ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি বিজেপি’র বাহুবলী সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহর যত গুরুতরই হোক না কেন মোদী সরকার ঠিকই করে রেখেছে তাকে পদ থেকে সরানো হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণ হবার আগে দল এবং সরকারের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়ো হবে না। তেমনি ইতিমধ্যে দল ও সরকারের তরফ থেকে নানাভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যৌন নির্যাতনের শিকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ী মহিলা কুস্তিগিররা যতই লড়াই করুক, বিরোধী নেতারা, কৃষক সমাজ, নাগরিক সমাজের বিশিষ্টরা, অন্যান্য ক্ষেত্রের ক্রীড়াবিদরা, এমনকি বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশন এবং আন্তর্জাতিক ওলিম্পিক সংস্থা ভারতের সোনার মেয়েদের লড়াইয়ের পাশে যতই দাঁড়াক না কেন বিজেপি এবং মোদী সরকার ব্রিজভূষণের পক্ষেই অবস্থান নেবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে কে এই ব্রিজভূষণ যাকে ছেঁটে ফেলার সাহস নেই মোদী-শাহদের তার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠার পরও দল ও সরকার পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ও নীরব। সেই জানুয়ারি মাসে প্রথম অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘ সময় টু শব্দটিও করা হয়নি। দিল্লি পুলিশে অভিযোগ জমা পড়ার পরও দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়। শেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লির পুলিশ বাধ্য হয় কুস্তিগিরদের অভিযোগের ভিত্তিতে দলের ও সরকারের মহামূল্যবান সম্পদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে। তবে ঐ পর্যন্তই।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ অমিত শাহর পুলিশের কাছে জমা পড়েছে তাতে অন্তত ১২ কেসে কমপক্ষে ১৫টি যৌন হেনস্তা ও শ্লীলতাহানির ঘটনার বিবরণ আছে। যে দু’টি এফআইআর হয়েছে তার একটি পকসো আইনে অর্থাৎ নাবালিকার বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ। পকসো আইনে কারোর বিরুদ্ধে এফআইআর হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে হয়। মোদী-শাহ-দের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার না করে ছেড়ে রেখেছে যাতে পালটা কথা বলতে পারে। সরকারের তরফে মেন বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আইন নাকি আইনের পথে চলবে। কিন্তু বাস্তবে আইন চলবে অভিযুক্তের পথে। সরকার-পুলিশ-শাসক দলের সম্মিলিত প্রয়াসের একটাই লক্ষ্য বিজেপি’র অপরিহার্য বাহুবলীকে নির্দোষ প্রমাণ করা। তার জন্য যা যা করার দরকার গোড়া থেকে করা হচ্ছে।
যৌন হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে জনমতের বহর বাড়তে থাকায় এমনকি স্থানীয় স্তরে দলের অভ্যন্তরেই প্রশন্ন উঠতে শুরু করায় ঘৃণা ভাষণে পারদর্শী মন্ত্রীকে নামানো হয়েছে আসরে। তিনি দিল্লি পুলিশের উপর আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন যখন মোদীয় অনুষ্ঠানে হাস্যমুখে ব্রিজভূষণ বিরাজমান তখন রাস্তায় বেধড়ক লাঠিপেটা করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ধরনারত অভিযোগকারীদের। এই ঘটনায় গোটা দেশ ক্ষুব্ধ-স্তম্ভিত। রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণায় পদকজয়ীরা তাঁদের সারাজীবনে অর্জিত সব পদক ভাসাতে যখন গঙ্গায় আটকায় কৃষকরা। কৃষকরা ময়দানে নেমে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেয় আগে ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তার চাই। নইলে সেই ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে সরাসরি ব্রিজভূষণের হয়ে রাস্তায় নামতে না পেরে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে অযোধ্যার সাধু সন্তদের। সাধুরা ব্রিজভূষণের সমর্থনে মিছিল করবে অযোধ্যায়। অযোধ্যা লাগোয়া কাসরগঞ্জের সাংসদ ব্রিজভূষণ। ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তিতে প্রভাবশালী। বাবরি মসজিদক ধ্বংসে সক্রিয় ছিলেন। সেই মামলার আসামি তিনি। রামমন্দির আন্দোলন, রামমন্দির নির্মাণে তার বিরাট অবদান। তাকে সরানো হলে বা অপরাধী সাব্যস্ত হলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিপদ বাড়তে পারে। আগামী বছর জানুয়ারিতে রামমন্দির উদ্বোধনেও জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই মোদী-শাহরা কোনও অবস্থাতেই দেশের গৌরব মেয়েদের শ্লীলতাহানি ও যৌন নির্যাতনকারীর কেশাগ্র স্পর্শ করতে রাজি নন।
Editorial on wrestler's
দলের সম্পদ যে
×
Comments :0