Gaza

গাজায় বেলাগাম নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করছে ইজরায়েল

আন্তর্জাতিক

গাজায় কী চায় ইজরায়েল? দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির বলেছেন, ‘দখল’। পরিপূর্ণ দখল। ইজরায়েলী সংবাদমাধ্যমে বেন-গাভির বলেছেন, ‘পূর্ণ দখল দরকার। যখন মাটিতে থাকবেন কেবলমাত্র তখনই আপনি গোয়েন্দা তথ্য পাবেন, নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাবেন, তখনই আপনি জমির মালিক।’ বেন-গাভির ঘোষিত অতি-দক্ষিণপন্থী, নেতানিয়াহুর সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নেতানিয়াহু স্বয়ং রবিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির কোনও প্রশ্নই নেই। ইজরায়েল গাজা দখল করে তা নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। যখন তখন যাতে ইজরায়েলী সেনারা ঢুকতে পারে, তেমন ব্যবস্থা থাকবে। প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের হাতে গাজাকে দেবার কোনও প্রশ্ন নেই।’ প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ এখন ইজরায়েল-অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের আংশিক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে। যদিও ইজরায়েলী সেনারা ‘যখন-তখন’ সেখানে ঢোকে এবং প্যালেস্তিনীয়দের গুলি করে মারে, গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হেরজগ আবার সংবাদমাধ্যমে এসেছিলেন, হিটলারের আত্মজীবনী ‘মাইন ক্যাম্ফ’ বই নিয়ে। তিনি দাবি করেন, ‘গাজায় শরণার্থী শিবিরে শিশুদের পড়ার ঘরে এই বিয়ের আরাবিক অনুবাদ পাওয়া গেছে। তা থেকেই বোঝা যায় হিটলারের আদর্শে গাজার শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ হেরজগই গণহত্যার সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, গাজায় কোনও নির্দোষ মানুষই থাকে না। প্রকাশ্য, উন্মত্ত, সামরিক এক ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্র হিসাবে ইজরায়েল সামনে এসেছে। 
৭ অক্টোবরের পরে ৫ নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী ইজরায়েল গাজায় ২৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে। ইউরো মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর বিবৃতিতে দিয়ে জানিয়েছে, এই পরিমাণ দুটি পরমাণু বোমার সমান। ৯০০ বর্গ কিলোমিটারের হিরোশিমায় ১৫ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গাজা ৪০০ বর্গ কিলোমিটারেরও কম। প্রতি নাগরিক পিছু ১০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগের এই হিসাবের পরেও ইজরায়েলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইজরায়েল অত্যন্ত শক্তিশালী মারণ-বোমা ব্যবহার করছে। ১৫০ থেকে ১ হাজার কিলোগ্রাম ওজনের বোমা ফেলা হচ্ছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দাবি করেছেন, শুধু গাজা সিটিতেই ১০ হাজার বোমা ফেলা হয়েছে। শুক্রবার ইজরায়েলী সেনাবাহিনী জানিয়েছিল তারা ১৫ হাজার লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করেছে। ইউরো মেড মনিটর বলেছে, ইজরায়েল কী অস্ত্র ব্যবহার করছে তার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। ক্লাস্টার বম্ব বা গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের বোমা এক জায়গায় পড়লে তার চারপাশে থাকা মানুষজনের আঘাত লাগে। শরীরের ভেতরে গিয়ে বিস্ফোরণ হবার মতো বস্তু এই বোমায় থাকে। এই বোমা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। তেমনই সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, যা নিষিদ্ধ। এই বোমায় বিষাক্ত উপাদান থাকে যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে বিপজ্জনক মাত্রায় চামড়া পুড়িয়ে দেয়। এ কারণেই গাজার হতাহতদের উল্লেখযোগ্য অংশ দগ্ধ। এছাড়াও আগুন ধরানোর বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ছবিতেও দেখা গেছে এমন বোমা ছোঁড়া হয়েছে যা বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।  
এদিকে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও ধিক্কার ধ্বনিত হলেও ইজরায়েল হাসপাতালে আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে। আল শিফা ঘিরে ফেলে ৬৫০ জন রোগীকে বের করে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রচার মাধ্যমের কাছে ‘সরিয়ে নেওয়া’ শব্দ ব্যবহার করা হলেও আল-শিফার চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ৬৫০ জনের মৃত্যু ঘোষণার শামিল এই নির্দেশ। সরিয়ে নেওয়া নয়, অস্ত্রের মুখে রোগীদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেবার এই বেনজির নির্দেশ। এই হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগটি বোমায় ধ্বংস করে দিয়েছে ইজরায়েলী সেনারা। দোতলা ভবন ভেঙে পড়েছে। আইসিইউ-তে আবার ইজরায়েলের বোমা পড়েছে। রোগীদের একাংশকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নিয়ে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেছেন, একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। রানতিসি ও টার্কিশ হাসপাতাল থেকে ৩ হাজার ক্যানসার রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনিবার্য মৃত্যু দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এযাবৎ গাজায় নিহতের সংখ্যা ১১,১০০, চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর সংখ্যা যুক্ত হলে তা আরও অনেক বাড়বে।

Comments :0

Login to leave a comment