HEATWAVE INDIA

জুনেই ভারতে তাপপ্রবাহের মুখে প্রায় ৬২ কোটি, বিশ্বে ৫০০ কোটি বিপন্ন

আন্তর্জাতিক

তীব্র তাপের জ্বালায় ভারতে বিপদের মধ্যে পড়েছেন অন্তত ৬১ কোটি ৯০ লক্ষ নাগরিক। বিশ্বে এমন বিপন্ন মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫০০ কোটি। 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গোষ্ঠী ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’ নতুন একটি রিপোর্টে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপজ্জনক এই অবস্থা দেখিয়েছে। এই হিসেব জুনের, যে মাসে আগে গরমের পর বৃষ্টির দেখা মিলত ভারতে।
ভারতে জুনও এখন চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহের সংখ্যা এবং তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে। এই প্রতিবেদন জানিয়েছে তাপপ্রবাহ ভারতে এবার অন্য সব বছরের তুলনায় বেশিদিন এবং বেশি তাপমাত্রার জন্য দায়ী থেকেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমীক্ষার হিসেব, অন্তত ৪০ হাজার নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন হিট স্ট্রোকে। অন্তত ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন অত্যধিক তাপের কারণে শারীরিক বিপর্যয়ের জন্য। এই হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি ঘটনাও থাকতে পারে, কারণ বহুক্ষেত্রেই অসুস্থতা নথিভুক্ত হচ্ছে না। আবার অসুস্থতার কারণ তাপপ্রবাহ কিনা, তা-ও চিহ্নিত হচ্ছে না।  
‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, চীনে ৫৭ কোটি ৯০ লক্ষ, ইন্দোনেশিয়ায় ২০কোটি ৬০ লক্ষ, ব্রাজিলে ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ, বাংলাদেশে ১৭ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিক চড়া রোদ আর তীব্র তাপের মুখে পড়েছেন বারবার। 
ইউরোপেও এখন দহনজ্বালা তীব্র বহু দেশে। পুরো ইউরোপে অন্তত ১৫ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে উষ্ণায়নের বিপদে সরাসরি আক্রান্ত হতে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ। 
শিল্পোন্নত ইউরোপ এবং আমেরিকাই বিশ্ব উষ্ণঅয়নের জন্য সবচেয়ে দায়ী। এই দেশগুলিতে সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ এশিয়া বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলির তুলনায় বেশি। অন্তত ছাদের তলায় বসে কাজ করতে পারে এই অংশ। ভারতের মতো দেশগুলিতে শ্রমজীবীর ৯০ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে। যার বেশিরভাগকেই কাজ করতে হয় জীবন বিপন্ন করে সরাসরি তীব্র দহনের মধ্যেও। বেলা এগারোটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত ঢাকা জায়গায় থাকার পরামর্শ জাতীয় স্তরের প্রশাসন দিয়ে থাকে। বাস্তবে জীবিকার জন্যই এই পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে হয় শ্রমজীবীর বিপুল অংশকে। 
রিপোর্ট বলছে, কেবল জুনের ১৬ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ তীব্র দহনের মুখে পড়েছে। ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’-র মুখ্য পরিকল্পনা আধিকারিক বলেছেন, ‘‘বিশ্বে চরম আবহাওয়ার মুখে থাকা জনসংখ্যা অন্তত তিনগুন হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য।’’   
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, এবারের এপ্রিল থেকে জুনে তাপপ্রবাহের দিন দ্বিগুন হয়েছে দেশের ৪০ শতাংশ অঞ্চলে। রাজস্থানের মতো বহু জায়গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থেকেছে। আরও বিপজ্জনক রাতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির নিচে নামেনি। ফলে শরীর ঠাণ্ডা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না টানা দিনের পর দিন। 
১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনই বেড়েছে ওই সময়ের তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মত, ২০৩০’র মধ্যে উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের বাতাসে মেশা ৪৩ শতাংশ কমানো দরকার। 
এদিন পরিবেশ বিষয়ক একটি আলোচনায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের দাবি, ভারত নিজেদের কার্বন নির্গমন রোধ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব লক্ষ্য ছুঁয়েছে। ভারতের লক্ষ্য ঠিক করা পদ্ধতি ঘিরে দেশের পরিবেশবিদদের বড় অংশের যদিও আপত্তি রয়েছে। 
তবে যাদব বলেছেন, ‘‘উষ্ণায়নের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলি। তাদেরই বিপকল্প শক্তি উৎপাদনের জন্য অর্থ দেওয়ার কথা। বাস্তবে তা মিলছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আজারবাইজানের বাকুতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ সম্মেলন সামনেই। সেখানে নতুন লক্ষ্য ঠিক করা এবং তহবিলে অর্থ জোগানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment