গণতন্ত্রের সূচক সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা। আজ সংবাদ মাধ্যম আক্রান্ত। এই সময়ে অনেকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বাংলায় ‘গণশক্তি’ বা কেরালায় ‘দেশাভিমানী’-র মতো বিকল্প সংবাদমাধ্যম।
বুধবার কলকাতায় ‘গণশক্তি’-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এই মর্মে বক্তব্য রেখেছেন সংবাদ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ শশী কুমার।
কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ‘গণশক্তি’-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন বিমান বসু। বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ‘গণশক্তি’-র সম্পাদক শমীক লাহিড়ীও। ‘আক্রান্ত সংবাদমাধ্য, বিধ্বস্ত গণতন্ত্র’ বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রধান বক্তা সংবাদমাধ্যম বিশেষজ্ঞ শশী কুমার।
শশী কুমার বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব সরকারের কাজের ঠিক ভুল খুঁজে দেখা। কিন্তু আজ প্রেস শাসনের পোষ্যে পরিণত হয়েছে। অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। ক্ষমতা সামান্য বিরক্ত হলেই প্রেসের উপর কোপ পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিকল্প মিডিয়াতেও ফেক নিউজের ছড়াছড়ি। প্রথাগত প্রেস ভুয়ো তথ্য তুলে ধরছে না।’’
তিনিই প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিকল্প কী?’’ শশী কুমারের ব্যাখ্যা, ‘‘দেশাভিমানী বা গণশক্তি-র মতো পত্রিকাগুলি, যাদের নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী রয়েছে, তারা এই ট্রোল সেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকের চেয়ে ভালো ভূমিকা নিতে পারে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে জনমত নির্মাণ করা হচ্ছে। ওটিটি, ওয়েব সিরিজ সহ সমস্ত প্ল্যাটফর্মে সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা কাউন্টার করছে না প্রথাগত মিডিয়া। করছে বিকল্প মিডিয়া। তাই বিকল্প মিডিয়ার উপরেও আক্রমণ নেমে আসছে। নিউজক্লিক তার উদাহরণ।’’
তিনি বলেন, ‘‘হিটলারও ভোটে জিতে এসেছিল। নির্বাচনই গণতন্ত্রের একমাত্র ভিত্তি নয়। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও একটি সূচক।’’ তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়া সরকারি পক্ষ নেওয়ার ফলে সমাজে সংবাদমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এটাই চায়।’’
শশী কুমার বলেন, ‘‘রয়টার্স, এএফপি, এপি’র মত সংবাদসংস্থা ৮৫ শতাংশ খবর পরিবেশন করে। এবং যে কোনও ঘটনা, যা আমেরিকা এবং যুদ্ধজোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে যায়, তা এরা খবর করে না। লগ্নি পুঁজিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়, এমন ঘটনা নিয়ে খবরগুলিকে ঠাঁই দেওয়া হয় না। গাজায় সংঘর্ষ বিরতির দাবিতে বা ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদে মিছিলকে ব্ল্যাকআউট করা হয়। কিন্তু বিকল্প মিডিয়ার জন্য সেই খবর চাপা থাকেনি।’’
শশী কুমারের বক্তব্য, আমাদের ভালো এবং খারাপ সাংবাদিকতার মধ্যে ফারাক করতে শুরু করতে হবে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচাতেই হবে।
গণশক্তির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী স্বাগত ভাষণে বলেন, ‘‘বহু মানুষের রক্ত, অশ্রু, ঘামে লেখা রয়েছে ‘গণশক্তি’-র ৫৭ বছরের ইতিহাস। কেবল সাংবাদিকরা নন, প্রচারক বা যাঁরা কাগজ পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেন তাঁরাও আক্রান্ত হয়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবু ‘গণশক্তি’-র প্রকাশ বন্ধ করা যায়নি।’’
লাহিড়ী বলেন, ‘‘অনেকে নিজেদের নিরপেক্ষ বলে দাবি করেন। আমরা বলি আমরা নিরপেক্ষ নই, মেহনতি মানুষের পক্ষে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যখন প্রশ্ন দেশের সংবিধান থাকবে কিনা, দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকবে কিনা, তখন পক্ষ নিতেই হয়। নিরপেক্ষ থাকা যায় না।’’
Comments :0