Surja Mishra

বুথে বুথে ব্রিগেড গড়তে হবে এখনই, আহ্বান সূর্য মিশ্রের

রাজ্য

শুভাশিষ দেব সরকার - হাওড়া

ভাগ করো, শাসন করো। আরএসএসের নির্দেশিত এই নীতি নিয়েই চলছে বিজেপি। বিজেপি জনগণকে লুট করছে, সর্বনাশ করছে। বিভাজন এনে মোরগের লড়াইতে নামাচ্ছে জনগণকে। মোদী-মমতা দুজনেই মানুষের মনকে বিষাক্ত করছে। আমাদের কাজ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনে এক সভায় কথাগুলি বলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে এদিনের সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, পার্টিনেতা শঙ্কর মৈত্র প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন পার্টিনেতা পরেশ পাল।
মিশ্র বলেন,  আসন্ন লোকসভা নির্বাচন। যেকোনো নির্বাচন সংগ্রাম রাজনৈতিক সংগ্রাম। মোদী সরকারের আমলে প্রতিটি ক্ষেত্র আক্রান্ত হচ্ছে। এবারের নির্বাচন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের রাষ্ট্র নয়া ফ্যাসিবাদী হবে নাকি নিছক বুর্জোয়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্র থাকবে তা এই নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের ওপর নির্ভর করছে। মোদী সরকারকে সামনে রেখে রাষ্ট্র কাঠামোকে বদলাতে চাইছে আরএসএস। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে সূর্য মিশ্র বলেন, মানুষের কাছে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই‌। একটা ব্রিগেড সমাবেশ যথেষ্ট নয়। বুথে বুথে ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে। ভুলে গেলে হবে না তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি আরএসএসের  কাছে গিয়ে বলেছিলেন কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করছেন। আবার আরএসএসের দুর্গা মমতা। দেশে বিজেপিকে হারাতে গেলে তৃণমূলকে রাজ্যে হারাতে হবে।
সাম্প্রদায়িকতার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে মিশ্র বলেন, আরএসএসের অ্যাজেণ্ডা হিন্দুত্ব। হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়। কমিউনিস্টরা মনে করে ধর্ম যার যার বিশ্বাস। কোনো ধর্মকে আঘাত করা কমিউনিস্টদের কাজ নয়। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করছে আরএসএস ও তৃণমূল। মানুষের কাছে গিয়ে ওদের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে‌। আরএসএস ও বিজেপি’র নক্কারজনক ঘৃণার রাজনীতি সম্পর্কে সূর্য মিশ্র বলেন, গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের মূর্তি গান্ধীর চাইতেও বড়। সাম্প্রদায়িকতা ও কর্পোরেট গাঁটছড়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মোদী সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বেসরকারিকরণ হচ্ছে। আদানি-আম্বানিদের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ চলে যাচ্ছে। লুট হচ্ছে শ্রমিকদের শ্রম। প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের আগে বলেছিলেন কালো টাকা উদ্ধার করে সব নাগরিকের অ্যাকাউণ্টে ১৫ লাখ টাকা দেবেন। বছরে দুই কোটি বেকারের চাকরি হবে। পেট্রোলের দাম বেড়েছে। তৃণমূল সরকার বছরে দুই লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জনগণের সর্বনাশ হয়েছে। সন্দেশখালির মত ঘটনা বাড়ছে। জনগণের কাছে গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরএসএস – বিজেপি ও তৃণমূলকে জবাব দিতে হবে।
শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তৎকালীন ইউপিএ ১ সরকারকে সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচির নিরিখে সমর্থন করেছিল বামপন্থীরা। ১০০ দিনের কাজের অধিকার আদায় হয়েছিল। এখন ১০০ দিনের কাজ দেওয়া থেকে বঞ্চিত শুধু নয়, কাজ করিয়ে মজুরী দেওয়া হয় নি। এর দায় কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারকেই নিতে হবে। অবিলম্বে ১০০ দিনের কাজ করেছেন যারা তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তিনি নির্বাচনী বণ্ড নিয়ে সিপিআই(এম)’র অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, আমরাই আইনী লড়াই করে নির্বাচন ক্ষেত্রে কর্পোরেট টাকা বণ্ডের নামে রাজনৈতিক দলকে দেওয়া আটকেছি‌। ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের রাজনীতির কথা বলতে হবে। সন্দেশখালি শুধু নয়, রাজ্যজুড়ে অসংখ্য ঘটনার মত পাঁচলার জুজারসাহাতেও ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের চুরি, লুট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এরাজ্যে মানুষ লড়াই চান। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই মৌলবাদী বিপদ। যেকোনো দেশে সবচাইতে বড় বিপদ সংখ্যাগরিষ্ঠ মৌলবাদ। আরএসএস ও বিজেপি’র বিপদের সম্পর্কে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার গড়ে তুলতে হবে। রাজ্যকে রক্ষা করতে হলে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করতে হবে। দেশের মূলগত ঐক্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে আরএসএস ও বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে। দিলীপ ঘোষ শ্রেণি আন্দোলন শক্তিশালী করতে আসন্ন সংগ্রামের জন্য মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগঠন ও সংগ্রাম গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। আগামী ১০ মার্চ উলুবেড়িয়ার গরুহাটার সমাবেশকে সফল করে তোলার আহ্বান জানান।

Comments :0

Login to leave a comment