মালিকরা মনে করে রাজ্যের সরকারও তাদের। আইন ভেঙে সব ধরণের শোষণ চালাতে পারে শ্রমিকদের। এদিন পুলিশের ভূমিকায় ফের তা স্পষ্ট।
তৃণমূল সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে এই মর্মে সরব হয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। বুধবার সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, সহ ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করেন শ্রমিক ভবনে।
তাঁরা বলেছেন মোদী সরকারের শ্রম কোডের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিতে মরিয়া মোদী এবং দিদি, দু’জনের সরকারই। এই ধর্মঘট দু’জনকেই বুঝিয়েছে শ্রমজীবীরা কী চাইছেন। আশাতীত সাড়া মিলেছে ধর্মঘটে।
বুধবার যাদবপুরে এসএফআই নেতা সডজন ভট্টাচার্য সহ সহ ধর্মঘটের পক্ষে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কলকাতায় সৃজন সহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা চাপানো হয়েছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি অনাদি সাহু, সম্পাদক জিয়াউল আলম সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে দেশের অন্য কোথাও কোনও রাজ্য সরকার এভাবে ধর্মঘট ভাঙতে হামলা চালায়নি। তবু যেভাবে অংশ নিয়েছেন শ্রমিক কর্মচারীরা, আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন যে চটকলে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ১ লক্ষ কর্মীকে স্থায়ী করা, চা বাগানে বোনাস এবং ন্যূনতম মজুরি, ১০০ দিনের কাজ চালু, স্থায়ী কাজে স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের পরের পর্ব শুরু হবে দ্রুত।
এদিন বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। সল্টলেক করুণাময়ীতে পিকেটিংয়ের সময় পুলিশের হামলায় পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে একাশি বছরের বৃদ্ধা রমা রুদ্রের। এই হামলারও তীব্র নিন্দা করেছেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেছেন, এই সরকার মহিলাদের সম্ভ্রম বাঁচাতে পারে না। কলেজে ধর্ষণ করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। ১৪ আগস্ট আরজি করে নিহত চিকিৎসক হত্যার সব অপরাধীদের বিচারের দাবিতে ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে সকল অংশ নেওয়ার আহ্বানও জানান তাঁরা।
ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন এদিন চটশিল্পে প্রায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক অংশ নিয়েছেন। ব্যাঙ্ক ও বিমার মতো আর্থিক ক্ষেত্রে রাজ্যে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের ওপরতলা থেকে আধিকারিক পাঠিয়ে জোর করে গেট খুলিয়েছে তৃণমূল সরকার।
এদিন রাজ্যে কয়েকশো জায়গায় অবরোধ-বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রেন এবং বাস রাস্তায় শামিল হয়েছেন ধর্মঘটিরা। সংযুক্ত কিসান মোর্চা, ছাত্র-যুব-মহিলা সহ সব অংশ যোগ দিয়েছেন ধর্মঘটে।
অনাদি সাহু বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ধাপ্পা দিচ্ছেন এই বলে যে রাজ্যে শ্রম কোড লাগু হবে না। শ্রম আইন তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। এখন দেশে কোড লাগু হলে রাজ্যেও হবে। আর রাজ্যে যেভাবে শ্রম আইন ভেঙে শোষণ হচ্ছে তা অভাবনীয়।
ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন যে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কয়লায় ৪৪ শতাংশ যোগ দেন ধর্মঘটে। চটে ৯০ শতাংশ, পাহাড়ের বাইরে চা শিল্পে ৬০ শতাংশ, গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ৪৫ শতাংশ, বিড়ি শিল্পে ৬৫ শতাংশ ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন।
এনটিপিসি চুক্তি শ্রমিকদের ১০০ শতাংশ, বিপিসিএল এবং এইচপিসিএল ৭০ শতাংশ, ইন্ডিয়ান অয়েল এবং হলদিয়া রিফাইনারিতে ৩০ শতাংশ অস্থায়ী ও ১০ শতাংশ স্থায়ী যোগ দেন ধর্মঘটে।
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ, বিমায় ৮৫ শতাংশ ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। বেসরকারি পরিবহণে ৬০ শতাংশ, ওলা উবর ও অ্যাপ ভিত্তিক পরিবহণে ৭০ শতাংশ, স্থানীয় টোটো অটো চালকদের ৫০ শতাংশ ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ।
Strike TU Leadership Bengal
সৃজন সহ ১১ জনের নামে খুনের চেষ্টার মামলা, পুলিশের হুজ্জুতির তীব্র নিন্দা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের

×
Comments :0