১৪ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ বিরোধী সাংসদদের পক্ষ থেকে বুধবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতির দাবি জানানো হয়। শাহের বিবৃতির দাবিতে তারা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পাল্টা স্লোগান দেওয়া হয় বিজেপি সাংসদদের পক্ষ থেকে।
কংগ্রেসের ন’জন সাংসদ, সিপিআই(এম) এর দুজন, সিপিআইয়ের একজন এবং ডিএমকের দুজন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিপিআই(এম) এর পিআর নটরাজন এবং এস ভেঙ্কাটেশনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রাজ্যসভাতেও একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদরা। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়নকে সাসপেন্ড করেন চেয়ারম্যান। রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ কেসি বেনুগোপাল এক্সহ্যান্ডেলে লিখেছেন যে, ’১৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা সম্পূর্ন অগনতান্ত্রিক এবং নিন্দনীয়। যেই সাংসদের পাশের মাধ্যমে দুজন লোকসভায় ঢুকলেন তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কেন নেওয়া হলো না? যেই সাংসদরা সংসদের সরকারের বিবৃতি দাবি করলেন তাদের কিসের ভিত্তিতে সাসপেন্ড করা হলো?’
বুধবার ছিল ২০০১ সালে সংসদ ভবন হামলার ২২তম বর্ষপূর্তি। তারমাঝেই দেখা যায় ১ যুবক লোকসভার দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে সংসদের মধ্যে প্রবেশ করেন। লোকসভা টিভি’র সম্প্রচারে গোটা দৃশ্য ধরা পড়ে। দেখা যায় সেই যুবক জুতোর ভিতর থেকে স্মোক বোম্ব ব্যবহার করে গোটা হলজুড়ে ঝাঁঝালো হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন।
লোকসভায় ঢুকে স্মোক বোম্ব ব্যবহারকারী ২ যুবকের পরিচয় সামনে এসেছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। জানা যাচ্ছে সাগরকে লোকসভার দর্শক গ্যালারিতে ঢোকার সুপারিশপত্র দিয়েছিলেন কর্ণাটকের মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা। অপরদিকে মনোরঞ্জন ডি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার বলে উঠে এসেছে।
অপর যুবক গ্যালারির রেলিং ধরে ঝুলতে থাকেন। সংসদের হলের মধ্যে ঢুকে পড়া যুবককে ধরতে তৎপর হন সাংসদরা। কাবাডি খেলার মত করে এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে লাফিয়ে স্পিকারের দিকে এগোতে থাকেন এক যুবক। কিছুক্ষণের চেষ্টায় তাঁকে ধরে ফেলেন উত্তর প্রদেশের বিজনোরের বিএসপি সাংসদ মালুক নাগর এবং রাজস্থানের নাগৌরের আরএলপি’র সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল।
এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেন সাংসদরা। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ডিম্পল যাদব জানিয়েছেন, ‘‘কার্যত একে অপরকে ডিঙিয়ে হলের বাইরে বেরিয়েছি আমরা। পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’’
এর কিছু পরে লোকসভার মার্শালরা এসে দুই যুবককে আটক করেন। দু’জনে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরই মাঝে লোকসভার বাইরে এক মহিলা এবং এক যুবক স্মোক বোম্ব ফাটান। তাঁদেরও গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। এই দুজনের নাম নীলম এবং আনমোল শিন্ডে। নীলম হরিয়ানার বাসিন্দা এবং আনমোলের বাড়ি মহারাষ্ট্রের লাতুরে।
ধৃতদের ‘জয় ভীম’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। একইসঙ্গে মোদী সরকারের ‘তানাশাহি’ বা স্বৈরাচারী আচরণের বিরোধীতাও করেন তাঁরা। একইসঙ্গে মণিপুরের মহিলাদের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েও স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা।
পেশার সূত্রে নিয়মিত লোকসভায় যেতে হয় সাংবাদিকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ৫-৬ দফায় নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে তবেই সংসদের মূল কক্ষে ঢোকা যায়। পেন, মানিব্যগের খুচরো পয়সা, মোবাইল সহ বহু জিনিস নিয়ে ঢোকা যায়না সদনের ভিতরে। দর্শকাসনে বসতে গেলে কোনও না কোনও সাংসদের সুপারিশ লাগে। সুপারিশ পত্রে সাংসদের সই এবং তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হয়। এত দফার সুরক্ষা বলয় থাকার পরেও এই ঘটনা ঘটল। এরফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
Comments :0