছে তাপপ্রবাহের মাত্রাও।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ফাও’-র রিপোর্ট অনুযায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এশিয়া মহাদেশ জুড়ে। বার্ষিক হিসাবে এই ক্ষতির অঙ্ক বছরে প্রায় ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বা ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার কোটি টাকা।
এই অঙ্ক বিশ্বে মোট কৃষি উৎপাদনের প্রায় ৫ শতাংশ। কৃষি, কৃষিপণ্য, পশুজাত সম্পদের বাজারের এই মাত্রায় আর্থিক ক্ষতি এই বছরে এই প্রথম দেখা গেছে।
বিগত তিন দশকে গড়ে প্রতি বছর কেবল দানাশস্যের উৎপাদন ৬ কোটি ৯০ লক্ষ টন। ২০২১ সালে গোটা ফ্রান্সের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণের সমান এই অঙ্ক। ফল, শাকসবজি, চিনিতে ফসলহানি গড়ে প্রতি বছর ১ কোটি ৬০ লক্ষ টন। ২০২১ সালে ভারত ও মেক্সিক মিলিয়ে উৎপাদিত মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্যের প্রায় সমান। মৎস্যচাষ, বনজ সম্পদের হিসেব ধরলে লোকসান আরও বেশি।
শেষ তিন দশকে নিম্ন, নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কৃষিক্ষেত্রে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ, সেই দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনের জিডিপির ১৫ শতাংশ। ছোট ছোট উন্নতশীল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিও এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার পরিমাণ তাদের কৃষিভিত্তিক জিডিপির ৭ শতাংশ।
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বা ’ফাও’-এর ডিরেক্টর জেনারেল কু ডঙ্গি বলেছেন, ‘‘কৃষিক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে চলতে হয়। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়লে তা খাদ্য সুরক্ষাকে নষ্ট করে।’’
বিগত কুড়ি বছরে গুরুতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪০০। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০০। কৃষকরা বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিপদের পূর্বাভাস অনুযায়ী সক্রিয় ও সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। একটি রিপোর্ট বলছে আগাম সতর্কতা ও দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে ১ ডলার করে বিনিয়োগ করলে গ্রামের পরিবার গুলি ৭ ডলার পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারে।
দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে মূলত তিনটি কাজকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ‘ফাও’-র রিপোর্টে। এক, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষিক্ষেত্রে যে প্রভাব পড়েছে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা। দুই, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মোকাবিলাত নির্দিষ্ট সরকারি কর্মসূচি রাখা। তিন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো।
বিপর্যয় রোধে সতর্ক না হলে খাদ্য সুরক্ষায় গুরুতর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা ‘ফাও’-র।
Comments :0