বিভাগীয় বিমা কর্মচারি সমিতি, জলপাইগুড়ির উদ্যোগে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি মিত্র সম্মিলনী হলে অনুষ্ঠিত ‘নব্য উদারবাদী আর্থিক নীতি ও লিঙ্গ বৈষম্য’ বিষয়ক এই সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদিকা দীপ্সিতা ধর।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দীপ্সিতা ধর বলেন, দেশকে বিক্রি করে দেবার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র সরকার। ব্যাঙ্ক, বীমা, রেল সহ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলোকে বেঁচে দিতে চাইছে দেশের সরকার। সরকারের এই প্রচেষ্টাকে রুখে দেবার প্রচেষ্টা যারা করেছে তাদের মধ্যে বিভাগীয় বিমা কর্মচারি সমিতি অন্যতম। এই লড়াই আমাদের সকলের লড়াই। শুধু শিলিগুড়ি নয়, শিক্ষা বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও দাবিতে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে জাঠা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বত্রই এসএফআই শিক্ষা বাঁচানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। মোদী সরকারের শিক্ষানীতির দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থা। এই এনইপি নীতির দরুন গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে পড়াশুনা করা থেকে বঞ্চিত হবে। ধীরে ধীরে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আম্বানি আদানিদের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত করছে কেন্দ্রের মোদী সরকার এনইপি ২০২০ শিক্ষানীতির মাধ্যমে। এই সময়কালে ড্রপ আউটের সংখ্যাও বেড়েছে। নয়া শিক্ষানীতি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়েছে। আমাদের দাবি অবিলম্বে এই গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশুনা করতে পারে, তারাও যাতে শিক্ষা গ্রহনের অধিকার পায় সেইে কারণে এনইপি ২০২০ বাতিল করতে হবে। ওরা চায় না গরীবের ঘরের বাচ্চারা শিক্ষিত হোক। ভবিষ্যতে এই বাচ্চারাই যাতে প্রশ্ন করতে না পারে তারজন্য শিক্ষাটাই ওদের জন্য তুলে দিতে চাইছে সরকার।
tতিনি আরো বলেন, সমানাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে দেশের সংবিধান। সংবিধানকে সারা দেশে কার্যকরী করতে হলে শিক্ষা জরুরী। দেশের সরকার সাংবিধানিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানছে। পঞ্চানন বর্মা, মাতঙ্গিনী হাজরার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা প্রথম থেকে পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে আজও সমানাধিকার নেই। শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই সমানাধিকারের প্রভাব পড়ছে ব্যাপকভাবে। ছেলে সন্তান হলে শিক্ষিত হবে। আর মেয়ে সন্তানরা আজও শিক্ষার আঙ্গিনায় পৌঁছাতে পারছে না। মেয়ে সন্তানের জীবনের অধিকার পুরুষের হাতে। তাই আজও কন্যা ভ্রুন হত্যার মতো অন্যায় কাজ হয়ে থাকে। এখনও অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন মেয়েরা সমাজের জন্য বোঝা। এই চিন্তাভাবনার শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। মেয়েদের সার্বজনীন শিক্ষার উপর গুরুত্ব করেন তিনি। বলেন, মেয়েদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। দেশকে বাঁচাতে এই সময়ে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বিমা কর্মী হিসেবে সব আন্দোলন একসাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য দুই স্বৈরাচারী ও জনস্বার্থবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আরো সোচ্চার হতে হবে। দেশকে বাঁচানোর এই লড়াই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।
এদিনের সেমিনারের শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন পূর্বাঞ্চল বীমা কর্মচারী সমিতির সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি গাঙ্গুলী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দেবব্রত চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় বিমা কর্মচারী সমিতি জলপাইগুড়ি সাধারন সম্পাদক সৈকৎ চৌধুরী, ডিভিশনাল ইনস্যুরেন্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সুব্রত ঘোষ, ১২ই জুলাই কমিটির মনোজ নাগ প্রমুখ।
Comments :0