ডাঃ গোপাল দাস
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, রোগ না থাকাটাই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। অথচ, বাস্তবে চিকিৎসা হাসপাতাল ওষুধ এসবই স্বাস্থ্যের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বা সার্বিক ধারণায় একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। শুধু অসুখ থেকে মুক্ত থাকা নয়, শারীরিক, মানসিক, সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার নামই স্বাস্থ্য— স্বাস্থ্য সম্পর্কে এটাই সর্বজনস্বীকৃত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা। বাস্তবিক 'চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু' এ আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা। সুস্থ, সবল কর্মক্ষম মানুষই উন্নয়নের কারিগর। অসুস্থতা শুধু শারীরিক ও মানসিক অবনতিই ঘটায় না, শ্রমদিবস নষ্ট করে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে উৎপাদনে, উন্নয়নে। অথচ বলা হয়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় নাকি অনুৎপাদক ব্যয়!
ব্যক্তিমানুষের সুস্থতা নির্ভরশীল পরিবারের ও পারিপার্শ্বিক মানুষের সুস্থতার উপর। কোভিড অতিমারীর সময়ে এই কথার যথার্থতা মানুষের মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। তাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সুস্থতার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিমানুষের সুস্থতা। সমাজের সব মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক স্বাস্থ্যের ভাবনাই জনস্বাস্থ্য ভাবনা।
কিছু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও কিছু স্বাস্থ্য কর্মসূচিকেই জনসাধারণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে দায় সারা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য কোনও দয়ার দান নয়, স্বাস্থ্য মানুষের অধিকার। আমাদের দেশের সংবিধানে স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার হিসাবে আজও স্বীকৃত নয়। কিন্তু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার জন্য রাষ্ট্র যেমন দায়বদ্ধ থাকার কথা, স্বাস্থ্য রক্ষায়ও রাষ্ট্রের দায় আছে। স্বাস্থ্যের অধিকার 'আমাদের দেশের সংবিধানের ২১ নং ধারায় উল্লিখিত 'জীবনের অধিকার ' এর অবিচ্ছেদ্য অংশ - মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে একথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন।
"স্বাস্থ্যের অধিকার' এর কথা প্রথম উল্লিখিত হয়, ১৯৪৬ সালে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধানে বলা হয়, সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য অর্জন জাতি, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।
স্বাস্থ্যের অধিকার কোনও বিমূর্ত বিষয় নয়, সমস্ত মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যেমন এর আবশ্যিক প্রয়োজনীয়তা, ঠিক তেমনি সকলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিরাপদ সুপেয় পানীয় জল, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর দূষণমুক্ত পরিবেশ, প্রয়োজনীয় ওষুধ, সকলের জন্য কাজ ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা, সকলের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য শিক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদি এর অন্যতম সামাজিক পূর্বশর্ত। আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়। আমাদের দেশের সংবিধানের ৪৭ নং ধারায়ও এর উল্লেখ আছে। মানুষের সার্বজনীন অধিকারের ঘোষণায়ও এগুলি উল্লিখিত হয়েছে। মা ও শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার কথাও এই ঘোষণায় বলা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার 'আলমা আটা' শহরে ১৩১টি দেশের (ভারত সহ) উপস্থিতিতে '২০০০ সালের মধ্যে সকলের জন্য স্বাস্থ্য' সংক্রান্ত যে ঘোষণাপত্র, সেখানেও এগুলি জোরের সঙ্গে বলা হয়েছে।
মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে সরকারের স্বাস্থ্যনীতিতে। আমাদের দেশের প্রথম 'জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি' ঘোষিত হয় ১৯৮৩ সালে, আলমা আটা ঘোষণার পাঁচ বছর পরে। এই স্বাস্থ্যনীতিতে 'আলমা-আটা' ঘোষণার কিছুটা প্রতিফলন ঘটে পুষ্টি, নিরাপদ পানীয় জল, বাসস্থান, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ইত্যাদি বিষয়গুলি স্থান পায় এই স্বাস্থ্যনীতিতে। সার্বিক স্বাস্থ্যের লক্ষ্যে এই স্বাস্থ্যনীতি কিছুটা দিক নির্দেশ করলেও যথেষ্ট অর্থবরাদ্দ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই নীতি দিশাহীন হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাঙ্ক আশির দশক থেকেই রাষ্ট্রকে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ভূমিকা থেকে সরিয়ে আনার পরামর্শ দেয় ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয়কে অনুৎপাদক ব্যয় হিসাবে চিহ্নিত করে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের পরামর্শ দেয়। বিশ্বায়নের নাম করে আমাদের দেশেও বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে ওষুধ শিল্পে ও চিকিৎসাক্ষেত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন সুবিধা দেয়। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়া সহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির পতনের পর এক মেরু বিশ্বে এই প্রবণতা আরও গতি পায়। আমাদের দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, পটপরিবর্তনও ঘটে। স্বাস্থ্যনীতিতে এর প্রভাব পড়ে। আলমা আটা ঘোষণার সার্বিক স্বাস্থ্যের ধারণা থেকে সরে আসে আমাদের দেশের সরকার। চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির সুযোগ গ্রহণ করার সুবিধা করে দেওয়া হয় কর্পোরেট পুঁজিকে। ২০১৭ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পরিষ্কার করে বলা হয়, আমাদের দেশে বেসরকারি পুঁজি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপুল লগ্নি করার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তাই বেসরকারি পুঁজিকে সুযোগ করে দিতে হবে। কর্পোরেট পুঁজি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে চিকিৎসা ও রোগনির্ণয় ক্ষেত্রে এমনকি মেডিক্যাদল শিক্ষায়। বিরাট বিরাট কর্পোরেট হাসপাতাল, রোগনির্ণয় কেন্দ্র ও বহু মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠতে থাকে দেশের নানা প্রান্তে ওষুধ শিল্পে দেশীয় সংস্থাগুলিকে হটিয়ে জায়গা করে নেয় বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলি। মুনাফার পাহাড় জমে কর্পোরেটের ভাণ্ডারে। অন্যদিকে পরিকাঠামোর অভাবে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা, কোথাও আবার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের নামে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অনুপ্রবেশ ঘটছে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর। আবার সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোর উন্নতিতে বিনিয়োগ না করে স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার নাম করে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অর্থ জোগানোর ব্যবস্থা চালু হলো।এমতাবস্থায় আমাদের দেশের স্বাস্থ্যের চালচিত্রে দ্রুত বদল ঘটছে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
আমাদের দেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ জাতীয় গড় আয়ের ১ শতাংশের আশেপাশে, যা হওয়া উচিত ৫ শতাংশ (আমেরিকা, কানাডা, কিউবা, ব্রাজিল ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ৮.৫২, ৮.০৭, ১০.১৩, ৩.৯১ ও ১.৯৩ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত শ্রীনাথ রেড্ডি কমিশনের সুপারিশ ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে ওই বরাদ্দ ৩.৫ শতাংশে নিয়ে আসা ও স্বাস্থ্য বজেট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ অর্থ প্রাথমিক স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা। ক্ষুধার সূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১১১। দারিদ্রসূচকে ১৩৪, লিঙ্গ সাম্যের নিরিখে ১৪৬ টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১৩৫তম।
২০২৪-২৫ সালে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প 'জল জীবন মিশন'-এ বরাদ্দ হয়েছিল ৬৭,০০০ কোটি টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে মাত্র ২২,৬৯৪ কোটি টাকা। 'স্বচ্ছভারত অভিযান' প্রকল্পে বরাদ্দ ১২,১৯২ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের বাজেটের পর অপরিবর্তিত। ফলতঃ ১৬ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার নেই, ৪০ শতাংশ গ্রামের মানুষ পরিস্রুত পানীয় জলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ৬০ শতাংশ গ্রামের মানুষের বর্জ্য নিষ্কাশনের সুবিধা নেই। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী শিশু, কিশোর, কিশোরী, গর্ভবতী মা, ১৫-৪৯ বৎসর বয়সের মহিলা এমনকি পুরুষদের মধ্যেও রক্তাল্পতার হার ঊর্ধ্বমুখী। ৬-৯ মাস বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতার হার ৫৮.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭.১ শতাংশ আর ১৫-১৯ মাস বয়সিদের ক্ষেত্রে ৫৩.১ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭.০ শতাংশ। পাঁচ বছরের নীচে গুরুতর অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে খর্বকায় ও অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুর সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩২.১ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে, বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা অর্থাৎ খর্বকায় শিশু ৩৫.৫ শতাংশ, গুরুতর অপুষ্টি আক্রান্ত ৭.৭ শতাংশ।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসার সরঞ্জাম ইত্যাদির অভাবে পরিষেবা তলানিতে ঠেকছে, অন্যদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতাল ও মেডিক্যা ল কলেজ; মেধা নয়, অর্থই যেখানে মূল অর্থাৎ ফেলো কড়ি, মাখো তেল। স্বাস্থ্যের জন্য মাথাপিছু খরচের ৪৭.০৭ শতাংশই তাই মানুষকে পকেট থেকে দিতে হচ্ছে, এর মধ্যে ওষুধের জন্যই খরচ হচ্ছে ৬০-৭০ শতাংশ। বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়। ওষুধের দাম হচ্ছে আকাশছোঁয়া, ভেজাল ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ছেয়ে যাচ্ছে বাজার, অথচ শাসক দলের তহবিলে চাঁদা দিলে সাত খুন মাফ। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য বিপন্ন, মানুষ অসহায়।
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের বিপন্নতাও ক্রমবর্ধমান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে পুরুষদের মধ্যে ১৩.৯ শতাংশ ও মহিলাদের মধ্যে ৭.৫ শতাংশ কোনও না কোনও মানসিক অসুখে ভুগছে। শহরাঞ্চলেও নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে এই হার বেশি। ৯.৮ মিলিয়ন মানুষের, যারা ১৩-১৭ বছর বয়সি তাদের মানসিক অসুস্থতায় দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। ১৮ বছর বয়সের উর্ধ্বে আত্মহত্যার প্রবণতার প্রচণ্ড ঝুঁকি ০.৯ শতাংশের আর মোটামুটি ঝুঁকি ০.৭ শতাংশের। মহিলাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।
পরিবেশ দূষণজনিত অসুখও ক্রমশঃ বাড়ছে। বায়ুদূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যাচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ইত্যাদি বাড়ছে। পাথর খাদানে কাজ করা মানুষদের সিলিকোসিস, কয়লাখনিতে কাজ করা মানুষদের নিউমোকোনিওসিস ইত্যাদি শ্বাসনালীর অসুখ বাড়ছে, কারণ কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দূষণের ফলে হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির সম্ভাবনাও বাড়ছে। ফুসফুস, শ্বাসনালী, স্তন ইত্যাদির ক্যানসার ক্রমবর্ধমান। স্নায়ুরোগ যথা অ্যালজাইমার, পারকিনসনিজম ইত্যাদি অসুখও দূষণের ফলে বাড়ছে। বাড়ছে চামড়ার অসুখ, পেটের অসুখ, অ্যালার্জি, বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সংক্রমণ ইত্যাদি। শব্দদূষণের ফলে কমছে শ্রবণশক্তি, বাড়ছে ঘুমের ব্যাঘাতজনিত অসুখ এবং হার্টের অসুখ। স্বভাবতই আজকের যুগে পরিবেশ দূষণ শুধু জীববৈচিত্র নষ্ট করছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে এবং আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তন, ভূমিকম্প ইত্যাদিই ঘটাচ্ছে না জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে হাজির হয়েছে।
আজকের এই পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন শুধু মানুষকে রোগ সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যেই পরিচালিত হবে না, স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা ও সে সম্পর্কে মানুষকে আন্দোলনে শামিল করা; স্বাস্থ্যনীতির অভিমুখ পরিবর্তন করে জনমুখী করা অর্থাৎ কর্পোরেট ও বহুজাতিক পুঁজির স্বার্থে স্বাস্থ্যনীতি পরিচালিত না করা, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রক্ষা ও উন্নত করা, ওষুধ শিল্পে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ দেওয়া ও বহুজাতিকদের অবাধ মুনাফার স্বার্থে ওষুধ শিল্পকে পরিচালিত না করা, মানসিক স্বাস্থ্যে বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা, তথাকথিত উন্নয়নের নামে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলিও জনস্বাস্থ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে আজ হাজির হয়েছে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, বয়স্কদের স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে বাড়তি গুরুত্ব আরোপও আজ সময়ের দাবি। এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও মানুষকে সমবেত করে আন্দোলন গড়ে তোলাই আজকের দিনে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন। বিদ্বেষের রাজনীতিকে পরাস্ত করে জাত-ধর্ম-বর্ণের বেড়া ভেঙে সব মানুষকে এই আন্দোলনে শামিল করতেই হবে আগামী দিনের সুস্থ মানুষ, সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে।
১৯৮৮ সালের ৯ মে (২৫ বৈশাখ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে জনস্বাস্থ্য কমিটির সূচনা হয়েছিল। সেই সংগঠন ৩৭ বছর অতিক্রান্ত করার পথে।এই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছ জনস্বাস্থ্য কমিটি।
Comments :0