Marriage

একুশ হওয়ার আগেই বিয়ে মেয়েদের, শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ

জাতীয়

নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর— কলকাতার রেড রোডে কার্নিভালে ‘কন্যাশ্রী’দের নৃত্য পরিবেশনা দেখে হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে কেন্দ্রের এক সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় বাংলার ‘কন্যাশ্রী’দের প্রকৃত অবস্থা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল। একুশ বছর বয়স হওয়ার আগেই পশ্চিমবঙ্গের ৫৪.৯ শতাংশ মেয়েকে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যেতে হয়। বাংলার মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে ‘কন্যাশ্রী’, ‘রুপশ্রী’র মতো প্রকল্প চালু করলেও আসলে নাবালিকা বিবাহেই এগিয়ে রইল বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের পরই রয়েছে ঝাড়খণ্ড (৫৪.৬ শতাংশ)। আঠারো বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়েদের বিয়ের হার সবথেকে বেশি ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু কেন্দ্রের রিপোর্টই বলছে, কেরালায় একজন মেয়েরও ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয় না। দেশে ২১ বছর বয়স হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। মেয়েরা যে বোঝা নয়, এই সচেতনতাবোধ অনেকাংশেই নেই। তার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের চিত্র ভয়াবহ। এই দুই রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে একুশ পূর্ণ হওয়ার আগেই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০২০ সালে জনবিন্যাসগত একটি সমীক্ষা করে। তার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত মাসে। এদিন তা প্রকাশ্যে এসেছে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় গড় হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৯.৫ জনের বিয়ে হয় ২১ হওয়ার আগে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে তা প্রায় দ্বিগুণের কাছে। একদিকে যেমন ২১ বছরের হিসাব রয়েছে, তেমনই এই রিপোর্টে ১৮ বছর হওয়ার আগেই নাবালিকাদের বিয়ের উল্লেখও রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় গড় হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০০ জনে ১.৯ জনের বিয়ে হয়। ঝাড়খণ্ডে আঠারো হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে হয় সবথেকে বেশি। সে রাজ্যে প্রতি ১০০ জনে অন্ততপক্ষে ৫.৮ জন মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় আঠারোয় পা দেওয়ার আগেই।  
এর আগেও একাধিক রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের করুণ অবস্থা উঠে এসেছে। দেশের সর্বত্র নাবালিকা বিবাহ কম হলেও পশ্চিমবঙ্গ সব রেকর্ডই ছাপিয়ে গিয়েছে বরাবর। তিন বছর আগে ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স এমার্জেন্সি ফান্ড’ (ইউনিসেফ) প্রকাশ করেছিল ‘ফ্যাক্টশিট চাইল্ড ম্যারেজেস ২০১৯’। সেই রিপোর্টেও দেখা যায়, দেশে ৪৭ শতাংশ থেকে কমে বাল্য বিবাহ ২৭ শতাংশে নামলেও পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায় ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মতো দু’-একটি রাজ্যেই এই ভয়ানক প্রবণতা থেকে গিয়েছে। সেইসময় ৪০ শতাংশ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত ১৮ হওয়ার আগে। ওই বছরই ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’ রিপোর্ট জানায়, পশ্চিমবঙ্গে ৪১.৬ শতাংশ মেয়েদের ১৮ পেরনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। 
পশ্চিমবঙ্গের কোনও না কোনও প্রান্তে প্রতিদিনই ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, খুন সহ বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের উপর নানাবিধ অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে। দশমীর দিন থেকে নিখোঁজ থাকার পর এদিনই, জমজমাট কার্নিভালের দিন এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে হুগলীর জাঙ্গিপাড়ায়। উৎসব-অনুদান, চটকদারি, ‘সাজানো ঘটনা’, ‘ছোট্ট ঘটনা’— এসবের মাধ্যমে অপরাধ থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা চলে। আর এই হারে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হলেও স্থানীয় প্রশাসন তা রুখতে যে কোনও পদক্ষেপই নেয় না, তারও প্রমাণ দিয়েছে সমীক্ষা রিপোর্ট। 
এদিকে, ঝাড়খণ্ডে প্রায়শই ডাইন অপবাদ দিয়ে খুনের ঘটনা সামনে আসে। তার মধ্যেই আগস্টের শেষের দিকে এক নাবালিকাকে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারে এক ব্যক্তি। সেপ্টেম্বরে ১৪ বছরের এক আদিবাসী মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ধর্ষণ করে খুন করে আরেক যুবক। এই পরিস্থিতিতে নাবালিকা বিবাহের নিরিখে ঝাড়খণ্ডের পরিসংখ্যান উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment