AIAWU 10th conference

গ্রামীণ শ্রেণি ঐক্যেই রুখে দাও বিভাজনের চেষ্টা

জাতীয়

 গ্রামের সবচেয়ে গরিব, সবচেয়ে নিপীড়িতদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেষ হলো সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলন। শনিবার হাওড়ার শরৎ সদনে সম্মেলনের সমাপ্তি পর্বে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি এ বিজয়রাঘবন বলেছেন, গ্রামে শ্রেণি ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটাতে অর্থনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল অংশের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে হবে, তাঁদের সংগঠিত করতে হবে জঙ্গি আন্দোলনের প্রসার ঘটিয়ে। রোজগারহীনের কাজ ও মজুরির দাবিতে, মহিলা ও দলিতদের ওপরে সামাজিক নিপীড়নের প্রতিবাদে আমরাই পারি তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করতে। 


সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের দশম সম্মেলন হাওড়ায় শুরু হয়েছিল গত বুধবার। সেদিনই সম্মেলনে খসড়া সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট। চার দিনে সেই রিপোর্টের ওপরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৭জন মহিলা প্রতিনিধি সহ মোট ৪৩জন প্রতিনিধি আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন। শনিবার সম্মেলনে সেই আলোচনার শেষে বি ভেঙ্কট জবাবি ভাষণ দিয়েছেন এবং তারপরে প্রতিবেদন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বিজেপি সরকারের কর্পোরেট তোষণের নীতিতে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দেশবাসীর দুর্বলতম অংশ খেতমজুররা সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রান্তে অবস্থান করছে এবং তাঁদের প্রতিবাদকে দুর্বল করতে জাত, ধর্ম, ভাষার নামে যে বিভাজনের চক্রান্ত হচ্ছে তা রুখতে গ্রামীণ শ্রমজীবীদের ঐক্যগঠন করে আন্দোলন শক্তিশালী করার ঘোষণা করা হয়েছে সম্মেলন থেকে। 
লক্ষ্য অর্জনের জন্য বি ভেঙ্কট তাঁর জবাবি ভাষণে জোর দিয়েছেন সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে। তিনি বলেছেন, আমাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে, ২০১৯ সালের ৭১ লক্ষ থেকে ২০২২ সালে সাড়ে ৭৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। সংগঠনের প্রসার এবং তার সক্রিয়তা তলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আমরা এক কোটি সদস্য সংখ্যা ছাপিয়ে যাবো এবং দেশের ৩০০ জেলায় কার্যকরীভাবে পৌঁছাবো। এতে খেতমজুরদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে, গ্রামের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, কারিগরদের সঙ্গে তাঁদের ঐক্য গঠন করে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করতে হবে। কোনও বিকল্প পথে গরিবের সমস্যার সমাধান করা যাবে সেই দাবিও উত্থাপন করে আদায়ের লড়াই করতে হবে। লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই গ্রামের শ্রেণি ঐক্য শক্তিশালী হবে।


রাজ্যের পরিস্থিতি অনুসারে নানা ধরনের দাবির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, গ্রামে কাজ নেই, তাই একশো দিনের কাজের দাবিতে লড়াইতে শ্রেণি ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। খেতমজুরদের জমি নেই, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাঙ্ক তাঁদের ঋণ দেয় না, তাই মাইক্রোফিনান্সের হাতে খেতমজুরদের হেনস্তার পরে হেনস্তা হতে হচ্ছে, আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই মাইক্রোফিনান্সকে নিয়ন্ত্রণ করবে না? এই দাবিতেও খেতমজুরদের সংগঠিত করতে হবে। চাষযোগ্য সিলিং বহির্ভূত এবং খাস জমি বণ্টনের দাবিতে লড়াই করতে হবে। সর্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা, গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করে তার সুযোগ গরিবের কাছে পৌঁছে দিতে আন্দোলন করতে হবে। 
একই সঙ্গে সামাজিক বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে খেতমজুর ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, গ্রামীণ সর্বহারা খেতমজুরদের সিংহভাগই দলিত, আদিবাসী। মহিলারা ব্যাপক সংখ্যায় খেতমজুরি করেন কিন্তু সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র রাজনীতিতে তাঁদের জীবনের ওপরে আক্রমণ বাড়ছে। দলিত, আদিবাসী, মহিলাদের সামাজিক অধিকারগুলোও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই না করে গ্রামীণ সর্বহারার ঐক্য সম্ভব নয়। 
বিজয়রাঘবন বলেছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে দেশ। যেখানে আমাদের সংগঠন দুর্বল সেখানে প্রান্তিক মানুষদের ওপরে আক্রমণের প্রতিবাদ করার কেউ নেই। তাই এখনই সংগঠনের প্রসার ঘটাতে হবে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আরও তীব্র করতে আগামী ৫ এপ্রিল শ্রমিক সংগঠন এবং কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচিতে দিল্লিতে সংসদ অভিযান হবে, তাতেও ব্যাপক সংখ্যায় খেতমজুররা অংশগ্রহণ করবেন।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটি থেকে এবার অব্যাহতি নিলেন প্রবীণ নেতা হান্নান মোল্লা এবং সুনীত চোপড়া। অব্যাহতি নিয়েছেন কর্ণাটকের প্রবীণ নেতা নিত্যানন্দ স্বামীও। এদিন সম্মেলন মঞ্চেই তাঁদের সংবর্ধিত করা হয়েছে। ৩০ বছর ধরে খেতমজুর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা হান্নান মোল্লা বলেছেন, খেতমজুর ইউনিয়ন একটি শ্রেণি সংগঠন, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া তাঁদের শোষণমুক্তি নেই। সেই পথে এগতে গেলে গ্রাম ও শহরের সব শ্রমজীবী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই তীব্র করতে হবে। খেতমজুর ইউনিয়নকে আন্দোলনের স্বাধীন শক্তি অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমজীবী অংশের সঙ্গে ঐক্য দৃঢ় করতে হবে, যৌথ আন্দোলন করতে হবে। বর্তমানে যে কঠিন পরিস্থিতি তাতে ফ্যাসিবাদী আক্রমণ মোকাবিলায় সক্রিয় অন্যান্য অংশকেও একজোট করে পাশে নিতে হবে। যতই প্রচার হোক, মোদী যে অপরাজেয় নয় তা প্রমাণিত হয়েছে ৫০০ কৃষক সংগঠনের এমন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। সেই পথ থেকে শিক্ষা নিয়ে এগতে হবে। 


হাওড়া জেলায় প্রায় দশ হাজার স্বেচ্ছাসেবক পরিশ্রম করেছেন খেতমজুর ইউনিয়নের এই সর্বভারতীয় সম্মেলনকে সফল করতে। এদিন সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে ভাষণ দিয়েছেন অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক পরেশ পাল। সম্মেলনের সভাপতিমণ্ডলীর পক্ষ থেকে সম্মেলন আয়োজকদেরও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এদিন এসএফআই’র হাওড়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment