চিন্ময় কর- মেদিনীপুর
মেদিনীপুর শহরের গেট বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই ৮ টি দোকান সহ ঘর বাড়ি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু এক শিশুর। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মেদিনীপুর শহরের রেল লাইন সংলগ্ন উড়াল পুলের দক্ষিণে গেট বাজারে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটনাটি ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বাজারের মধ্যে থাকা ৮টি দোকান ও ঘর বাড়ি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে একাটি অংশ উড়ে এসে আঘাত লাগে এক নাবালকের গায়ে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার। পুলিশ সূত্রে জানা যায় মৃত শিশুর নাম প্রভাস জানা(৮)। স্থানীয় রাঙামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আগুন লাগার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এলাকার মানুষ। আসে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন বলে প্রাথমিক অনুমান দমকলের।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য প্রথমে মিষ্টি দোকানে আগুন লাগে। তা থেকে একের পর এক ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুদের তুলে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। স্কুল পড়ুয়ার দেহ ছিন্নবিছিন্ন হয়ে যায়। একদিকে আগুনে সর্বস্ব পুড়ে সর্বশান্ত অপর দিকে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের আবহ নেমে এসেছে। এদিন দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই শিশুর দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
মৃত শিশুর দাদু টুলু রানা বলেন, ‘‘রাতে তার কাছেই নাতি ঘুমিয়েছিলো। হঠাৎ ফ্যান থেকে গরম হাওয়া ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অস্বস্তির মধ্যে ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা ছেড়ে উঁকি দিলে দেখতে পান পাশের মিস্টি দোকান টা দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুহুর্তের মধ্যে তার পাশে ও পিছনে আরো দুটো দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ততক্ষণে পাশাপাশি ঘর গুলো থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। ঘুমন্ত শিশুদের টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করেন সবাই। তিনিও বাড়ির সবাইকে ডেকে তুলে নাতিকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হন। সেই সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে তার একটি অংশ উড়ে আসে। তার নাতির বুকে আঘাত করে। শরীর ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায় চোখের সামনে। অল্প বিস্তর তার হাতেও আঘাত লাগে। তখন আগুন আরো বিধ্বংসী আকার নেয়। একের পর এক বাড়ি একসাথে জ্বলতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা দাবানলের মতো জ্বলতে থাকে। জল নিয়ে কাছে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না।
ভষ্মীভূত হয়ে যায় মিষ্টি দোকান সহ আরও ৭টি দোকান। খবর পেয়ে ভোর ৪-টা নাগাদ দমকলের ৩টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যদিও, ততক্ষণে সব শেষ!
মৃত শিশুর দেহ উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেনন। মৃত নাবালকের জেঠিমা মঞ্জু রানা জানান, ‘‘আমরা বড়রা ছুটে পালিয়ে গেলেও, নাতিটাকে ঘুম থেকে তুলে বাইরে বের করতে সময় কিছুটা চলে যায়।’’
নিহত শিশুর বাবা শোকস্তব্ধ বাপন বলেন, ‘‘আমি সবজি আড়তের কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তখন সাড়ে তিনটা মতো হবে। মেদিনীপুর স্টেশন থেকে হাওড়া যাওয়ার ভোর চারটা লোকাল ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে এমন ঘটনা ঘটে। ফোন পেয়ে ছুটে এসে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ততক্ষণে সব শেষ!’’
Comments :0