Editorial on CM comment

একি কথা শুনি!

সম্পাদকীয় বিভাগ

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত কোনও ফলাফলের ইঙ্গিত পাচ্ছেন কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি? তা না হলে কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভায় এমন কথা বললেন কেন? দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেরে গেলেও ভয় পাবার কিছু নেই। রাজ্যে সরকারটা তৃণমূলেরই থাকবে। অতএব কোনও রকম দুঃশ্চিন্তা মাথায় না রেখে কর্মীদের লড়ে যাবার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে জয় সম্পর্কে তিনি সন্দিহান, হেরে গেলেও যেতে পারেন। এটা নিছক মুখ্যমন্ত্রীর নিজের অনুমান নয়। গোটা দলের সর্বস্তরে বিশেষ করে যারা একেবারে গ্রাম স্তরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বেপরোয়া ভোট লুট করে সেই সব কর্মী-সমর্থকরা একেবারে গ্রাউন্ড জিরো থেকে আঁচ পাচ্ছেন পরিস্থিতি আগের মত নয়। এবার আর তৃণমূলী গুণ্ডাদের হুমকিতে সর্বত্র সবকিছু চলছে না। প্রায় সর্বত্র প্রতিরোধ হচ্ছে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আর তাতে ভরসা পাচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাঁরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধে অংশ নিচ্ছেন। গ্রামের মানুষের একটা বড় অংশের এমন মনোভাব দেখে অনেকেই দান উলটে যাবার আশঙ্কা করছেন। নিচুতলার কর্মীদের মনে এমন দুশ্চিন্তার মেঘ ঘন হচ্ছে দেখে তাদের চাঙ্গা করতে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সরকারের উপর কোন প্রভাব পড়বে না। সরকার তৃণমূলেরই থাকবে।
২০১১ সালের পরে কোনও র্নিাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এমন রক্ষণাত্মক মন্তব্য শোনা যায়নি। সবসময়ই তিনি থাকতেন উত্তুঙ্গু শিখরে। পরাজয়ের কথা ভাবা তো দূরের কথা বিরোধীদের তোয়াক্কাই করতেন। বামপন্থীদের তো শূন্য পাওয়া দল বলে প্রতি মুহূর্তে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন। বার বার বলতেন সিপিআই(এম)-কে দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না। রাজ্য থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেই সিপিআই(এম)-ই আজ তাঁর প্রধান মাথা ব্যথার কারণ। বিজেপি নিয়ে তাঁর বিশেষ দুশ্চিন্তা নেই। তিনি জানেন মোদী-শাহ-র সঙ্গে ঠিক একটা বোঝাপড়া করে নেবেন। তাছাড়া খিড়কির দরজা দিয়ে দু’দলের মধ্যে নিত্য যাতায়াত তো আছেই। আজ হাতে গেরুয়া ঝান্ডা থাকল কাল তৃণমূলের ঝান্ডা ধরবে নিশ্চিতভাবে। কিন্তু সিপিআই(এম)-র সঙ্গে বোঝা পড়ার কোনও সুযোগ নেই। তৃণমূল এখন হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে পুরানের সেই কথা তোমাকে মারিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। শূন্য পাওয়া পার্টিই আজ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে শাসক দলের হাড়ে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছেন।
হাজার চেষ্টা করেও সিপিআই(এম) তথা বামফ্রন্টের প্রার্থীদের ঢালাওভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরাতে পারেনি। লড়াইয়ের ময়দানে তথাকথিত প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-কে সাইড লাইনে সরিয়ে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ মিলিতভাবে শাসক দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আসলে নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন যেভাবে তাদের দলদাসত্বকে উন্মোচন করে তাতে সাধারণ মানুষেরও ধিক্কার জানানো ছাড়া উপায় নেই। অর্থাৎ জনগণের বিশ্বাস যোগ্যতার জায়গা থেকে বহু যোজন দূরে সরে গেছে শাসক দল। তাই প্রচারে শাসক দলের আক্রমণের কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছে বাম-কংগ্রেস। একই পথের পথিক বিজেপি-ও। এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শেষ রক্ষা করতে চাইছে তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলই। তৃণমূল বলছে বাম-কংগ্রেস তলে তলে বিজেপি-কে সাহায্য করছে। আর বিজেপি বলছে বাম-কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে তলে তলে হাত মিলিয়েছে। এসব যত বলবে ততই হাসির খোরাকে পরিণত হবে। মানুষ ঘাষে মুখ দিয়ে চলে না কে কার সঙ্গে সেটিং করে তারা সব জানেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment