মিশিগানে গাড়ি শিল্পের ধর্মঘটী শ্রমিকদের পিকেটিংয়ে যোগ দিতে পারেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। এই মর্মে ঘোষণা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ভবন হোয়াইট হাউস থেকে। সেক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথম কোনও মার্কিন রাষ্ট্রপতি যোগ দেবেন সরাসরি আন্দোলনরত শ্রমিকদের পিকেটিংয়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যেই সাড়া ফেলেছে গাড়ি শিল্পের শ্রমিক এবং কর্মীদের এই ধর্মঘট। আন্দোলন সরাসরি আছড়ে পড়েছে বিশ্ব দাপানো তিন গাড়ি নির্মাতা সংস্থার এক কারখানা থেকে আরেক কারখানার গেটে। শ্রমিক বিক্ষোভোর মুখে তিন সংস্থা- জেনারেল মোটর্স, ফোর্ড এবং স্টেলান্টিস।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে যে বাইডেনের ঘুরে আসার পরই মিশিগানে যেতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পও। মিশিগান প্রদেশের ডেট্রয়েট এবং তার শহরতলিতেই কারখানা গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলির। আন্দোলন ছড়িয়েছে এতটাই যে ৩৮টি কারখানার গেটে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন একজোট হয়েছে। ঘেরাও হচ্ছে আমেরিকার কারখানার গেটে। ‘শ্রমিকদরদি’ বার্তা না দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন বাইডেন বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প, কেউ নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না।
২০২৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তার আগে এমন ধর্মঘট রাষ্ট্রপতির পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয়। বাইডেন বলেছেন, ‘‘মিশিগানে শ্রমিকদের পিকেটিংয়ে যোগ দেব। তাঁদের প্রতি সংহতি জানাবো। অটো শ্রমিক ইউনিয়ন সঙ্গত দাবিতে লড়াই করছে। তাঁদের অবদান অনুযায়ী প্রাপ্য মেলা উচিত।’’
গাড়ি শিল্প শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের মঞ্চ ইউএডব্লিউ’র সভাপতি শন ফেন জানিয়েছেন একাধিক দাবিতে এই আন্দোলন। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথমত মজুরি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা উচিত। সপ্তাহে পূর্ণ বেতনে ৩২ ঘন্টা কাজের চুক্তি হওয়া উচিত। ছাঁটাই শ্রমিকদের কি হবে। তাঁদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে গাড়ি নির্মাতাদের।’’
শ্রমিকরা হিসেব দিয়ে দেখিয়েছেন যে তাঁদের দাবি মেনে বেতন দিলেও ফোর্ড বা জেনারেল মোটর্সের বিপুল মুনাফার সামান্য অংশই খরচ হবে। কিন্তু সেটুকুও ছাড়তে রাজি নয় মালিকরা। শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে হচ্ছে, এই বার্তা দিতে নারাজ শিল্প মহলে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র যদিও জানিয়েছেন যে সরকার মজুরি-মুনাফার এই সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেবে না। শ্রমিক সংগঠনই দর কষাকষি চালিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাক, এটাই চাইছে প্রশাসন। আর বাইডেন বলেছেন, ‘‘খারাপ সময়ে গাড়ি শিল্পের শ্রমিকরা অনেক কিছু ছেড়েছেন। পেনশন বাবদ প্রাপ্য ছাড়তে রাজি হয়েছেন তাঁরা। এখন গাড়ি শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের অবদান রয়েছে। তাঁদের প্রাপ্য মেটানো উচিত।’’
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের একাংশে থিওডর রুজভেল্টকে টেনে আনা হয়েছে। বলা হয়েছে ১৯০২ সালে রুজভেল্ট ঐতিহাসিক কয়লা শ্রমিক ধর্মঘটের সময় ভূমিকা নিয়েছিলেন। শ্রমিকদের ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু কোনও রাষ্ট্রপতি সরাসরি আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পিকেটিংয়ে যোগ দেননি।’’
মিশিগান প্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বাইডেন এবং ট্রাম্প দু’জনেই। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের লড়াইয়ে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা। আসীন এবং প্রাক্তন, দুই রাষ্ট্রপতির সক্রিয়তা সেই লক্ষ্যেই।
Comments :0