Editorial on Manipur violence

কেন এত গোপনীয়তা

সম্পাদকীয় বিভাগ


নরেন্দ্র মোদীর ডাবল ইঞ্জি‍‌নের সরকারের অধীনে মণিপুরে গত প্রায় তিন মাস ধরে যে নারকীয় বর্বরতা চলছে ২৬ মিনিটের এক ভাইরাল ভিডিও-র দৌলতে সমগ্র ভারতবাসী, সাথে সাথে গোটা দুনিয়া তার নমুনা দেখতে পেয়েছেন। মণিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখে স্বীকার করেছেন গত কয়েক মাসে এমন ঘটনার কয়েকশত এফআইআর হয়েছে। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী এই সময়ে থানায় মোট এফআইআর হয়েছে ৬ হাজারেরও বে‍‌শি। কিন্তু অতীব দুঃখের যে, মণিপুরের মানুষের এবং অবশিষ্ট ভারতবাসীর এইসব অবর্ণনীয় অত্যাচার বি‍‌শেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে পৈশাচিক বর্বরতার খবর বাইরে আসেনি বা আসতে দেওয়া হয়নি। গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে এবং রাজ্যের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বা যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্যটাকে বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল যাতে কোনও  অবস্থাতেই মানবতার যে ধ্বংসলীলা চলছে তা বাইরের মানুষের গোচরে না আসে। তাই ডাবল ইঞ্জিনের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-আধা সরকারি সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা সচেতনভাবেই মণিপুরের তথ্য প্রকাশ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী তো নিজের অক্ষমতা ও অপদার্থতা আড়াল করতে সত্য ও বাস্তবকে আড়াল করবেন। কিন্তু রাজ্যপাল! তিনিও কিছু প্রকাশ করেননি। অমিত শাহ তিনদিন মণিপুরে কাটালেও তাঁর কাছ থেকে ভারতবাসী মণিপুরের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানতে পারেননি। আসামের মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার মণিপুর গিয়েছেন কিন্তু মুখ বন্ধ রেখেছেন। বিরোধীদের তরফ থেকে বারংবার দাবি উঠলে নীরব থেকেছেন প্রধানমন্ত্রীও। অর্থাৎ শাসকের তরফে মণিপুরের ঘটনা পুরোপুরি অগোচরে রাখারই চেষ্টা হয়েছিল। সেইজন্য রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী দলগুলি প্রতিনিধিদের মণিপুর সফরে ঘোর আপত্তি ছিল ডাবল ইঞ্জিনের। তাই পদে পদে তাদের সফর আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে ঘুরতে বা কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আশ্চর্যজনকভাবে নীরব থেকেছেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী, এমনকি জাতীয় মহিলা কমিশনও। শাসক দলের প্রবল চাপে গোটা দেশ তথা বিশ্বের অগোচরে রেখে নরপিশাচদের পাশবিকতার অবাধ অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনক্রমে ভিডিও-টা বাইরে আসার পরই বেকায়দায় পড়ে একে একে সকলে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এমন শতশত ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যপাল বলছেন এমন হিংস্রতা নাকি তিনি কখনও দেখেননি। প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় মহিলা কমিশন বলছে অনেক অভিযোগ তারা পেয়ে মণিপুর সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে। কিন্তু জবাব আসেনি। অথচ এতদিন তারা কিছু বলেনি। গোটা মিডিয়াও যথারীতি নৃশংসতা ও বর্বরতা আড়াল করে গেছে। এখন মোদী সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনা আটকাতে।
বিরোধীরা চায় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিন এবং মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হোক সংসদে অন্য সব কর্মসূচি স্থগিত রেখে। কিন্তু সরকার বিস্তারিত আলোচনা চায় না। প্রধানমন্ত্রীও বিবৃতি দিতে নারাজ। অর্থাৎ সরকার চায় না মণিপুরের প্রকৃত অবস্থায় ছবি সংসদে ধরা পড়ুক। তাই দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে নমো নমো করে আলোচনা করে দায় এড়াতে চায়। কিন্তু বিরোধীরা নাছোড়। মণিপুরের সকল সত্যের তারা উদ্ঘাটন চায়। যে বর্বরতা সেখানে চলছে, মহিলাদের উপর যে নির্যাতন চলছে, ধর্ষণ-খুন-চলছে সবটাই মানুষ জানুক এটাই চায় বিরোধীরা। কিন্তু সরকার সেটা মেনে নিলে তাদের অপদার্থতাই প্রমাণ হয়ে যাবে। শুধু অপদার্থতা নয়, সংখ্যাগুরু মেইতেইদের অমানুষিক হিংসায় মদত দিয়ে সংখ্যালঘু আদিবাসীদের সঙ্গে বিভাজন রেখা তীক্ষ্ণ করতে চায় আগামী ভোট রাজনীতির স্বার্থে।

Comments :0

Login to leave a comment