‘চোর’ অপবাদে কলকাতা কর্পোরেশনের চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী ক্যাজুয়াল কর্মীকে মারধোরের অভিযোগ উঠল প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে কর্পোরেশনের শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে।
শ্রমিক কর্মচারীরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা কর্পোরেশনের ৩ নম্বর বরো’র একটি সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর, তথা ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরের স্বামী পবিত্র বিশ্বাস। তিনি এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত। সেই অনুষ্ঠান চালাকালীন তিনি ওই ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক শুভেন্দু গুছাইতকে ‘চোর’ অপবাদ দেন। তাঁকে মারধোর, জামার কলার ধরে টানাহেঁচড়া এবং গালিগালাজও করেন পবিত্র বিশ্বাস।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসার পদমর্যাদার এক মহিলা চিকিৎসক। তাঁকেও হেনস্থা করেন পবিত্র বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক মহিলা ফার্মাসিস্টও তাঁর হাতে হেনস্থা হন বলে অভিযোগ। তাঁদের শারিরীক ও মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হয়। গালিগালাজ করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে পবিত্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারীদেরও হুমকি দেন পবিত্র বিশ্বাস। তাঁদের চাকরি ‘খেয়ে’ নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এই ঘটনা সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের অভ্যন্তরে। বিভাগের শ্রমিক, কর্মচারী এবং আধিকারিকদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের কর্মী এবং ভেক্টর কন্ট্রোলের কর্মীদের সামনে এই তান্ডব চালানোয় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু গুছাইত সিআইটিইউ অনুমোদিত কলকাতা কন্ট্রাক্টর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের একজন নেতৃত্ব। তাঁকে হেনস্থার প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্যকে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় ইউনিয়নের তরফে।
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খোকন মজুমদার চিঠিতে জানিয়েছেন, শুভেন্দু গুছাইত দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত স্বল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখার কাজ করে চলেছেন। দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মী হিসেবেই বরো’র আধিকারিক এবং অন্যান্য শ্রমিক কর্মচারীদের কাছে পরিচিত তিনি। ডিউটি চলাকালীন তাঁর উপর হওয়া এই হেনস্থার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। এই ঘটনার ফলে শ্রমিকরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সেই আতঙ্ক কাটিয়ে যাতে তাঁরা নির্ভয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেই জন্য মেয়র পারিষদ সদস্যের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
এর পাশাপাশি ইউনিয়নের তরফে এই ঘটনার তদন্ত, এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিরও দাবি জানানো হয়েছে।
Comments :0