কাজ চেয়েছিলেন প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ যুবক। তাঁদের ৫ শতাংশকে কাজ দিয়েছে পঞ্চায়েত।
রাজ্যের ১৮ থেকে ৪০ বছরের গ্রামবাসীদের প্রতি মোদীর সরকার এবং ‘দিদি’র সরকারের এই অবদান উঠে এসেছে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সাম্প্রতিক পর্যালোচনায়।
কোটি কোটি টাকার তাঁবু খাটিয়ে জেলা সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। সেই যুবক বুধবার বীরভূমে বলেছেন যে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা আদায় করতে তিনি নয়াদিল্লিতে অবস্থান করবেন। প্রয়োজনে সেই অবস্থান হবে অনির্দিষ্টকালীন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন যে, এই পরিস্থিতিতেও তাঁর সরকার রেগার কাজ করিয়েছে।
কেমন কাজ হয়েছে, তার প্রমাণ রাজ্যের প্রতিটি ব্লকেই ছড়িয়ে আছে। তারই মধ্যে ভাঙড়ের ২টি, সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম-১নং ব্লক দু’টি উদাহরণ।
কতটা ভয়ঙ্কর অবস্থা ভাঙড়ের দু’টি ব্লকের দিকে তাকালে বোঝা যায়। সেখানে রেগায় নথিভুক্ত যুবর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮৮৪ জন। কাজ পেয়েছেন ১৪৭০জন— অর্থাৎ ১.৫%।
সিঙ্গুরে রেগার প্রকল্পে নাম আছে প্রায় ২৫ হাজার যুবকের। গত আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০২২-২৩’এ কাজ পেয়েছেন ৫২০ জন। সিঙ্গুর ব্লকে ১৬টি পঞ্চায়েত। তার ৫টি’তে একজন যুবকও রেগায় কাজ পাননি।
নন্দীগ্রামে? বিজেপি’র পরিষদীয় দলনেতা সেখানকার বিধায়ক। আর মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনী এজেন্ট সেখান থেকে নির্বাচিত হয়ে জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি হয়েছেন। নন্দীগ্রাম বিধানসভার সিংহভাগ এলাকা নন্দীগ্রাম-১নং ব্লক। সেই ব্লকে রেগায় নথিভুক্ত যুবক আছেন ৩১ হাজার ১৭১জন। কাজ পেয়েছেন? ৪৯৯জন— অর্থাৎ মোট যুবকের ১.৬%।
১৮ বছর বয়স হলে রেগায় কাজের জন্য নাম নথিভুক্ত করা যায়। রেগার ২০১৩-র ‘অপারেশনাল গাইডলাইন’-এর ৩.১.২ ধারা অনুসারে বছরের যে কোনও সময় গ্রামবাসী কাজ করতে চেয়ে পঞ্চায়েতে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। তাঁকে অবশ্যই ‘স্থানীয়’ হতে হবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হতে হবে। এই ক্ষেত্রে যে পরিবার কিংবা ব্যক্তি কাজের খোঁজে অন্যত্র যান কিন্তু আবার সেই পঞ্চায়েতে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে, এমন গ্রামবাসীও কাজের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
একটি সাদা কাগজে সেই নথিভুক্ত করা, অর্থাৎ কাজ চাওয়ার আবেদন করতে হয়। বাড়ির একজন সেই আবেদন করেন। আবেদনে পরিবারটির কাজ চাওয়া প্রত্যেকের নাম লিখতে হয়। সেই হিসাবে বর্তমানে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েতের কাছে কাজ চেয়ে নাম নথিভুক্ত করে থাকা যুবর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি।
১৮ থেকে ৪০ বছরের গ্রামবাসীদেরই যুব অংশ হিসাবে ধরা হয়। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘রাজ্যে গত আর্থিক বছরে ৫ লক্ষ ৮৭ হাজারের কিছু বেশি যুবক রেগায় কাজ পেয়েছেন।’’
কাজ পাওয়া এই অংশ নথিভুক্ত যুবকদের ৪.৯%।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে রেগায় কাজের জন্য নথিভুক্ত গ্রামবাসীর সংখ্যা ৩ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭৭হাজার ৪১৩। আর যুবকদের সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬৫৪ জন। অর্থাৎ রেগায় নথিভুক্ত যুবকরা প্রায় ৩১%।
রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের দাবি, যুবকরা একশো দিনের কাজ করতে খুব একটা আগ্রহী হন না। কিন্তু রাজ্য সরকারেরই তথ্যে সেই অজুহাত ধোপে টিকছে না। রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের পর্যালোচনা রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে রেগার কাজে নথিভুক্ত যুবর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮’র মার্চে, অর্থাৎ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে রাজ্যে রেগার কাজে নথিভুক্ত যুবকরা ছিলেন ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৪৫ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে রেগার কাজের জন্য নথিভুক্ত যুবকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ লক্ষ।
২০১৮-১৯’এ রাজ্যে রেগায় কাজ করেছিলেন ২৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৫৯ জন। অর্থাৎ নথিভুক্ত যুবকদের প্রায় ২৫% কাজ পেয়েছিলেন রেগায়— রাজ্য সরকারেরই দাবি তাই।
রেগার কাজের প্রয়োজন বেড়েছিল যুবকদের। কাজের আশায় তাঁরা রেগার কাজে নাম নথিভুক্ত করেছেন। বিশেষত করোনা এবং লকডাউনের সময় সেই প্রবণতা বেশি হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
Comments :0