MD SALIM AADHAR

লুট রুখতে লড়াই হবে একজোটেই, আহ্বান সেলিমের

রাজ্য জেলা

নাজিরপুর রসুন হাটে স্মরণসভায় শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মহম্মদ সেলিম।

‘‘লুটেরারা লুট করতে চায় তখন ধর্মের নামে ভাগ করে। এই লক্ষ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে, আধার কার্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিল্লি আর নবান্নের লুট রুখতে লড়াইকে একজোট রাখতে হবে।’’   
সিপিআই(এম) নদীয়া জেলার দুই প্রয়াত নেতা কমরেড আজাদ আলি শেখ ও কমরেড বিশ্বনাথ ঘোষের স্মরণসভায় এ কথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। নাজিরপুর রসুন হাটে এই স্মরণসভায় বক্তব্য রেখেছেন নদীয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে সহ নেতৃবৃন্দ।
সেলিম বলেন, ‘‘আমরা যখন গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও বলছি, মানুষ নামছেন, ওরা হিন্দু মুসলমান ভাগ করছে। লুট করেছে একসঙ্গে, তখন শিবু হাজরা আর শাহজাহান শেখের তফাত ছিল? তা’হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই কেন আলাদা করা হবে? যখন মা-বোনেরা একসঙ্গে রাস্তায় তখন তুমি কেন হিন্দু মহিলা মুসলিম মহিলা বলে আলাদা করে দিচ্ছ?’’ 
সেলিম বলেছেন, ‘‘যে মানুষ অধিকার পান না তিনিই তো প্রশ্ন তুলবেন। কেন চাকরি নেই, কেন শিক্ষার সঙ্কট। কেন রেশনমন্ত্রী খাদ্য না দিয়ে লুট করলেন, কেন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে উদ্দার হয় টাকা স্তূপ আর স্কুলে বা মাদ্রাসায় শিক্ষক নেই। কেন স্কুল মাদ্রাসায় শিক্ষকের অভাবে ছোটরা পড়তে পারছে না, তাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে নাকাল হতে হচ্ছে। মোটা টাকা খরচ করে বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসার জন্য ছুটতে হচ্ছে। প্রশ্ন থেকে বাঁচতেই দক্ষিণপন্থা মানুষকে আলাদা করার কৌশল নিচ্ছে বিশ্বজুড়ে।’’ 
কমরেড ঘোষ এবং কমরেড শেখ ছিলেন সিপিআই(এম) নদীয়া সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক ছিলেন কমরেড আজাদ আলী সেখ। পলাশীপাড়া বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন কমরেড বিশ্বনাথ ঘোষ। তাঁদের জীবন স্মরণ করিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘তাঁরা লড়েছিলেন সমতার পক্ষে, অধিকারের পক্ষে। সকলের অধিকার। হিন্দু-মুসলিম, তপশিলি-আদিবাসী, এপার বাংলা-ওপার বাংলা নির্বিশেষে সকলের অধিকারের দাবি তুলেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘বামপন্থীরা অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে। আর দক্ষিণপন্থা অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বামপন্থীদের কাছে অধিকার মানে প্রত্যেকের অধিকার- জাত, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে। বামপন্থীরা তাই জনতার ঐক্যের পক্ষে। যারা অধিকার কেড়ে নিতে চায়, সেই দক্ষিণপন্থাই মানুষকে আলাদা করে।’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘অনেকে লুট আর দুষ্কৃতী দাপট দেখে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন লাল ঝাণ্ডাকে দিয়ে হবে না। ‘ছাপ্পান্ন ইঞ্চি’ লাগবে। বিশ্বনাথ ঘোষ, আজাদ আলি শেখরা কিন্তু নড়েননি। তাঁদের কথা অনেকে শোনেননি। মনে করেছেন নবান্নকে শায়েস্তা করতে হলে ছাপ্পান্ন দরকার। ক’দিন বাদেই আসছে ছাপ্পান্ন। কিন্তু গোটা দেশে তো চলছে বিজেপি’র সরকার, নরেন্দ্র মোদীর সরকার। হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির সম্পত্তি লাফিয়ে বেড়েছে ২০১৪’র পর থেকে। ২০১৪’তেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী।’’
আধার অচল করা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘এখন বলছে ভুয়ো আধার কার্ড। তখন বলেছিল একটা কার্ড হলেই হবে। মোদী আইন করে ফোনের সঙ্গে লিঙ্ক, জব কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক। ব্যাঙ্কের সঙ্গে লিঙ্ক করল। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। আদালত বারণ করল। তা-ও শোনে না। এখন নোটিস পাঠাচ্ছে আপনি দেশে আছেন কেন, আপনার আধার কার্ড বাতিল করা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিল ‘ক্রনোলজি সমঝিয়ে’। প্যাহলে সিএএ, ফির এনপিআর ফির এনআরসি।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ভোটের আগে বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রের মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলছেন আইন চালু করব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন বিকল্প কার্ড দেব। আসলে ধর্মের নামে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ভাগ করার চেষ্টা হলো। কিছু লোককে বেনাগরিক করার চেষ্টা হচ্ছে। বলা হলো মুসলিমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে তাদের ভাগাবো। সব ক্ষেত্রেই ভাগাভাগি। এই রাজনীতি আসলে কাকে বাঁচাচ্ছে? তৃণমূলকে বাঁচাচ্ছে, শাহজাহানকে বাঁচাচ্ছে। তৃণমূলকে বাঁচাতে বিজেপি অপরাধীদের বলছে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা। তৃণমূল অপরাধী বলছে না।’’
সেলিম বলেন, ‘‘এই শুভেন্দু, এই মমতা, এই মুকুল একসঙ্গে বলেছিল লাল হটাও। তা’হলে লুটের বখরা হবে। কালীঘাট ৭৫ ভাগ। মোদী অমিত-শাহ কত ভাগ পাচ্ছে যে চুপ থাকছে?’’

Comments :0

Login to leave a comment