সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার একথা যেদিন বলছেন, সেদিনই এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের বলছেন, কথাটা ভুল কিছু নয়। তাঁর প্রতিক্রিয়ায় ‘আই অ্যাপ্রিসিয়েট ইট।’ হরিয়ানায় হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবের দায় নিতে না চাওয়া বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকেই কি প্রকারান্তরে তারিফ করলেন মমতা ব্যানার্জি? পরোক্ষে কি কোনও বার্তা দিতে চাইলেন?
সমাজে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি না থাকলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকেই। নিরাপত্তার জন্য সমাজে একটি সদ্ভাবের পরিবেশ তৈরি করতে হয়, বলছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার। সমাজে শান্তি, সদ্ভাব বজায় রাখার কথা মুখ্যমন্ত্রী বললেও কারা সেই সদ্ভাব নষ্ট করছে, তা বলেননি খাট্টার। বলার কথাও নয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যে শোভাযাত্রাকে ঘিরে হিংসা ছড়ানো হয়েছে, সেই হিংসায় কারা উসকানি দিয়েছে, তারপরেও গুরগাঁও সহ হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে কারা হিংসা চালাচ্ছে সেই সব কথা যে স্বাভাবিকভাবেই তিনি আড়াল করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খাট্টার চেপে গিয়েছেন খুন সহ বিভিন্ন অপরাধের মূল অভিযুক্ত বজরঙ দল নেতা মনু মানেসরের ভূমিকার কথাও, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এহেন খাট্টারের পাশে কেন বেমালুম দাঁড়িয়ে গেলেন মমতা ব্যানার্জি? উদ্বেগজনক দুশ্চিন্তা এখানেই।
গোরক্ষার নামে দুই যুবককে গাড়ির ভিতরে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনু মানেসর সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে হিন্দুত্ববাদীদের শোভাযাত্রায় দলে দলে যোগ দেওয়ার ডাক দেয়। সে নিজেও উপস্থিত থাকবে বলে ঘোষণা করে দেয়। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তার প্রধান সঙ্গী এবং জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বিট্টু বজরঙি সশস্ত্র দলবল নিয়ে ভিএইচপি’র শোভাযাত্রায় ছিল এবং হিংসায় উসকানি দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার সেকথা ঘুনাক্ষরেও বলেননি। বরং তিনি কি করছেন: একের পর এক ঝুপড়ি উচ্ছেদ চালাচ্ছেন হরিয়ানার নূহতে। শিল্পাঞ্চল গুরগাঁও লাগোয়া যে ঝুপড়ির বাসিন্দা ছিলেন মুখ্যত পরিযায়ী দিনমজুররা, কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। এভাবেই ‘দাঙ্গা মোকাবিলা’ করছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। এটাই বিজেপি, এটাই হিন্দুত্ববাদীদের রাজনীতি। কিন্তু তাঁর পাশে এমন অযাচিতভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন কেন মমতা ব্যানার্জি? খাট্টারের বক্তব্যকে প্রায় তারিফ করার মতো করে মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় বলেছেন, আমি ওনার সঙ্গে কোনও বিরোধ করছি না। নিশ্চয় প্রত্যেককে আলাদা করে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এটা হরিয়ানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে বাংলার জন্য নয় কেন?
মণিপুরের ভয়াবহ পরিস্থিতি যে স্বচক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেখে আসা উচিত তা বারবার বলছে বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। দু’দিন আগেই ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা একথা জানাতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। তাঁরা যে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাতে মণিপুরের পাশাপাশি হরিয়ানার নূহতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একশো কিলোমিটারের মধ্যে হিংসা ছড়ালেও কোনোরকম গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার, এটাও অভিযোগ বিরোধীদের। মমতা ব্যনার্জি কি সেকথা জানেন না?
খটকাটা এখানেই। এটাই প্রথম নয়, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ঘুরে ফিরে কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা দিল্লির বিজেপি নেতাদের প্রতি সদয় মনোভাবের বার্তা উঠে এসেছে আগেও। যখন অন্যায়ের সরাসরি বিরোধিতা করা কর্তব্য তখন পরোক্ষে বা সরাসরি অন্যায়কারীর পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন বারেবারে। হরিয়ানার বুলডোজার রাজ বাংলাও প্রত্যক্ষ করছে অন্যভাবে। গত পঞ্চায়ত নির্বাচনে, লুট- হিংসা-জখম, ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু, জনমতের এমন ভয়াবহ ডাকাতির পরেও তৃণমূলের ভয় যায়নি। কারণ প্রতিরোধের মানচিত্রে এখন প্রথম সারিতে বাংলাও। সেই কারণেই মমতা ব্যনার্জি কি অভয় চাইছেন অন্য কোনও জায়গা থেকে? বার্তা দিতে চাইছেন নতুন খেলার?
Editorial on TMC govt
মমতা কি নতুন করে বার্তা দিচ্ছেন!
×
Comments :0