Duttapukur Blast Compensation

৯ বছরে বিস্ফোরণে নিহত ৭০-র বেশি, দত্তপুকুরে ক্ষতিপূরণের দাবি সিপিআই(এম)’র

রাজ্য জেলা

Duttapukur Blast Compensation দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে গিয়েছে কংক্রিটের নির্মাণও।

তৃণমূল সরকারের মেয়াদে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছেন কেবল ৯ বছরে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের নিরিখে মেলা তথ্য জানাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এবং পরে বহু মৃত্যু হয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের, ঘরে মজুত বোমা ফেটে অথবা বল ভেবে খেলতে গিয়ে। সেই তথ্য এই তালিকায় সবটা নেই। 

রবিবার দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যান সিপিআই(এম) নেতা আহম্মদ আলি খান, পুলক কর, দিলীপ সাহা ও মৃণাল মজুমদার সহ অন্যান্যরা। সিপিআই(এম)’র দাবি, নিহতদের দশ লক্ষ টাকা ও আহতদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ জানান বামফ্রন্ট আমলে এই সমস্ত অঞ্চলে প্রত্যেক বাজি কারখানার ৬ মাস অন্তর পুলিশি নজরদারি চলত। বেআইনি কাজ দেখলে গ্রেপ্তার করা হতো। এখন সেসব উঠে গেছে। ফলে মর্মান্তিক বিস্ফোরণ ঘটছে আর মারা যাচ্ছেন গরিব শ্রমজীবী মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘন জনবসতি পূর্ণ এই অঞ্চলে বাজি কারখানার আড়ালে বোমার কারখানা চালানো হতো। দত্তপুকুরের যেখানে বিস্ফোরণ হয় তা ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোছপুল এলাকা। কারখানা ছিল মোছপুল পশ্চিমপাড়ার ঘনবসতি এলাকায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে দেহাংশ ছিটকে গিয়ে পড়েছে আশেপাশের বাড়িতে। 

সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের টুইট, ‘‘রাজ্য সর্বনেশে বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে! এই দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রকে না ভাঙলে এরকমই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে আমাদের সভ্যতা। তৃণমূলী মুক্তাঞ্চল মানেই পুলিশের-প্রশাসনের নাকের ডগায় বেআইনি কাজ কারবার।’’

সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বারুদের স্তুপে বাংলা। বারাসতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং বহু মৃত্যু। বাজি-বোমার বেআইনি মজুত চলছে। তিন মাস যেতে না যেতেই এগরা, মালদহ, বজবজের পর আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তৃণমূল এবং পুলিশের যৌথ প্রকল্পে আরেকটি মারাত্মক ঘটনা। নেতা মন্ত্রীদের জানিয়েও কোনও সুরাহা নেই। মুখ্যমন্ত্রী কথার কোনও মূল্য থাকছে না! ভয়াবহ চেহারা রাজ্যের।’’

বীরভূমের দুবরাজপুরেও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে এ বছরই। হতাহতের কোনও তালিকা সরকারি স্তর থেকে প্রকাশ করাই হয়নি। তার আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে ঘন বসতি এলাকাতেই বিস্ফোরণে এক মহিলা, এক শিশু সহ ৩ জনের প্রাণ যায়। সেখানে অবৈধ বাজির কারখানা ছিল বলে জানা যায়। এগরায় বিস্ফোরণে কিছু আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই মহেশতলায় আরেক বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন। এই জেলার নোদাখালিতেই ২০২১-এ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ৩ জন। 

বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তালিকা ঘাঁটালে উঠে আসছে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুর, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, হুগলীর মগরাহাটের নামও। নৈহাটিতে ২০২০’তে বিস্ফোরণে নিহত হন ৫ জন, ২০১৯-এ কেশপুরে নিহত হন ১ জন, ওই বছরই কাঁথিতে মারা যান ২ জন, হুগলীর মগরাহাটে মারা যান ৩ জন। ওই ঘটনায় আহতও হন আরও ৩ জন। 

২০১৮’তে উত্তর ২৪ পরগনারই হালিশহরে ৩ এবং ২০১৭’তে আমডাঙায় ৫ জন নিহত হন। ২০১৭’তে চম্পাহাটিতে ১ জন নিহত হন। ২০১৬’তে নীলগঞ্জ এলাকায় ১, বজবজে ২ জনের মৃত্যুর উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। ২০১৫’তে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বিস্ফোরণে নিহত হন ১২ জন। ২০১৪’তে বর্ধমানের ময়নায় ৩, ২০১৩’তে পাঁশকুড়ায় ৩, বর্ধমানের কালনায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই আহত হয়েছেন একাধিক।  

 

Comments :0

Login to leave a comment