STORY | SOURISH MISHRA | CALENDER | NATUNPATA — 2025 JANUARY 12

গল্প | সৌরীশ মিশ্র | ক্যালেন্ডার | নতুনপাতা — ২০২৫ জানুয়ারি ১২

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  CALENDER  NATUNPATA  2025 JANUARY 12

গল্প | নতুনপাতা

ক্যালেন্ডার

সৌরীশ মিশ্র


এক

"ধর অনি ছবিটা। দ্যাখ, কি সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিয়েছে!" বলতে বলতেই খবরের কাগজে মোড়া, সুতলি দিয়ে বাঁধা, বাঁধানো ছবিখানা ছেলের হাতে দেন রজতাভবাবু।
বাবার হাত থেকে সাবধানে দু'হাতে নেয় ছবিটা অনি। তারপর সেন্টার টেবিলে রেখে সুতলির গিটটা খুলতে থাকে সে।


দুই

আজ থেকে ঠিক চারদিন আগের কথা। সকালবেলা। অনি স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল তখন। স্কুলে যে যে বই, খাতাগুলো লাগবে ওর, সে সবগুলো ব্যাগে ভরেছে নাকি, তাই চেক করছিল অনি। তখনই, ওদের বাড়ির বাইরে বাঁশির শব্দ শোনা গেল। অনি বুঝতে পারে, বাড়ি-বাড়ি থেকে নোংরা নিয়ে যান যে কাকু সে এসেছেন। ঠিক তখুনি, মা'র গলাও রান্নাঘর থেকে শুনতে পেল অনি। "মালা, গতবছরের পুরোনো ক'টা ক্যালেন্ডার বসার ঘরের টেবিলটার উপরে রাখা আছে, সেগুলোও নোংরার সাথে দিয়ে দাও তো।"
"ঠিক আছে বৌদি, দিয়ে দিচ্ছি।" মালামাসির কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
আর ঐ শুনেই অনি তার ব্যাগ গোছানো বন্ধ করে একঝলক কেন জানি তাকায় তার বাঁ-পাশের দেওয়ালের লম্বা তাকটার দিকে। তাকটায় কি যেন খুঁজছে তার অস্হির চোখ দুটো! তারপর দ্রুত পায়ে ওর পড়ার ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে আসে সে ওদের বাড়ির বসার ঘরে।
ঘরে ঢুকেই অনি দেখল, মালামাসি সেন্টার টেবিলটা থেকে সবগুলো ক্যালেন্ডার একসঙ্গে হাতে তোলার চেষ্টা করছে।
অনি মালামাসির পাশে এসে দাঁড়ায়।
"কিছু বলবে অনি?"
"আমাকে ঐ ক্যালেন্ডারটা দাও তো মালামাসি।"
"কোনটা?"
"ঐটা।" আঙুল তুলে একটা ক্যালেন্ডার দেখায় অনি।
"কেন কি করবে ওটা দিয়ে?"
"দাও না।"
"ঠিক আছে দিচ্ছি। তবে, মাকে একবার জিজ্ঞেস করে নাও তুমি। আমি দাঁড়াচ্ছি ততক্ষণ।" মালা ক্যালেন্ডারটা দেয় অনিকে।
অনি হাতে নিয়ে সেটা একছুটে এসে দাঁড়ায় রান্নাঘরের সামনে। ডাকে, "মা।"
"কি?" রান্না করতে করতেই ছেলের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান অনির মা। আর তাকাতেই ছেলের হাতে পুরোনো একটা ক্যালেন্ডার দেখতে পান। "কি রে, ওটা তোর হাতে কেন?"
"মা, এই ক্যালেন্ডারটা এখন ফেলো না।"
"কেন রে? কি করবি এই ক্যালেন্ডারটা দিয়ে?"
ক্যালেন্ডারটা রোল করা ছিল। অনি সেটা পুরো খুলে ওর মায়ের সামনে মেলে ধরল। স্বামী বিবেকানন্দের একটা মাঝারি সাইজের ছবি ঘিরে ২০২৪-এর সব মাসগুলো বক্স করে করে সুন্দর করে সাজানো ক্যালেন্ডারটায়।
"মা, স্বামীজীর এই ছবিটা আমি নিজের কাছে রাখতে চাই। আমি তো এটা আলাদা করে রেখেছিলাম পড়ার ঘরের দেওয়ালের তাকটায়। তুমি নিয়ে নিয়েছো। আমি ঠিক করেছিলাম, স্বামীজীর ছবিটা ক্যালেন্ডারটা থেকে কেটে নিয়ে, তারপর..." অনি থেমে যায় ঐটুকু বলেই।
অনির মা'র কাছে এইবার পরিস্কার হয় সবটা। তাছাড়া, তিনিও অতটা খেয়াল করেননি যে ঐ পুরোনো ক্যালেন্ডারগুলোর মধ্যে একটায় স্বামী বিবেকানন্দের ছবি ছিল। একটা বড় ভুলই হয়ে যাচ্ছিল তার, কথাটা মনে মনে নিজেকেই বলেন অনির মা। তিনি এবার ছেলেকে বললেন, "ঠিক আছে, রাখ ক্যালেন্ডারটা। তবে তুই কাটাকাটি করিস না। ক্যালেন্ডারটা রেখে দে তোর পড়ার ঘরে যেখানে রেখেছিলিস আগে সেখানেই এখন। আমি তোর বাবাকে বলবো ছবিটা তোকে বাঁধিয়ে দিতে। সেটাই ভাল হবে।"
মা'র কথাগুলো শুনে অনির মুখটা ঝলমলিয়ে উঠেছিল সেদিন আনন্দে।

Comments :0

Login to leave a comment