অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ভয়াবহ বিস্ফোরণের এলাকায় জড়ো হচ্ছেন আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা। বিভিন্ন এলাকায় বাজি কারখানা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বিস্ফোরণে কতটা ভয়াবহ হতে পারে পরিণতি, মোচপোলের বাইরে, দত্তপুকুর সংলগ্ন এলাকা থেকে এসে দেখছেন মানুষ।
সোমবার মোচপোলে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কথা বলেছেন মানুষের সঙ্গে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনা তৃণমূল সরকারের অপশাসনের ‘হলমার্ক’।’’
রবিবার সকাল দশটা নাগাদ হয়েছে বিস্ফোরণ। ছিন্নভিন্ন দেহ ছিটকে গিয়ে পড়েছে হাজার, এমনকি দু’হাজার ফুট দূরেও। স্থানীয়রা বীভৎস সেই দৃশ্যের কথা বলছেন। কিন্তু সোমবার, ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পরও, এলাকায় গনগনে ক্ষোভ। জনতার ক্ষোভের মুখে পুলিশ, প্রশাসন।
সেই সুরেই এদিন ঘটনাস্থলে এসে সরব হয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা রাজ্যজুড়ে বারুদের স্তূপ। আর সাংসদ, বিধায়ক, তৃণমূলের নেতা এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রী, তার পরিবারের লোক টাকা কামাতে ব্যস্ত।’’
ঘন বসতি এলাকা মোচপোল। চার বছর আগে এলাকায় এমনই এক বিস্ফোরণের পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন এলাকাবাসী। পুলিশে জানিয়েছিলেন অভিযোগ। উলটে প্রশাসনের রোষের শিকার হতে হয়েছিল তাঁদেরই। স্থানীয়রা বলেছেন যে তাঁদেরই বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল মিথ্যা মামলা। কার্যত মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সেলিম বলেছেন, ‘‘মানুষকে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছিল যাতে বোমা, গুলি, বারুদ, বন্দুকের ব্যবসা চলে। মুখ্যমন্ত্রী এগরায় গিয়ে বলেছিলেন যে এবার তাঁর চোখ খুলে গেল। এখন কি চোখে ঠুলি পড়ে বসে রয়েছেন?’’
দত্তপুকুরের বিস্ফোরণে বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির অভিযোগ স্থানীয়দের মধ্যে জোরালো। এদিন বারুদ, মশলার সঙ্গে মিলেছে টুকরো পাথর। প্রশ্ন উঠেছে , পাথর কী স্প্লিন্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য। এখনও পর্যন্ত একজনকেই গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। ধৃত শফিকুল ইসলাম কারখানার মালিক নিহত কেয়ামত আলির সহযোগী বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলের তরফে আইএসএফ’কে দায়ী করার চেষ্টা হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় বিধায়ক রথীন ঘোষের মুখেও এই মর্মে অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেছেন, ‘‘যখনই তৃণমূলের চুরি, জোচ্চুরি, খুন, বিস্ফোরণ বাইরে চলে আসে তখনই আইএসএস, সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্টের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়। এই ঘটনার জন্য দায়ী প্রথমত মমতা ব্যানার্জি। দায়ী তাঁর নেতা-মন্ত্রী, পুলিশ। পুলিশ তোলা তোলে, সাংসদের বিরুদ্ধে তোলা নেওয়ার অভিযোগ।’’
পুলিশ, প্রশাসন এবং সরকারে আসীন তৃণমূলের মদত এবং সংযোগ ছাড়া যে এমন বিপজ্জনক কারখানা চলতে পারে না, স্পষ্ট করেই তা বলেন সেলিম। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় চলছে এই ব্যবসা। স্থানীয়রা আপত্তি করার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না।’’
ছবি: শ্যামল মজুমদার
Comments :0