Adani Power

বাংলাদেশে বন্ধের মুখে আদানির বিদ্যুৎ, দায় ঝাড়ল কেন্দ্র

জাতীয় আন্তর্জাতিক

বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছিল আগেই। ৭ নভেম্বরের মধ্যে যদি বকেয়া না মেটালে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে আদানি পাওয়ার। 
এ বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যকার ইস্যুতে ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। এটি একটি বেসরকারি সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার চুক্তি। বিষয়টি দুইপক্ষের চুক্তির শর্তের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এই চুক্তিতে ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। সুতরাং, এ বিষয়ে জানানোর জন্য এখন আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
জয়সোয়ালের বক্তব্য ঘিরে প্রশ্ন একাধিক। কারণ বারবারই দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরে লাভবান হয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীতে বড় বিনিয়োগ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত একাধিক আর্থিক সংস্থারও। বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর চুক্তিও হয় মোদীর সফরের পর। তার জন্য বিধিও বদলায় মোদী সরকার। 
আদানি পাওয়ার বলেছে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করা না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশকে এ বিষয়টি জানিয়েছে আদানি পাওয়ার। এর আগে বকেয়া পরিশোধে দেরির কারণে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড গত ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়। বড় কল কারখানাগুলিতে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেয়। উৎপাদন কমে গেছে। ডলার সঙ্কটের কারণে সময়মতো অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে আদানিকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মাস গুলোতে যেখানে প্রতিমাসে বিল বাবদ ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে সেখানে মাত্র ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হয়েছে। আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১০ থেকে ১২ টাকায়। ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার দামও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ থেকে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের প্রায় ৮৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে। 
১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ এবং আদানি পাওয়ারের চুক্তি হয় ২০১৫’র সেপ্টেম্বরেই। যদিও তখনই প্রচলিত নিয়মবিধি অনুযায়ী কয়লা ভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারত না। সেই বিধিও ২০১৬’র ডিসেম্বরে বদল হয় আদানিদের জন্য। 
আদানিদের জন্য সব নিয়মই উলটে দেওয়া হয়েছে। এবং তা করা হয়েছে ঝড়ের গতিতে। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রধানত রপ্তানি হয় বাংলাদেশে। ২০১৬’র নির্দেশিকা সংশোধন করা হয়েছে ২০১৮’র ২৮ডিসেম্বর। সংশোধনীর প্রস্তাব সেই বছরের ৯ জানুয়ারি এসইজেড’র অনুমোদন বোর্ডে পেশ হয়েই অনুমোদিত হয়ে যায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বোর্ড এসইজেড গঠনের অনুমতি দিয়ে দেয়। অথচ এই বোর্ডই ২০১৮’র ফেব্রুয়ারিতে এই প্রকল্পকে এসইজেড মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেছিল। তখন বলা হয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রকের বিধির সঙ্গে এই প্রস্তাব সঙ্গতিপূর্ণ না। তারপর দ্রুত নিয়ম বদলে দেওয়ায় এবারে বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত পেতে কোনও সময় লাগেনি। 
প্রসঙ্গত, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় ১৭২ একর জমিতে আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠেছে  ১৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগে। কৃষকদের বিনা ক্ষতিপূরণে উচ্ছেদ করেই জমি আদানির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই বিনিয়োগের ৭২ শতাংশ অর্থই ছিল স্বল্প সুদে ভারত সরকারের ঋণ। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন এবং রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন থেকে এই ঋণ দেওয়া হয় আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পকে। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এবং বিদ্যুৎ রপ্তানিতে যাবতীয় করও মকুব করা হয়। দেখা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সরকারি সংস্থার মতো সবটাই কার্যত সরকারের খরচে হয়েছে এবং তার করও মকুব হয়েছে। কিন্তু তার মালিকানা হলো আদানির। এখন পর্যন্ত দেশে আর কোনও সংস্থাকে তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা দেওয়া না হলেও আদানির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে নিয়ম ভেঙে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। এতেও বিপুল কর ছাড় মিলেছে মোদীর বন্ধু আদানির।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্থানীয়দের বাধা সত্ত্বেও জমি নেওয়া হয়েছে। গঙ্গা থেকে জল নেবার জন্য পাইপলাইন বসানোর অনুমতি মিলেছে। ২০১৯ সালের বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পাইপলাইন এবং অন্যান্য পরিবেশ সম্পর্কিত ছাড়পত্র স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মাত্র দু’দিন পরেই এই প্রকল্প এসইজেড ঘোষিত হয়। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধেও ছাড়া পায় আদানিরা। বাংলাদেশের পিজিসিবি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত ১৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। অর্থ বকেয়া পড়ায়া তাগাদা দিয়ে আসছিল, এবার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিই দিল আদানি। এই হুমকি কার্যকর হলে বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেড় হাজার মেগাওয়াট কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment