Sandeshkhali

নাগাল্যান্ড থেকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রর লাইসেন্স জোগাড় করেছিল শাহজাহান

রাজ্য জেলা

প্রবীর দাস: বসিরহাট
শুক্রবার যখন সরবেড়িয়ার মল্লিকপুরে তৃণমূল কর্মী আবু তালেবের বাড়িতে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল কার্তুজ, বোমার ভাণ্ডার ও শেখ শাহজাহানের ছবি দেওয়া আইডি কার্ড উদ্ধার হচ্ছে, সেই সময়েই সন্দেশখালি সামনে এনেছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। 
তৃণমূল নেতা, সন্দেশখালির ‘ত্রাস’ শাহজাহানের সাম্রাজ্যে ওই সব আগ্নেয়াস্ত্রর লাইসেন্স নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর থেকে আনা হয়েছিল। সেগুলিকে বৈধ বলে এখানে চালাতো শেখ শাহজাহান। নাগাল্যান্ডে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রর লাইসেন্স তৈরির চক্রের সঙ্গে তার যোগ ছিল। তাদের মাধ্যমেই ডিমাপুরের একটি বাড়ির ঠিকানা নিজের বলেও দেখাতো শাহজাহান। সন্দেশখালির একাধিক ব্যক্তিকে ডিমাপুরে তার বাড়ি আছে বলে জানাতো শাহজাহান। 
জানা গিয়েছে, সেখান থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জাল আধার ও ভোটার কার্ড বের করা হতো। তা জমা করেই জোগাড় করা হয়েছিল লাইসেন্স। সেই লাইসেন্সে জেলাশাসক ও পুলিশ আধিকারিকদের সই নকল করা হয়েছে। সেই কাগজ দেখিয়েই আগ্নেয়াস্ত্রর দোকান থেকে কেনা হয়েছে বন্দুক, পিস্তল। এই দোকানদারদের সঙ্গে পরিচিতি থাকায় লাইসেন্স যাচাই করা হয়নি। এমনকী অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিয়ে কিনেছে শাহজাহান। যে এলাকার লাইসেন্স, সেখানেই সেই অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য রাজ্যে তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এর বাইরেও বিহার থেকে চোরাপথে প্রচুর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আনাতো শাহজাহান, যা ভোটের সময় তুলে দেওয়া হতো তার বাহিনীর হাতে। জানা গিয়েছে, লাইলেন্স ছাড়াই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করত শাহজাহানের কোবরা বাহিনী। তৃণমূলের যে কোনও কর্মসূচিতে আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত শেখ শাহজাহানের বাহিনী পুলিশের সামনেই ঘোরাঘুরি করত। তৃণমূলের রাজনৈতিক মিছিল ও সভাতেও তাদের দেখা যেত। 
সন্দেশখালির মানুষ যখন বিক্ষোভ শুরু করলেন, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল, এত দিন কেন চুপ ছিলেন তাঁরা? প্রায় ৭ বছর আগে শাহজাহান এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন এলাকার মানুষ। মিছিল, পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ফল কী হয়েছিল? শোনা যায়, আক্রান্ত মহিলার বাড়িতে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। আক্রান্ত মহিলার ছেলের কথায়, ফাইনাল পরীক্ষা সামনে ছিল বলে লেখালেখি করছিল সে। তার হাতে যে পেন ছিল, সেই পেন নিয়ে তার গালের মধ্য দিয়ে ঠোঁটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা! এখানেই শেষ নয়। শাহজাহান বাহিনীর হাতে ছিল অস্ত্র। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, একটু এদিক ওদিক হলেই গুলি চালাতো তারা। প্রতিবাদ করায় অনেকেই ফল ভোগ করেছেন। সেই জন্য আর মুখ খোলার সাহস দেখাননি অনেকেই। ২০১৭ সালে শাহজাহান-বাহিনীর অত্যাচারের কথা আজও ভুলতে পারেননি সন্দেশখালির রাজবাড়ি এলাকার মানুষ। শুক্রবার রাজবাড়ির এক গ্রামবাসী জানালেন, শাহজাহান-বাহিনীর মারে মানসিক ভারসাম্য হারান তাঁর স্ত্রী। ঘটনার পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কী হয়েছিল সেদিন? রাস্তায় তাঁকে কটূক্তি করেছিল শাহজাহান-বাহিনী। প্রতিবাদ করে এক জনের গালে চড় কষিয়েছিলেন সেই গৃহবধূ। পরিণামে জোটে বেধড়ক মার। অভিযোগ, থানার অদূরেই রাস্তায় ফেলে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। সেই মারের জেরে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি, আজও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি সেই মহিলা।
ইতিমধ্যে শেখ শাহজাহান ও তাঁর অনুগামীদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রর লাইসেন্স এবার রাজ্য পুলিশের নজরে। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের ঠিকানায় তৈরি হওয়া লাইসেন্স দিয়ে কীভাবে এখানে আগ্নেয়াস্ত্র কিনত সন্দেশখালির বাদশা, তা নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় সংস্থাও খোঁজ শুরু করেছে। সরকারি অনুমতিপত্র বলে যা দেখানো হয়েছে, তা জাল বলেই প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, শাহজাহানের নিজের কাছেই থাকত চারটি আগ্নেয়াস্ত্র। তার মধ্যে ছিল বিদেশি বন্দুকও। তার অনুগামী, ভাই ও নিরাপত্তা রক্ষীরাও ব্যবহার করত বন্দুক ও পিস্তল। এমনকী জমি দখল করতে, ভোট লুট করতে যাওয়ার সময়েও শাহজাহানের বাহিনীর সবার হাতেই থাকত আগ্নেয়াস্ত্র।
সন্দেশখালির তৃণমূলের নেতা শেখ শাহজাহান গ্রেপ্তার হলেও সন্দেশখালির মানুষের মন থেকে আতঙ্ক পুরোপুরি যায়নি। কারণ, তার বাহিনী এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে।

Comments :0

Login to leave a comment