Editorial

লাগে টাকা দেয়...

সম্পাদকীয় বিভাগ

এরাজ্য তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সিইএসসি’র মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। মুখ্যমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ট শিল্পপতিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বৃত্তে অবাধ বিচরণ তার। রাজ্যের শিল্প সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শদাতাদেরও তিনি অন্যতম। প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে শিল্প সম্মেলনের নামে যে মোচ্ছব হয় সেখানেও তার অতি আলোকিত উপস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের যে শিল্প প্রতিনিধি দল দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে সেখানেও সামনের সারিতে থাকেন তিনি। এহেন শিল্পপতি যে রাজ্যের শাসক দলের অন্যতম স্পন্সর বা অর্থের অন্যতম প্রধান জোগানদাতা হবেন তাতে আশ্চর্য কি। কিন্তু এই অপ্রিয় সত্যটা জনসমক্ষে কোনোদিনই প্রকাশ হতো না যদি দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কারা কোন দলকে কত টাকা দিয়েছে তা প্রকাশের নির্দেশ দিত।
অতি ঘনিষ্ট এবং অনৈতিক ও বেআইনি সুবিধা প্রার্থীদের কাছ থেকে যথেচ্ছ পরিমাণে টাকা নিয়ে দল চালানোর উদ্দেশ্যেই মোদী জমানায় চালু করা হয় নির্বাচনী বন্ড। পাশাপাশি কার কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে সেটা যাতে দেশের সাধারণ জনগণ জানতে না পারে তারজন্য আইনের ধারাতেই চূড়ান্ত অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তার ব্যবস্থা রাখা হয়। আর সেই অস্বচ্ছতার আড়ালে রাজনীতিক-কর্পোরেট অশুভ আঁতাত গড়ে তুলে নিকৃষ্টমানের দুর্নীতিকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। এভাবে গত পাঁচ বছরে মোদী-শাহ-দের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছে দে‍‌শের বৃহত্তম অথনৈতিক দুর্নীতি। সেই দুর্নীতিরই ভাগ ষোলকলায় বুঝে নিয়েছে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল।
লক্ষণীয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কার আরপিজি গোষ্ঠীরই অন্যতম বৃহৎ সংস্থা সিইএসসি। কলকাতা ও লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলী জেলায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বণ্টন করে। এদেরই অন্য একাধিক সংস্থা আছে। সরাসরি সিইএসসি’র নামে বন্ড না কিনলেও হলদিয়া এনার্জি, ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার, পিসিবিএল এবং ক্রেসেন্ট পাওয়ার-এর মাধ্যমে মোট ৪৪৪ কোটি টাকার বন্ড কিনে মমতা ব্যানার্জির দলের তহবিলে দিয়েছেন। মোদীর দলের পরই মমতার দল দেশে দ্বিতী‌য় বৃহত্তম দল যারা কর্পোরেটের কাছ থেকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ১৬১০ কোটি টাকা পেয়েছে। তার মধ্যে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন সংস্থাই দিয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা।
সঞ্জীব গোয়েঙ্কা মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর দলকে ভালোবাসতেই পারেন এবং তৃণমূলের তহবিলে দু’হাতে টাকা ঢালতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে তিনি ঘর থেকে টাকা এনে তৃণমূলের জন্য বন্ড কেনেননি। যে টাকার বন্ড কিনেছেন তার থেকে কয়েক গুণ বেশি আদায় করেছেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংবহন ও বণ্টনের জন্য মোট খরচ অপেক্ষা অস্বাভাবিক বেশি হারে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাশুল আদায় করে তিনি তৃণমূলের তহবিলে তার একাংশ দান করেছেন। তাতেই তৃণমূল কৃতার্থ। তাই জনগণের পকেট কাটা হ‍‌চ্ছে দেখেও সরকার নীরব। জনগণের স্বার্থে তাতে বাধা দিলে তৃণমূলের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। মমতা ব্যানার্জিদের কাছে জনস্বার্থ অপেক্ষা দলস্বার্থ আগে। তাই গোয়েঙ্কাদের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন যত খুশি মুনাফা করার। তারা মোটা মুনাফা কামানোর স্বাধীনতা পেলেই তো তৃণমূলের তহবিল ফুলে ফেঁপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

Comments :0

Login to leave a comment