বিজেপি-তৃণমূলের শোরুমে বিজেপির প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে। দু’দলই বেকারির প্রশ্নে, জীবিকার প্রশ্নে নীরব। দু’দলই বিভাজন করে, নিয়ন্ত্রণ করে আরএসএস। আম্বানি-আদানির এক হাত মোদী, অন্য হাত ধরেছেন মমতা ব্যানার্জি। নকল বিরোধী সাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিভ্রান্ত না হয়ে মানুষের জীবন যন্ত্রণার প্রশ্নে আরো সোচ্চার হতে হবে। রবিবার কাঁচড়াপাড়ায় এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
কাচড়াপাড়ার কলেজ মোড়ে প্রবাহ সংলগ্ন ময়দানে প্রয়াত পার্টি নেতা সুবোধ রায়, কমরেড অমূল্য উকিল, কমরেড জগদীশ দাস, কমরেড বাবলু রক্ষিত, কমরেড বৃন্দাবন দাস, কমরেড সুশীল ঘোষাল চৌধুরীর স্মরনসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভাতেই মহম্মদ সেলিম বলেন- মুকুল রায়, অর্জুন সিংদের দেখুন। কখন কোন দলে এরা থাকবে কেউ জানে না। তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে নকল বিরোধিতা চলছে। তিনি বলেন, এরাজ্যে বিজেপি’কে বাড়তে সাহায্য করেছে মমতা ব্যানার্জি। বামফ্রন্টের সরকারের মেয়াদে এই রাজ্যে বিজেপি মাথা তুলতে পারেনি। এখন এত বিজেপি এল কোথা থেকে? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো তৃণমূলে থাকাকালীন মমতা ব্যানার্জির জন্য টাকা জোগার করতেন। কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলে নেতা নিয়ে এসেছিলেন। একটা কোম্পানির শোরুমের আরেকটা কোম্পানির মাল বিক্রি হচ্ছে। আরএসএস-তৃণমূলের শোরুমে বিজেপির প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে।
এই স্মরণসভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সি পি আই এম রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী চ্যাটার্জী,সত্যসেবী কর,দেবাশীষ রক্ষিত সহ নেতৃবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টিনেতা কল্যান মুখার্জি।
মহম্মদ সেলিম বলেন, দেশ ও রাজ্যে দুটো সরকারই দেশবিরোধী ও জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। মোদী সরকারের শাসনে দেশের কর্পোরেটদের সম্পদ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের স্বার্থে কোনো কাজ করছে না। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে এই বিভাজনের শক্তি। বিজেপির চালিকাশক্তি আরএসএস। মমতা ব্যানার্জি তো আরএসএসের ঘোষিত দুর্গা। বেকারি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দুই দলই নাগপুরের কথায় চলে। দুই সরকার নীরব কর্মসংস্থানের প্রশ্ন। এ রাজ্যে গত এক দশকে একটি কারখানাও হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কাঁচড়াপাড়ার রেল কারখানার ঘোষণা করেছিলেন, কী হয়েছে? যুবসমাজ কাজ চায়। রুটি রুজির লড়াই থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে জাতপাতের রাজনীতি সামনে আনা হচ্ছে। বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। রাজ্যে মমতা ব্যানার্জিও একই পথে চলছে।
এদিনই রাজ্যের টেট পরীক্ষা ছিল। এর আগে তিনটি টেটেই দুর্নীতি। সেলিম বলেন- চিটফান্ড, নারদ ঘুষকান্ডের দুর্নীতির মত নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত ম্যানেজ করে বাঁচার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তৃণমূল চাকরি বিক্রির কারখানা করেছে। অযোগ্যরা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছে। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরির দাবি নিয়ে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা মানুষকে নিয়ে রাস্তায় রয়েছে।
তিনি বলেন বামপন্থীরা মানুষের দাবি আদায়ের লড়াইয়ের জন্যই মানুষকে সমবেত করছে জেলায় জেলায়। সাড়াও মিলছে। ওদিকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল ও বিজেপি বোমা, বন্দুক, ত্রিশূল জড়ো করছে। বোমা ও বন্দুকের রমরমায় প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ শিশু থেকে কিশোরের। দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এই বাংলা। তৃণমূলের দলদাসে পরিনত হয়েছে এই রাজ্যের পুলিশ।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে বলেন, পৌরসভার পৌরপ্রধানকে সিবিআই’র হেফাজতে থাকতে হয়েছে। তাদের সম্পত্তির বহর বেড়েছে। সিপিআই(এম) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃনাল চক্রবর্তী বলেন শোষণ, বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই প্রয়াত কমরেডরা লড়াই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এরা মানুষের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে। দুই শক্তির বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এখন, সেই কাজই চলছে।
Comments :0