NDA Meet

বিরোধী ঐক্য দেখে শক্তি প্রদর্শনে এনডিএ বৈঠক ডেকে দিল বিজেপি

জাতীয়

NDA Meet

বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেখে আর তর সইলো না বিজেপি’র। হঠাৎ করে শরিকদের কথা মনে পড়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের। সেকারণে বিরোধীরা যেদিন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় বসতে চলেছে সেদিনই এনডিএ’র বৈঠক ডেকেছে বিজেপি। মঙ্গলবার বিরোধীরা যখন বেঙ্গালুরুতে আলোচনা করবেন আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে কীভাবে হটানো যায় সেই কৌশল রূপায়ণে, সেদিনই সন্ধ্যায় দিল্লির অশোক হোটেলে শক্তি প্রদর্শনে মিলিত হবেন মোদী-শাহ-নাড্ডার সঙ্গে শরিক দলের নেতারা। বিরোধীদের পক্ষে ২৪ দলের সমর্থন আছে দেখে বিজেপি রবিবার দাবি করেছে, তাদের বৈঠকে ৩০ দলের নেতারা হাজির থাকবেন বলে সম্মতি জানিয়েছেন।


খাতায়-কলমে ২৪টি দল আছে বলে জানা যায় এনডিএ-তে। এই ২৪-র মধ্যে বেশ কয়েকটি দল আছে যাদের সক্রিয়তা নিয়ে এনডিএ’র অন্দরমহলেও প্রশ্ন আছে। ফলে সেইসব দলগুলি এতদিন সেভাবে কলকেও পায়নি জোটের ‘বিগ ব্রাদার’ বিজেপি’র কাছে। আবার এমন অনেক দল আছে যাদের সংসদে উপস্থিতিও নেই। কিন্তু কর্নাটক ভোটে কংগ্রেসের কাছে পর্যদুস্ত হওয়ার পর এবং বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেখে টনক নড়েছে বিজেপি’র শীর্ষ নেতাদের বলে মনে করা হচ্ছে। বিপদ বুঝে এখন আবার জোটকে সঙ্ঘবদ্ধ করা এবং সেই দলগুলির সমর্থন পরখ করে নিতেই তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হলো এনডিএ’র। এরই সঙ্গে মাঝে ‘দূরে সরে যাওয়া’ বা অন্য দল ভেঙে ‘নতুন গজিয়ে ওঠা’ দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা যাচ্ছে, কর্নাটকের ভোটে বিপর্যয়ের পর অস্তিত্ব রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ শিবির ছেড়ে এবার বিজেপি’র দিকে পা বাড়াতে চলেছে এইচডি দেবেগৌড়ার জনতা দল(এস)। বিজেপি নেতারা দেবেগৌড়ার ছেলে কুমারস্বামীর সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন বলেও খবর। 
বিহারে নীতীশ কুমারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের পর ওই রাজ্যে জোট ভাঙাতে বা অন্য দলগুলিকে সঙ্গে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে বিজেপি। যে লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-কে ২০১৯ সালে পাত্তা দেয়নি, রামবিলাস-তনয় চিরাগ পাশোয়ানকে মন্ত্রীও করেনি বিজেপি, এখন সেই দলকেও শামিল করতে বৈঠকের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরই সঙ্গে সদ্য নীতীশের সঙ্গ ছেড়ে আসা জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তান আম মোর্চা, উপেন্দ্র কুশওয়ার রাষ্ট্রীয় সমাজ পার্টি এবং মুকেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টি-কে ডাকা হয়েছে বৈঠকে।


বেশ কিছুদিন এনডিএ-তে থাকার পর অখিলেশ সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে চলে গিয়েছিল ওম প্রকাশ রাজভরের সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি (এসবিএসপি)। এখন আবার নানা কিছু আদায়ের প্রতিশ্রুতিতে সেই এনডিএ-তে ফিরে আসতে চলেছেন রাজভর। জানা গিয়েছে, উত্তর প্রদেশে তিনটে লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ছেলেকে যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রীসভায় ঠাঁই করে দেওয়ার দাবি নিয়ে রাজভর বিজেপি’র সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বলে খবর। অবশ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়েই তিনি অখিলেশের সঙ্গে ছেড়ে বিজেপি প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করেন। ওই ওবিসি নেতা তখন বলেছিলেন অমিত শাহ, আদিত্যনাথ এবং স্বয়ং রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মু্র্মুর অনুরোধে তিনি শিবির বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। রাজভর দাবি করেছেন, ‘জনমত এবং জনগণের সমর্থন দিনে দিনে বাড়ছে এনডিএ তথা বিজেপি’র দিকে। ফলে তাদের শামিল হয়ে বড় লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায় তাঁর দল। বিজেপি’র সঙ্গে থাকাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’ আবার উত্তর প্রদেশের মউ জেলার ঘৌসির সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক দারা সিং চৌহান শনিবার ইস্তফা দিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর।
আবার কয়েদিন যাবৎ জল্পনা চলছিল যে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম হয়তো সামনের নির্বাচনে বিজেপি’র পাশে দাঁড়াবে। কথাবার্তা এগলেও বিজেপি শেষ পর্যন্ত অন্ধ্র প্রদেশে ভরসা করছে পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টির ওপর বলে জানা গিয়েছে। এমনকি পাঞ্জাবে শিরোমণি আকালি দল (বাদল)-র সঙ্গেও সমঝোতা হয়নি, এমনই খবর। পাঞ্জাবে একাই লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি বলে জানা গিয়েছে।


মহারাষ্ট্রে এনসিপি ভেঙে শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার এখন হাত মিলিয়েছে বিজেপি’র সঙ্গে। ফলে মহারাষ্ট্রে নতুন শরিক পেল বিজেপি। বস্তুত, লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপি’র এই দলভারীর উদ্যোগেই স্পষ্ট, বিরোধী ঐক্যের জেরে আত্মবিশ্বাসে টাল খেয়েছে গেরুয়া শিবির।
এদিকে, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর দু’দিন আগে জোটের পরিসর বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি বিরোধী বৈঠককে কটাক্ষ করতেও কসুর করছে না বিজেপি। এদিন বিজেপি সভাপতি নাড্ডা দাবি করেছেন, ‘দেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে সুরক্ষা দিতেই একজোট হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ছিল উৎপীড়ন, পক্ষপাতদুষ্ট এবং অত্যাচারী।’ এপ্রসঙ্গেই বিরোধী জোট সম্পর্কে তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘ওটা ‘দেশপ্রেমী গণতান্ত্রিক জোট’ নয় ওটা হলো ‘পরিবারতন্ত্র সুরক্ষা জোট’।’’ কংগ্রেস দলকে আক্রমণ করতে গিয়ে এদিন জয়পুরে নাড্ডা দাবি করেন, ‘ওটা হলো মা-ছেলে-মেয়ের দল’। এরপরেই তিনি মোদী গুণগানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে পাটনা বৈঠকে ১৫টি বিরোধী দল উপস্থিত ছিল। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ২৬টি দল উপস্থিত থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। বৈঠক থেকে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে এনসিপি ভাঙানোর পরিপ্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্রে বড় ধরনের সমাবেশ করার সম্ভাবনা আছে বলে সূত্রের খবর। সোমবার বিরোধীদের বৈঠক শুরু হচ্ছে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ডাকা নৈশভোজ দিয়ে। এরপর ১৮ তারিখ বিরোধীরা বৈঠক করবেন।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment