800 TEACHER TO LOOSE JOB

৮০০-র বেশি চাকরি বাতিল করছে এসএসসি

রাজ্য কলকাতা

Recruitment scam west bengal tmc bengali news

রাজ্যের তৃণমূল সরকার বৃহস্পতিবার কার্যত মেনে নিল, যোগ্যদের বঞ্চিত করে বেআইনিভাবে অযোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের পদে। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বেআইনিভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষকের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টে তা প্রমাণিতও হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর বাড়িয়ে এদের চাকরি দেওয়া হয়। সংখ্যাটা ৮০০-র বেশি। এদের চাকরি যেতে চলেছে বলে এদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিন এসএসসি’র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘নবম-দশমের ২০১৬ সালের শিক্ষকদের তালিকা থেকে ‘অযোগ্য’ ৮০০-রও বেশি শিক্ষকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে পর্যায়ক্রমে। আগামী সপ্তাহেই জারি হবে এই সংক্রান্ত নোটিস।’’ ২০১৬ সালে এসএসসি’র নবম-দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের তালিকায় মোট ৯৫২ জনের অযোগ্যর নাম ছিল। সেই তালিকার বহু প্রার্থীর ক্ষেত্রে সার্ভার এবং ওএমআর শিটে প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে ব্যাপক ফারাক ধরা পড়েছে। এসএসসি সূত্রে খবর, কারও কারও নম্বরের ফারাক ৫৩। 

সেই তালিকা দেখে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এসএসসি-কে প্রশ্ন করেছিলেন, এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন? বৃহস্পতিবার সেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই জানানো হলো এসএসসি’র পক্ষ থেকে। এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিল এসএসসি।

স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রের খবর, কমিশনের আইনের ১৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে নিয়োগপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করবে এসএসসি। হলফনামা দিয়ে এসএসসি আদালতকে জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে ৮০০ জনেরও বেশি শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হবে। 

এসএসসি’র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের বিধিতে আছে, ১৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে সুপারিশপত্র বাতিল করা যায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মর্মে আদালতে হলফনামা জমা দিই। সেখানে আমরা জানিয়েছি, এই প্রক্রিয়া আমরা অবশ্যই শুরু করতে রাজি আছি। ৮০০’র সামান্য বেশি সংখ্যাটি আমরা পেয়েছি, যাদের সুপারিশপত্র বাতিল করতে পারি আমরা। নোটিস দিয়ে কাজ শুরু করব আগামী সপ্তাহ থেকে।’’

এর আগেও ১৮৩ জন অযোগ্যর চাকরি বাতিল করেছে এসএসসি। তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল এসএসসি। ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষকের পদে ওই ১৮৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল মমতা ব্যানার্জি পরিচালিত তৃণমূল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুল সার্ভিস কমিশন। 

সেই বেআইনি সুপারি‍‌শে নিযুক্তদের তালিকায় ছিলেন ২১ জন বাংলার শিক্ষক, ৫৭ জন ইংরেজির, ৩০ জন ভূগোলের, ১৭ জন ইতিহাসের, ২২ জন জীবন বিজ্ঞানের, ১৮ জন অঙ্কের এবং ১৮ জন ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরই এসএসসি তালিকা প্রকাশ করে ১৮৩ জনের চাকরি বাতিল করেছিল। এর সঙ্গে আরও ৮০০ জন যুক্ত হচ্ছেন, যাদের চাকরি যেতে বসেছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অযোগ্যর চাকরি যেতে বসেছে, যাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে পরিচালিত তৃণমূল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এসএসসি।

এই এক হাজার জনের চাকরি যাওয়ার ক্ষেত্রে সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে ওএমআর শিটে। ওএমআর শিটে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দেন এক পরীক্ষার্থী। নম্বর পান পাঁচ। তাঁর নামের পাশে বসানো ৫৩ নম্বর। তার নাম রয়েছে এসএসসি’র সুপারিশপত্রে। সিবিআই আরও বলেছে, ‘‘ওএমআর শিটে এরকম অনেক বেনিয়মই হয়েছে। কেউ কেউ ১ নম্বর বা ৫ নম্বর পেয়েছেন, তাদের ৫৩ নম্বর দেওয়া হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, এই নিয়োগ হয়েছিল তখন, যখন শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন কল্যাণময় গাঙ্গুলি। এঁরা তিন জনই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment