ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে লাগাতার মিথ্যা ছড়ানোর দায়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশের জোটবদ্ধ কৃষক-খেতমজুরদের সংগঠনটি বলেছে, এমএসপি নিয়ে কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা চালিয়েই যাচ্ছে মোদী সরকার। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ফসলের লাভজনক দাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারা শুধু লঙ্ঘনই করছেনা, উলটে এই অঙ্গীকার মানা হচ্ছে বলে ধারাবাহিক মিথ্যা প্রচারও চালাচ্ছে। সুতরাং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনের রাস্তায় নামতে চলেছেন কৃষকরা। লড়াইয়ের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে আগামী ১০ জুলাই দিল্লিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার জাতীয় কমিটির বৈঠক বসবে, জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের কৃষক-বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে দিল্লির বুকে ঐতিহাসিক এবং দীর্ঘস্থায়ী লড়াই গড়ে তুলেছিলেন কৃষকরা। দেশের কৃষক-খেতমজুরদের ২০০টিরও বেশি সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ গড়ে টানা একবছর দিল্লি সীমান্ত কার্যত অবরোধ করে রেখেছিল। বেনজির এই জোরালো কৃষক আন্দোলনের মুখে পিছু হটে ২০২১ সালে কৃষক-বিরোধী তিন আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিল মোদী সরকার। একইসঙ্গে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে ‘সি২+৫০%’ ফরমুলা অনুযায়ী এমএসপি দিতে নতুন আইন তৈরির দাবিও মেনে নিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু পরের তিন বছরেও এই প্রতিশ্রুতি মানেনি তারা।
এই প্রতারণার মধ্যেই গত বুধবার ধান সহ ১৪টি খরিফ ফসলের এমএসপি’র নতুন হার ঘোষণা করে কেন্দ্র। এবারেও যথারীতি চাষের প্রকৃত খরচের সঙ্গে ৫০ শতাংশ লাভ যোগ করার নীতি মানেনি সরকার। বরং সার, সেচ, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ঘোষিত এমএসপি’তে কৃষকদের লাভ তো দূর অস্ত, লোকসানও কমবে না। অথচ অনুগত কর্পোরেট প্রচারমাধ্যমের সহায়তায় ‘ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ মূল্য যোগ করে এমএসপি ঘোষিত হয়েছে’ বলে ডাহা মিথ্যা প্রচার চালাতে শুরু করেছে মোদী সরকার।
এই অবস্থায় এদিন ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে মোদী সরকার সম্পর্কে প্রবল ক্ষোভ উগরে দেন সংযুক্ত কিষান মোর্চা নেতারা। হান্নান মোল্লা, অভীক সাহা, বলবীর সিং রাজেওয়াল, পুরুষোত্তম শর্মা, রবীন্দর সিং পাতিয়ালা, পি কৃষ্ণপ্রসাদ প্রমুখ সুপরিচিত কৃষকনেতারা সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রের নয়া এমএসপি ‘সি২+৫০%’র অনেক নিচে। এব্যাপারে মিথ্যা ছড়িয়ে অন্নদাতাদের সঙ্গে মশকরা করছে কেন্দ্র। ঘোষিত দামেরও কোন আইনি গ্যারান্টি নেই। কৃষিপণ্যের দেশি-বিদেশি কর্পোরেট ব্যবসায়ী এবং বহুজাতিকদের স্বার্থেই এমএসপি’র হার এত নিচে রাখা হচ্ছে। শুধু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেই নয়, মাত্র ক’দিন আগে ওডিশার নির্বাচনেও ‘ধানের সংগ্রহমূল্য কুইন্টালপ্রতি ৩৪৫০ টাকা দেওয়া হবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সব প্রতিশ্রুতিই ভুয়ো প্রমাণিত হয়েছে।
Comments :0