বিরোধী নেতাদের সংসদ সদস্যপদ খারিজ করতে মানহানি মামলার রাস্তা নিয়েছে বিজেপি। রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ কাড়ার নিন্দায় এ কথা বলেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
পলিট ব্যুরো বলেছে, রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ করতে যে অতি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে তা আসলে সমালোচনা শুনতে অসহিষ্ণুতার মাত্রাকেই স্পষ্ট করে। স্পষ্ট করে বিজেপি’র কর্তৃত্বাবাদী আচরণকে।
রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজের পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সোমবার বিবৃতি দিয়েছে পলিট ব্যুরো। দিল্লিতে ২৫এবং ২৬ মার্চ পলিট ব্যুরোর সভা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে আদানির বিপুল সম্পদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ আড়াল করতে মরিয়া বিজেপি। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং কর্পোরেট আঁতাতের যে পর্ব ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে আদানিকে ঘিরে তা ফের সামনে এনেছে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট। আদানিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ডাক দিয়েছে পলিট ব্যুরো।
সংসদ অচল করায় বিজেপি’র ভূমিকার তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি বিনা আলোচনায় বাজেট পাশের নিন্দা করেছে পলিট ব্যুরো
৫ এপ্রিল দিল্লিতে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুরদের সমাবেশ। এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি ফের জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। দিল্লি পৌরসভা, হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোট এবং পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পরাজয়ের পাশাপাশি বিজেপি’র তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়ার বাস্তবতায় জোর দেওয়া হয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, বিরোধী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ কায়দায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে যথেচ্ছ অপব্যবহার চলছে অনেকদিন থেকেই। সাংসদপদ খারিজ করার ঘটনা তারই অনুসারী।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে, ফোর্বসের তালিকায় কেন্দ্রে মোদী সরকার আসীন হওয়ার সময়ে সময় আদানি গোষ্ঠীর মূলধন ছিল ৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের শেষ পর্বে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে তারা বিশ্বে ধনীদের তালিকায় ৬০৯ স্থানে ছিল, গত বছর তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। এমন উত্থান কার্যত উল্কাগতির সাথেই তুলনীয়।
পলিট ব্যুরো বলেছে, নির্লজ্জ কায়দায় বিজেপি সরকার আদানিদের যাবতীয় অপকীর্তিকে ঢেকে রাখতে চাইছে। জনসাধারণের কষ্টে উপার্জিত সম্পত্তি জমা রাখা স্টেট ব্যংক অফ ইন্ডিয়া ও লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশনের মতো সংস্থা হতে এরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ করেছে। এদের বিরুদ্ধে কোনোরকম তদন্ত যাতে না হয় সেটাই বিজেপি চাইছে। আদানি গোষ্ঠী ও বিজেপি- একে অন্যের মধ্যে সম্পর্ক যে অনেকটাই গভীরে সরকারের আচরণেই তা স্পষ্ট।
পলিট ব্যুরোর দাবি, আদানিদের যাবতীয় অপকীর্তির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি নিযুক্ত করতে হবে। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের হুজ্জুতিতে কারণে সংসদের আলোচনা বন্ধ হয়ে রয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল প্রসঙ্গে লন্ডনে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে অজুহাত করে সংসদ অচল করা হচ্ছে। আসল উদ্দেশ্য কোনও আলোচনা ছাড়া কোনও রকমে কেন্দ্রীয় বাজেট পাশ করিয়ে নেওয়া।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে পলিট ব্যুরো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গো-রক্ষার নামে দুষ্কৃতীদের হাতে মুসলিম যুবকদের খুন হতে হচ্ছে। একাধিক রাজ্যে গির্জায় আক্রমণের ঘটনা সামনে আসছে, খৃষ্টান, বিশেষত, আদিবাসী খৃষ্টানদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। যে সকল রাজ্যে নির্বাচন সামনে, সেখানেই ইতিহাসকে বিকৃত চেহারায়
সংসদে কোনও আলোচনা ছাড়াই ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটকে পাশ করিয়ে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনমন, কর্মসংস্থান, জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি একটি বিষয়েও এই বাজেটে কোনও সমাধান নেই। অথচ ধনীদের আরও বেশি কর ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি অক্সফ্যামের প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতে সর্বোচ্চ ধনীদের ১ শতাংশের হাতে শেষ দু বছরে উৎপাদিত মোট সম্পদের ৪০.৫ শতাংশ কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন বাজেট সংকট আরও বাড়িয়ে তুলবে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, এলপিজি’র সিলিন্ডারের দাম আবারও বেড়েছে। এর ফলে জনসাধারণের উপরে খরচের বোঝা আরও বাড়বে। বেকারি ও ক্ষুধার সমস্যা যখন দেশে ক্রমশ ভয়ানক চেহারা নিচ্ছে তখনই এমন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না।
নতুন অ্যাপ বাধ্যতামূলক করে রেগাকে ধ্বংস করার প্রয়াসের নিন্দা করেছে পলিট ব্যুরো। এই ্যাপ বাতিলের দাবি তুলেছে পলিট ব্যুরো।
পলিট ব্যুরো বলেছে, গুজরাটে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখলেও হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা এবং দিল্লিতে পৌরসভার নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়েছে। গত পনেরো বছর ধরে তারা দিল্লি পৌরসভা বিজেপি’র হাতে ছিল।
উত্তর-পূর্বেও ১৮০টি বিধানসভা আসনের (ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়) মধ্যে বিজেপি মাত্র ৪৬টি আসনে জয়ী হয়েছে। ত্রিপুরায় তাদের বিধায়কের সংখ্যা ৪৬ থেকে কমে হয়েছে ৩২। পুনের কসবা আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। আসনটিতে গত দু’দশক যাবত বিজেপি জয়ী হলেও এইবার কংগ্রেসের (এমভিএ জোটপ্রার্থী) কাছে পরাজিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘি আসনে উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে আসনটিতে তৃণমূল কংগ্রেস টানা জয়ী হলেও এইবার বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভোটে বিজেপি’কে পরাজিত করে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়। এবারের নির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর তেইশ হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূলকে পরাজিত করেছেন। বিজেপি তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে।
ত্রিপুরা প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, নির্বাচনে বিজেপি নিজেদের প্রত্যাশামত ফল পায়নি। তাই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই তারা বিরোধীদের উপরে আক্রমণ হামলা চালাতে শুরু করেছে। এই সমস্ত আক্রমণে সিপিআই(এম)’ই প্রধান লক্ষ্য। পলিট ব্যুরো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া এমনকি গরিব জনসাধারণের জীবনজীবিকার উপকরণ যেমন রিকশা ও অন্যান্য তিন চাকার যান ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ফসল (বিশেষত রবার চাষ) পুড়িয়ে দেওয়া, পুকুরে বিষ দেওয়ার মতো ইতিমধ্যেই হাজারেরও বেশি ঘটনা সামনে এসেছে।
সিপিআই(এম), সিপিআই ও কংগ্রেসের তরফে সাতজন সাংসদদের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল ত্রিপুরায় সন্ত্রাসের পরিস্থিতি বিচারে উপস্থিত হলে আরএসএস-বিজেপি’র তরফে তাদের উপরে হামলা চলে। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল, তাদের সামনেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি সরকারের আমলে ত্রিপুরার চিত্র এই ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
২০ মার্চ দিল্লির রামলীলা ময়দানে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতৃত্বে কিষাণ মহাপঞ্চায়েত হয়েছে। ১২ মার্চ মহারাষ্ট্র কিষাণ সভার ডাকে তৃতীয় বারের জন্য নাসিক থেকে মুম্বাই পর্যন্ত লঙ মার্চ হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎকর্মীরা ব্যাপক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। একাধিক কর্মচারী ইউনিয়নের সমবেত আহ্বানে সংগঠিত ধর্মঘটের ফলে রাজ্যের বিজেপি সরকার শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবী মেনে নিতে বাধ্য করিয়েছেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীবৃন্দ সহ বিভিন্ন প্রকল্প শ্রমিকরা একজোট হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের অধিকার আদায়ে ধর্মঘটের সংগ্রামে অবিচল রয়েছেন।
পলিট ব্যুরো জানিয়েছে যে আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল দিল্লিতে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে।
Comments :0