Editorial on miscreants

দুষ্কৃতী রাজ প্রকাশ পাচ্ছে

সম্পাদকীয় বিভাগ


পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে বোমা বাঁধা হচ্ছিল বা মজুত ছিল। বিস্ফোরণে বাড়িও প্রায় উড়ে গেছে। এ কোনও মামুলি ঘটনা নয়। কিন্তু তৃণমূলের রাজত্বে এই ধরনের ঘটনা দৈনিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ছ’মাসে এইরকম বহু ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। কোথাও তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে, কোথাও তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে খুন হয়েছে, কোথাও নিরপরাধ শিশু বোমার আঘাতে জখম হয়েছে। 
তৃণমূলের শাসনে বাংলা সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে, এ কথা নতুন নয়। তৃণমূল সরকারে আসার পর থেকেই দৃষ্কৃতীরা শাসক দলের দখল নিয়েছে। তাদেরই শাসনে চলছে রাজ্যের সরকারি দল। একাংশ একেবারে আনুষ্ঠানিক নেতা হয়ে বসে আছেন, অন্য অংশ নিজের নিজের অঞ্চলে অবাধ দুষ্কৃতী রাজ কায়েম করেছেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রাম ও শহরের নানা জায়গা থেকে হটিয়ে দেওয়া, ভীতির রাজত্ব তৈরি করে যে কোনও গণতান্ত্রিক পরিসরকে রুদ্ধ করা, সাধারণ মানুষের মনে গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে এই রাজত্ব চলছে। 
এই সন্ত্রাসের পিছনের অর্থনীতিও এখন প্রকাশ্যে। অবাধ লুট ও চুরির লক্ষ্যেই এই বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূল নেতারা পঞ্চায়েতের টাকা দেদার লুট করেছেন। পঞ্চায়েতের সরকারি বরাদ্দ চুরি করে সম্পদ বেড়েছে শাসক নেতাদের। রেগার মজুরি থেকে আবাস যোজনার টাকা- কোথাও কোনও ছাড় দেয়নি তারা। শহরে গড়ে উঠেছে নির্মাণের সিন্ডিকেট। প্রোমোটার রাজত্বে জমি দখল থেকে উচ্ছেদ সবই চলছে। এখন গোটা রাজ্যের মানুষ জেনেছেন কীভাবে কয়লার মতো সম্পদও এরা বেআইনি পথে চোরাকারবার করেছে। গোরু পাচারে কোটি কোটি টাকার সন্ধান মিলেছে। এই লুটের রাজত্ব যাতে অটুট থাকে তাই দুষ্কৃতী বাহিনীকে তৈরি রাখা হয়েছে। এদের অনেকেই আবার পঞ্চায়েত বা পৌরসভার প্রতিনিধি সেজে বসে আছেন। ভগবানপুরে এমনই এক নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। 
এই বোমা-অস্ত্রের দাপটের অন্য দিকটি রাজনৈতিক। বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আর দেরি নেই। ২০১৩, ২০১৮-র পঞ্চায়েত তৃণমূল জিতেছিল গায়ের জোরে। বিরোধীদের বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতেই দেওয়া হয়নি। কেউ প্রার্থী হলেও ভয় দেখিয়ে তা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। তারপরেও চলেছে বুথ দখল। তৃণমূল চাইছে এই মডেলেরই পুনরাবৃত্তি করতে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় যে বোমা, অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে তা বিপুল সম্ভারের অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তবে, এইবার এই কৌশল এত সহজ হবে না। রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মানুষের মধ্যে প্রবল শাসক-বিরোধী ক্ষোভ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ প্রতিরোধেও তৈরি হচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment