Satanic

শ‌য়তানি

সম্পাদকীয় বিভাগ

ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই সম্ভব ভোটে জেতাটাই এখন বিজেপি’র একমাত্র লক্ষ্য। সেই জয় যদি চূড়ান্ত অনৈতিকভাবেও হয় তাতেও তাদের আপত্তি নেই। মোদী-শাহরা বুঝে গেছেন মুখে বিশ্বজয় করলেও এবং প্রচারের ঢক্কানিনাদে তুফান উঠলেও সরাসরি স্বচ্ছ পথে নৈতিক সংগ্রামে বিরোধীদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। নিরপেক্ষ রেফারির অধীনে দু’পক্ষের সব খেলোয়াড় যদি মাঠে নামে মোদীর সব গ্যারান্টিই হাওয়ায় উবে যাবে। তাই আগে থেকে আঁটঘাট বেঁধে মোদী দল সরকারকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করে বিপক্ষের নেতাদের মাঠের বাইরে রেখে নীরব করে রাখার ছক কষেছে। নানা রকমের দুর্নীতির অভিযোগগুলির ধুলো ঝেড়ে বার করে বিরোধী দলের নেতাদের টার্গেট করা হয়েছে। ইডি, সিবিআই, আয়কর দপ্তর সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির আরএসএস অনুগামী অফিসারদের মাধ্যমে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। চাপ বাড়িয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, এমনকি গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হচ্ছে। লক্ষ্য এইসব বিরোধী নেতাদের নির্বাচনী ময়দান থেকে সরিয়ে ফেলা। আর ময়দানে থাকলেও তাদের আক্রমণের ধার ভোঁতা করে দেওয়া। সর্বশেষ তাদের দল বদলিয়ে বিজেপি-তে ঢুকিয়ে ফেলা। বিজেপি-তে ঢুকে গেলে তাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ চাপা পড়ে যাবে। তারা ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে বুক ফুলিয়ে গেরুয়া ঝান্ডা বইবেন। কেউ কেউ সাংসদ, বিধায়ক এমনকি মন্ত্রীও হয়ে যাবেন। এরাই যদি চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ময়দান কাঁপাতেন তাহলে তাদের জেল অনিবার্য। যেমন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং সদ্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
লক্ষণীয় এঁদের এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক আগের। এতদিন তদন্ত কচ্ছপের গতিতে এগলেও হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে গতি বেড়ে গেছে এবং বিজেপি’র জয়ের পক্ষের ‘বিপজ্জনক’ বিরোধী নেতাদের তালিকা বানিয়ে ভোট ময়দান থেকে তাদের দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ষড়যন্ত্রেরই বলি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন ও বিধি অনুযায়ী অবশ্যই তদন্ত হবে। দোষ প্রমাণ হলে অভিযুক্ত নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। তাই বলে ভোটের তুলে এমন অতি তৎপরতা হবে কেন? মনে রাখতে হবে যে সব বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে না বা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে না। নির্বাচন ঘোষণার পরই মোদীর তদন্তবাহিনীকে পড়ি কি মরি বলে নামতে হবে কেন।
নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। নির্বাচনে স্বচ্ছতা, সমতা, সমানাধিকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের চাবিকাঠি। শাসক দলের মতো বিরোধীরা প্রচার সহ সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবে। কোনও অবস্থাতেই বিরোধীদের লড়াইয়ের ময়দানে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা যায় না। দেশের প্রধান বিরোধী দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কার্যত ময়দান থেকে বহিষ্কার করারই শামিল। আয়কর আইনে যদি কোনও গরমিল থাকে তবে সেটা নিয়ে ভোটের পর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কংগ্রেস দল তো উঠে যাচ্ছে না। তেমনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শাসক দলের অন্যতম অস্বস্তির মুখ। তাকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিলে মোদীরা ভাবছে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। অতএব তাকে জেলে ভরে দাও। বিজেপি’র অসংখ্য অভিযোগ আছে তাদের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। মধ্য প্রদে‍‌শের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির অভিযোগ আছে। উত্তর প্রদেশে আছে ভূরি ভূরি। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থাগুলি নীরব। উন্মাদের মতো ছুটছে শুধু বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে। তাও আবার ঠিক ভোটের মুখে।

Comments :0

Login to leave a comment