ওডিশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ায় মহা ফ্যাসাদে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাই তাকে দু’-দু’বার যেতে হয়েছে ঘটনাস্থলে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এরাজ্যের আহতদের দেখতে। ঘোষণা করতে এরাজ্যের হতাহতদের আর্থিক সহায়তার কথা। এমনকি হতাহতের বাইরে ঐ ট্রেনের বেঁচে যাওয়া আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রী, সর্বোপরি বাংলার সমস্ত পরিযায়ী যাত্রীকে আর্থিক সহায়তার কথা নজিরবিহীনভাবে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কোনও দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার এবং আহতদের সামর্য্হ অনুযায়ী সরকার সাহায্য করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলা থেকে কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেওয়া দুর্ঘটনা কবলিত করমণ্ডলের সবযাত্রীকে সরকারি সাহায্য দেওয়া অতীতে কোনোদিন হয়েছে বলে জানা নেই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে মমতা ব্যানার্জিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মন পেতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
আসলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর সযত্নে গড়ে তোলাকে তাসের ঘরকে ভেঙেচুরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলে আসছেন এরাজ্যে উন্নয়ন হয়েছে প্রতিশ্রুতির থেকে বেশি। মাঝে মাঝেই বলেছেন এক কোটি কাজ দিয়েছেন। কৃষিতে নাকি আয় বাড়িয়েছেন চারগুণ, পাঁচগুণ। অর্থাৎ উন্নয়নের জোয়ারে গ্রাম-শহরে ফুর্তির ফোয়ারা। তাই সরকার চলে উৎসবের মেজাজে। খেলা-মেলা-উৎসবে দু’হাতে উড়ছে সরকারি টাকা। কিন্তু বহিরঙ্গের এই জলুসের আড়ালে ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি কুরেকুরে খাচ্ছে যুব সমাজের ভবিষ্যৎকে। কাজের হাহাকার, ঘরে ঘরে বেকার। এটা ওটা করে কিছু রোজগার হয়তো হয় কিন্তু তাতে পেট চলে না। এরাজ্যের অর্থনীতির হাল বোঝা যায় মজুরির হার থেকে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির তুলনায় এরাজ্যে মজুরি অর্ধেকেরও কম। পশ্চিম ভারতে মজুরিও এরাজ্য থেকে অনেক বেশি। এরাজ্যে শুধু কাজের অভাব নয়, যেটুকু কাজ মেলে তাতে আয় নিতান্তই কম। ম্রিয়মাণ-ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিতে শ্রমের চাহিদা কম। তাই শ্রমের বাজারে প্রতিযোগিতা মজুরির হার নামিয়ে দেয়।
তৃণমূল শাসনে সবচেয়ে যেটা অপদার্থতা সেটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারা। আসলে মমতা ব্যানার্জি মানুষকে কাজ দেবার বদলে ডোল বিতরণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি মনে করেন ক্ষমতায় থাকতে হলে ভোটে জিততে হবে। আর সহজ পথে ভোটে জিততে হলে টাকা বিলিয়ে ভোট কিনতে হবে। তাই রাজ্যে শিল্প ও পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ না করে নানা রকমারি নামে মানুষকে টাকা বিলোনোকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মানুষ নিজের যোগ্যতায় শ্রমের বিনিময়ে যদি রোজগার করে তাহলে ভোট অনিশ্চিত হয়ে যেতে পরে। তাই তৃণমূলের নীতিই হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টির সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সরকারি সাহায্যের উপর মানুষকে নির্ভরশীল করে তোলা। এই করতে গিয়ে রাজ্য বেকারে ছেয়ে গেছে। পেটের দায়ে তাই মানুষ কাজের জন্য অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে রাজ্য থেকে শ্রমের বহির্গমণ বাড়ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে হাওড়া, শিয়ালদহ ও অন্যান্য স্টেশন থেকে চলে যাচ্ছে বাইরে। মমতা এই সত্য ও বাস্তবকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেন। প্রথম লকডাউনের সময়, তারপর কমণ্ডলের দুর্ঘটনায় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে মমতা শাসনে বাংলা এখন কাজের শ্মশান। বাংলার যুব সমাজ এখন পরিযায়ী। তৃণমূলের এই অপদার্থতা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই টাকা বিলিয়ে পরিযায়ী পরিবারের মন পেতে চাইছেন। যাদের প্রয়োজন তারা নিশ্চয় সরকারি সাহায্য পাবেন। কিন্তু মানুষকে কাজ না দিয়ে কর্মহীন রেখে ছিটেফোঁটা দান করে অর্থনীতির উন্নতি করা যায় না। মানুষ আরও বেশি সঙ্কটে তলিয়ে যায়।
Editorial on TMC govt
মহা ফ্যাসাদে মমতা
×
Comments :0