অনাদি সাউ
ওরা ভেবেছিল কালো মানুষগুলোর জানটুকু রেখে বাকি সবটা নিংড়ে নেবে,
ওরা ভেবেছিল সারা দেশটাকে ওরা লুটেপুটে খাবে,
ওরা ভেবেছিল সারা দুনিয়াকে নিজেদের পকেটে পুরে নেবে।
আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা সহ পুঁজিবাদী দুনিয়ার সেই সব মানুষগুলোর কথা বলছি, যারা কেড়ে খায় কোটি কোটি মানুষের মুখের গ্রাস। মালিক শ্রেণি, পুঁজিপতির দল, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের কথা বলছি। ওদের বর্বর আক্রমণ ও আগ্রাসনে প্যালেস্তাইনের মাটি আজ রক্তাক্ত, চলছে নির্বিচারে গণহত্যা। আকাশে বাতাসে বারুদের গন্ধ। টন টন বোমার বিস্ফোরণে আগুনের ঝলকানিতে ঝলসে যাচ্ছে শিশু, মহিলা সহ প্যালেস্তাইনের নিরীহ মানুষ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতে ইজরায়েল সমগ্র প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডকে কবজা করতে অগ্রসর হচ্ছে। ইউরোপে মার্কিন মদতে ন্যাটো বাহিনীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুনিয়া জুড়ে সাম্রাজ্যবাদীরা আধিপত্য বিস্তারের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে সমাজতান্ত্রিক চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, লাওস যারা মানব জাতির অগ্রগতির জন্য, শান্তির জন্য কাজ করে চলেছে। পুঁজিবাদের সঙ্কটের মধ্যেও এরা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন, গণহত্যা ও উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণি, ছাত্র, যুব, মহিলা ও সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে। একদিন এরা পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করবেই।
১৭৬০-১৮৪০ অষ্টাদশ শতাব্দী ও তার পরবর্তী সময়ের কথা, আমেরিকা ইউরোপ জুড়ে কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবিতে শ্রমিকরা সংগঠিত হচ্ছিল। ঐ সময় শিল্প কলকারখানায় শ্রমিকদের ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। আমেরিকার সরকারি দপ্তরে কর্মচারীরা ১০ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করলে সরকার তা মেনে নেয়। এতে উৎসাহিত হয়ে আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণি কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবিতে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়। শিকাগো শহরে ১ মে থেকে চার লক্ষেরও বেশি শ্রমিক লাগাতার ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল। শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমর্থনে বিরাট সমাবেশ সংগঠিত হয়েছিল। ৩ মে মালিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারের সাথে যোগসাজশে ভাড়াটে গুন্ডা ও পুলিশ বাহিনী নিয়ে আন্দোলন ভাঙতে শ্রমিক সমাবেশের ওপর আক্রমণ চালায়, ২০০-র বেশি শ্রমিক আহত এবং ৬ জন শ্রমিক নিহত হন। এর প্রতিবাদে ৪ মে শ্রমিকরা হে মার্কেট স্কোয়ারে পালটা সমাবেশ করলে পুলিশ আবার আক্রমণ করে এবং গুলি চালায়। শ্রমিকরা প্রতিরোধ করে। ঐ দিন ৪ জন শ্রমিক প্রাণ হারায় ও অসংখ্য শ্রমিক আহত হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা সাজানো মামলায় ৪ জন শ্রমিক নেতাকে অভিযুক্ত করে পুলিশ। আদালত আগস্ট স্পাইস, এলবার্ট পার্সনস, এডলফ ফিসার এবং জর্জ এঙ্গেলসকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ও ফাঁসি হয়। ওরা শহীদের মৃত্যু বরণ করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আমেরিকার মালিক শ্রেণির বিরুদ্ধে সারা দেশে শ্রমিক আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছিল এবং সারা ইউরোপ ও পুঁজিবাদী দুনিয়ায় তার প্রভাব পড়েছিল। এর তিন বছর পর ১৮৮৯ সালে এঙ্গেলসের নেতৃত্বে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গঠিত হলে এবং তার প্রথম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা বিশ্বে ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে এবং হে মার্কেটের শহীদদের স্মরণে মে দিবস পালন শুরু হয়। লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লব এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ও লাল ফৌজের বিজয়ের পর সারা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিনোদন এবং ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের দাবি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত অর্জন করে।
১৯২০ সালে পরাধীন ভারতবর্ষে সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি গড়ে ওঠে। কাজের ঘণ্টা হ্রাস, বাঁচার জন্য মজুরি, কাজের নিরাপত্তা ও অন্যান্য দাবিতে ভারতবর্ষে সুতাকল, চটকল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআইটিইউসি’র নেতৃত্বে শ্রমিকরা সংগঠিত হয়েছিল। ১৯২৩ সালের ১ মে শ্রমিকরা মাদ্রাজের সমুদ্রতটে শ্রমিক নেতা সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ার নেতৃত্বে ভারতে প্রথম মে দিবসের পতাকা তুলেছিল ও ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি উত্থাপন করেছিল। ১৯২৬ সালে প্রথম শ্রম আইন তৈরি হয় এবং শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। ঐতিহাসিক মে দিবসের ১৩৮ বছর পর আজ আবার শ্রমিক শ্রেণিকে ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার রক্ষার জন্য সারা পুঁজিবাদী দুনিয়ায় লড়াই করতে হচ্ছে।
পুঁজিবাদের সঙ্কট আজও অব্যাহত, আর উদার অর্থনীতির নামে পুঁজিপতি শ্রেণি সঙ্কটের সমস্ত বোঝা শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের ঘাড়ে চাপাতে শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম সম্পর্কের পুনর্গঠন করে, কাজের ঘণ্টা বৃদ্ধি করে, মালিক শ্রেণির মুনাফার স্বার্থে নতুন নতুন কায়দায় শোষণ ও আক্রমণ চালাচ্ছে। পুঁজিবাদ তার সৃষ্ট সঙ্কটের থেকে বেরিয়ে আসতে না পেরে ক্রমাগতই শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের উপর কাজের বোঝা বৃদ্ধি করে চলেছে। এর বিরুদ্ধে দুনিয়াজুড়ে শ্রমিক শ্রেণি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলছে। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির লড়াই আরও তীব্র হচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, এশিয়া, আফ্রিকা, ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণি বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের পতাকা তলে শামিল হচ্ছে। বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের রোম সম্মেলন (২০২২) পুঁজিবাদের কর্দমাক্ত পথ থেকে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সকাল ছিনিয়ে আনার জন্যে শ্রমিক শ্রেণিকে আহ্বান জানিয়েছে। বলা হয়েছে পুঁজিবাদ কখনোই শ্রমিক শ্রেণির ভবিষ্যৎ হতে পারে না। বিশ্বব্যাপী কাজের বোঝা হ্রাস করতে সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করার দাবি উত্থাপন করতে হবে, সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বছর আমাদের দেশে মে দিবসের প্রাক্কালে অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচন চলছে। আমাদের দেশে গত ১০ বছর ভয়ঙ্কর আক্রমণের মধ্যে দেশের শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণ। বিজেপি’র শাসনে দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র, শ্রমিক শ্রেণির অর্জিত অধিকারই শুধু আক্রান্ত নয়, দেশের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নীতি, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মর্যাদা ও গুরুত্ব সবই ধ্বংস করা হচ্ছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী পথে দেশ অগ্রসর হচ্ছে। আরএসএস পরিচালিত বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে কেন্দ্রের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েই দেশি-বিদেশি বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজিপতিদের লুণ্ঠনের স্বার্থে হিংস্র আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের প্রতি দায়দায়িত্ব এই সরকার অস্বীকার করছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের নীতির কারণে দেশে বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, দারিদ্র বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষের মাথা পিছু আয় কমেছে। সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর করের বোঝা বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং পুঁজিপতিদের কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। মোদী ঘনিষ্ঠ ঋণ খেলাপি দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিপতিদের ১৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ মকুব করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ দানের নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পুঁজিপতিদের উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের অন্নদাতা কৃষকরা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে যখন আত্মহত্যা করছে তাদের দেখার কেউই নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সেচ সহ সামাজিক সমস্ত খাতে কেন্দ্রীয় বাজেটে ক্রমশই অর্থ বরাদ হ্রাস করা হয়েছে।
দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতির মেরুদণ্ড রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ সহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণ করা চলছে। ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপ লাইনের নামে দেশ বিক্রি চলছে। পুঁজিপতিদের অবাধ লুটের ব্যবস্থা করতে ২৯টি শ্রম আইন সংশোধন করে ৪টি শ্রম কোড তৈরি করা হয়েছে, লক্ষ্য শিল্প কল-কারখানায় মধ্যযুগীয় বর্বর শোষণ ব্যবস্থা কায়েম করা। নরেন্দ্র মোদী সরকারকে পরাজিত করা না গেলে লোকসভা নির্বাচনের পরই দেশে শ্রম কোড লাগু হবে। শ্রমিক শ্রেণি ও মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদকে বিভক্ত করতে জাতপাত ধর্মকে আরএসএস-বিজেপি ব্যবহার করছে। দেশের সংখ্যালঘু দলিত আদিবাসী মহিলারা আক্রান্ত। দেশজুড়ে মেরুকরণের রাজনীতি চলছে।
গত ১০ বছর ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি ও পরবর্তী সময়ে দেশের কৃষক এবং খেতমজুর সংগঠনগুলির যুক্ত মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপি সরকারের দেশ বিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি সমূহের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট, পার্লামেন্ট অভিযান, দিল্লিতে শ্রমিক কৃষক সমাবেশ, দেশজুড়ে ৯ আগস্ট ২০২৩ ভারত ছাড় দিবসে শ্রমিকদের অবস্থান, ২৬-২৮ নভেম্বর, ২৩ দেশব্যাপী শ্রমিক কৃষকদের রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ, অবস্থান সংগঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন ও কৃষক সংগঠনগুলি দেশজুড়ে আইন অমান্য, জেল ভরো এবং গ্রামীণ ভারত বন্ধ কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশি-বিদেশি একচেটিয়া ও বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থে তার নীতির পরিবর্তন করতে সম্মত নয়।
এই পরিস্থিতিতে দেশের শ্রমিক কৃষক সংগঠনগুলি দেশ রক্ষার স্বার্থে, দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শ্রমিক-কৃষকের অর্জিত অধিকার রক্ষা করতে কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অপসারিত করার জন্যে দেশের শ্রমিক কৃষক সহ সাধারণ মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
সারা দেশের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী, ফ্যাসিস্ত বিজেপি ও আরএসএস’কে পরাজিত করা এবং এই রাজ্যের ক্ষেত্রে স্বৈরতান্ত্রিক, দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করা দরকার। এই লক্ষ্যে রাজ্যের শ্রমিক শ্রেণির প্রধান কাজ হলো বামপন্থী ও বাম সহযোগী প্রার্থীদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা এবং তাদের বিপুলভাবে জয়যুক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক মে দিবস ২০২৪ এ রাজ্য ও দেশের শ্রমিক শ্রেণির নিকট এটাই হোক মে দিবসের আহ্বান।
আন্তর্জাতিক মে দিবস জিন্দাবাদ
পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক
Comments :0