Jadavpur University

হস্টেলের আবাসিক না হয়েও দাপট ধৃত জয়দীপের

রাজ্য

Jadavpur University


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে আরও এক প্রাক্তন ছাত্র, জয়দীপ ঘোষ। ঘটনার রাতে হস্টেলের মেইন গেট বন্ধ করে দিয়ে পুলিশকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ক্রমেই মিলছে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরও বহিরাগত প্রাক্তনীদের খোঁজ। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত ধৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩। কিন্তু যার খোঁজে পুলিশ নাকি হন্যে হয়ে ঘুরছে সেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অরিত্র মজুমদার ওরফে ‘আলু’ এখন কোথায়— এই প্রশ্নে কোনও মীমাংসা হয়নি। সোশাল  মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি চ্যাটে তার নাম উঠে এসেছে বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং হস্টেলের সবেতেই তিনি থাকেন, তাহলে হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন কোন রহস্যজনক কারণে, তাঁকে কোনোভাবে আড়াল করার চেষ্টা চলছে কিনা— স্পষ্ট হচ্ছে না সে উত্তরও। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অথবা হস্টেল— যাই হোক না কেন অত্যন্ত প্রভাবশালী এই অরিত্র মজুমদারকে এসে কর্তৃত্ব করতে দেখা যায় সব সময়। কিন্তু বাংলা প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার দিন থেকে তার আর কোনও খোঁজ মিলছে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তিনি কোথায় গেলেন। একটি সূত্র বলছে, কাশ্মীরে বেড়াতে চলে গেছেন তিনি। কিন্তু যে দিন ওই ঘটনা ঘটে সেদিন ওই সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন এই নিয়ে বাড়ছে রহস্য। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তার কোনও ভূমিকা ছিল কিনা তার নিয়ে সন্দিহান পুলিশও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘটনার পর পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার মূল পর্বে যুক্ত ছিলেন তিনিও। তার উধাও হওয়ার ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়ে উঠছে। এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। কিন্তু কাউকে আড়াল করা হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে নিহত ছাত্রের পরিবার, গোটা রাজ্যবাসী। 

সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী এদিন বলেন, শুধু যাদবপুর নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, হস্টেলে প্রভাবশালী প্রাক্তনী বা বহিরাগতদের দাপট চলছে। তারাই চালাচ্ছে সবকিছু। রবীন্দ্রভারতী থেকে মেডিক্যাল কলেজ ইউনিয়ন রুম দখল করে থাকে এই প্রাক্তনী বা বহিরাগতরাই। তারাই গোটা চত্বর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যে ছাত্রটি শেষে গ্রেপ্তার হয়েছে, জয়দীপ ঘোষ, তিনি নাকি খুব প্রভাবশালী, হস্টেলে চলে এসেছিলেন সেদিন। তার নির্দেশেই নাকি হস্টেলের গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল, পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তদন্ত করে, জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, এই খুনের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হস্টেলে বহিরাগতদের দাপট বন্ধ করতে হবে। র্যা গিং মুক্ত করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।               
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং হস্টেল চালানোর ভার একরকম নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছেন প্রাক্তনীরা। এই সব প্রভাবশালীদের কথাই চূড়ান্ত। কোনও এক অজ্ঞাত রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনও চুপ থাকে। নিত্যদিন হস্টেলে হেনস্তার ঘটনা ঘটলেও তা ধামাচাপা দিয়ে দেয় সেই প্রভাবশালী প্রাক্তনী বা বহিরাগতরাই। গত ৯ আগস্ট ঘটনার দিন পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জয়দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানে কেতুগ্রামে তার বাড়ি। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোন তিনি। অর্থাৎ তিনি পড়ুয়া নন, প্রাক্তনী। কাছাকাছি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকলেও হস্টেলে তার অবাধ যাতায়াত ছিল। সেখানে থাকতেও দেখা যেত তাকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মেন গেট আটকে রাখেন সেই রাতে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে আরও বেশ কিছু তথ্য তার বিরুদ্ধে পেয়েছে পুলিশ। তার ভিত্তিতে পুলিশ শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।      


এদিকে যাদবপুরে হস্টেলের মাথাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ধৃতরা বারে বারেই তাদের বয়ান পালটাচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য, বয়ানে নানা অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে বলে সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য। প্রশ্ন উঠেছে প্রাক্তনী বহিরাগতরা হস্টেলের গেট বন্ধ করে রাখল আর পুলিশ ফিরে গেল— এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে। তাহলে কোনও প্রভাবশালীর কথাতেই কি পুলিশ সেই রাতে হস্টেলের গেট থেকে ফিরে গিয়েছিল? শুধু তাই নয়, নেশার বস্তু এবং অনলাইনের খাবারের দাম মেটানের জন্য জুনিয়র আবাসিকদের কাছ থেকে সিনিয়ররা রীতিমতো টাকা পয়সা তুলতো বলেও অভিযোগ তীব্র হচ্ছে। প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সৌরভ চৌধুরির নেতৃত্বেই নাকি চলতো এই কার্যকলাপ। শেষে ফূর্তির টাকা জোগাড় করতে করতে এই তোলাবাজিকেই উপার্জনের পথ করে ফেলেছিল বেশ কয়েকজন সিনিয়র, প্রাক্তনী বা বহিরাগত— এমনই বক্তব্য হস্টেলের বহু ছাত্রের। 

Comments :0

Login to leave a comment