STORY — COMRED | JOYDEB BOSE — MUKTADHARA | 22 APRIL 2024

গল্প — কমরেড | জয়দেব বসু | মুক্তধারা — ২২ এপ্রিল ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  COMRED  JOYDEB BOSE  MUKTADHARA  22 APRIL 2024

গল্প

কমরেড
জয়দেব বসু

মুক্তধারা

কে এই মিস্টার ------ ? বলবার আগে আরেকটা গল্প শোনাই। 
১৯১০-১১ সাল। ফ্রান্সের রাজধানী পারি শহরের একটা বিস্ত্রোয় (রেস্টুরেন্টে) নিয়মিত আড্ডা দিতেন চিত্রকর পাবলো পিকাসো, কবি-নাট্যকার-চিত্রপরিচালক জঁ ককতো, কবি গিয়োম আপোলিনেয়ার, এইরকম অনেকে। সবারই বয়স তখন কম, কেউ বিশেষ পাত্তা দেয় না, কিছুটা ফ্যা ফ্যা করেই ঘুরে বেড়ান আর বিস্ত্রোয় আড্ডা দেন। হঠাৎ একদিন ককতো লক্ষ করলেন, ওঁদের পাশের টেবিলে এক ভদ্রলোক রোজ এসে চুপ করে বসে থাকেন আর মন দিয়ে ওঁদের কথা শোনেন। দেখেই বোঝা যায় লোকটির টাকাপয়সা বিশেষ কিছু নেই। আরো যেটা মনে হয়, ভদ্রলোক যেন অকালেই বুড়িয়ে গেছেন। এমনই চেহারা। রোজ এরকম দেখতে দেখতে ককতো একদিন জিজ্ঞাসা করেই বসলেন, আপনার কী করা হয় মশাই? ছবি আঁকেন, না গল্প-কবিতা লেখেন? তিনি বললেন-না, লিখিও না, আঁকিও না। তবে লেখা বা আঁকা নিয়ে আপনারা কী ভাবেন তা জানার খুব ইচ্ছে আমার। তাই বসে বসে আপনাদের কথা শুনি। 
ককতো শুধোলেন, তাহলে করেনটা কী আপনি? আপনার কাজ কী? ভদ্রলোক বললেন, আমার কাজ? আসলে আমার কাজ হলো ভাবা। আমি বসে বসে ভাবি। 
সে কী! শুধু ভাবে? বিস্মিত ককতো বললেন, কী নিয়ে ভাবেন? লোকটি বললেন, জানেন তো, আমার দেশে অত্যাচারী সম্রাট-এর শাসন। আমি ভাবি, কী করে সেই অত্যাচারের উচ্ছেদ করে আমার দেশের লোকদের সুখেস্বচ্ছন্দে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। লোকটা নির্ঘাৎ পাগল-ককতো ভাবলেন। নইলে দোর্দণ্ডপ্রতাপ
সম্রাটের শাসন উচ্ছেদের কথা ভাবে। অবশ্য বিস্ত্রোগুলোতে এমন পাগল প্রায়ই দেখা যায়। ফলে, ককতো আর কথা না বাড়িয়ে নিজের টেবিলে গিয়ে বসলেন। তারপর কবে থেকে যে সেই পাগল বিস্ত্রোতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, সে আর কারো খেয়াল নেই।
সাত থেকে আট বছর কেটে গেছে। ককতো - আপলিনেয়ার - পিকাসো সকলেরই অল্পবিস্তর নামডাক হয়েছে। এমন সময়, ককতো একদিন খবরের কাগজে পড়লেন রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের খবর। সঙ্গে একটা ছবি। ঠাহর করে দেখলেন, আরে-এ সেই পাগলটার ছবি না? দেখেই কাগজ নিয়ে ছুটে গেলেন পিকাসোর কাছে। বললেন, উলিয়ানভ নামে সেই লোকটার কথা মনে আছে? আরে, সেই যে বিস্ত্রোয় বসে আমাদের তর্ক শুনত আর রুশ বিপ্লবের কথা ভাবত। সত্যি সত্যিই সে রাশিয়ায় ফিরে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে হে! 
এই উলিয়ানভ্ লোকটির পুরো নাম হলো-ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর ইনিই হন নতুন রাষ্ট্রের প্রথম কর্ণধার-সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশের অসংখ্য বিপ্লবীর প্রেরণা।

ইনিই লেনিন।

[ জয়দেব বসু'র লেখা থেকে সংগ্রীহিত নির্বাচিত অংশ ]

Comments :0

Login to leave a comment