কেবল মনোনয়ন পত্র তুলতে গিয়েছিলেন। তার জন্য রক্তাক্ত হতে হলো কোতুলপুরের সৈয়দ তৌদুল ইসলামকে। যুব আন্দোলনের শহীদ মইদুল ইসলামের সঙ্গী ছিলেন তিনি। বৃদ্ধা মা’কে প্রস্তাবক করে অবরুদ্ধ কোতুলপুরে মনোনয়ন তুলেছেন তৌদুল।
ব্লক দপ্তরের এক কিলোমিটার ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ব্লক দপ্তরেই অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী।
বুধবার বৃদ্ধা মা-কে প্রস্তাবক করে ডিসিআর কেটে মনোনয়নপত্র তুলে নিয়ে আসেন কোতুলপুরের খেতমজুর নেতা সৈয়দ তৌদুল ইসলাম (মুন্না)। তার পরই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ঘিরে রেখেছে এই বাহিনী। গোটা কোতুলপুরে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বুধবারই প্রথম এই একটি মনোনয়ন তোলা হলো।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকেই তৃণমূল দুষ্কৃতীবাহিনী বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানা এলাকাজুড়ে টহল দিতে থাকে। বামফ্রন্টের প্রার্থীদের কোথাও ফোন করে, কোথাও সরাসরি গিয়ে হুমকি দিতে থাকে। হুমকি দেওয়া হয়, কোনমতেই লাল ঝান্ডার প্রার্থী হওয়া চলবে না।
সোমবার সকাল থেকেই কোতুলপুরে সিপিআই(এম) কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তৃণমূলবাহিনী। বামফ্রন্টের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাঁদের সশস্ত্র বাহিনী আটকে দেয়। তিনজন সিপিআই (এম) কর্মীকে মারধর করা হয়। সবই হয়েছে পুলিশের সামনে। পুলিশকে বারে বারে হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হলেও নীরব ছিল। তার পর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে আছে কোতুলপুর সিপিআই (এম) কার্যালয়।
সৈয়দ তৌদুল ইসলাম, শহীদ মইদুল ইসলামের সঙ্গী ছিলেন। কলকাতার রাজপথে যুবনেতা শহীদ মইদুল ইসলামের উপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার সময় তাঁর পাশেই ছিলেন তৌদুল ইসলাম। সেই প্রাক্তন যুব নেতাই বুধবার তাঁর বৃদ্ধা মা রিজিয়া খাতুনকে প্রস্তাবক করে নিয়ে গিয়ে কোতুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৫ নম্বর সরোজবাসিনী বুথে মনোনয়নপত্র তোলেন।
ডিসিআর কাটার সময়ই ব্লক দপ্তরের ভেতরে থাকা তৃণমূল বাহিনী কোতুলপুর থানার ওসির সামনেই তৌদুলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁকে ধরে আছাড় মারে। তাঁর মা কে লক্ষ্য করে অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ চলতে থাকে। কোতুলপুর থানার ওসি এই অবস্থায় জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেবে তৌহিদুল। তখন তৃণমূলেরই একটি অংশ হুমকি দেয়, ‘ওসি বাঁচাতে পারবে তো’।
নিজে রক্তাক্ত হয়ে সামনে মায়ের অপমান দেখেও পালিয়ে আসেননি তৌদুল। ডিসিআর কেটেছেন, মনোনয়নপত্র তুলে এনেছেন। তাঁর মা-ও সাহসের সঙ্গে ছেলের পাশে ছিলেন। যতই বাধা আসুক, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেনই কোতুলপুরের তৌহিদুল ইসলাম।
বুধবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই কোতুলপুরে তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক মারপিট শুরু হয়। শাসকদলের কোতুলপুর কার্যালয়ে একে অন্যকে মাটিতে ফেলে মারধর করতে থাকে। দু’পক্ষই মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জির জয়গান করতে করতে একে অপরকে পেটাতে থাকে।
শুক্রবার থেকে কোতুলপুর অবরোধ করে রাখা তৃণমূলের মস্তানবাহিনীর নেতা সাদেক আলি খাঁকে বেধড়ক পেটায় দলের কর্মীরা। ভাঙা হয় অফিসের টেলিভিশন সেট, চেয়ার টেবিলও। কোতুলপুরের মানুষের সামনেই প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটে।
Comments :0